রাজা-মাধেভেরেদের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের পাঠদানে নুরুলের বাংলাদেশের শুরু পরাজয়ে
১ম টি-টোয়েন্টি, হারারে (টস-জিম্বাবুয়ে, ব্যাটিং)
জিম্বাবুয়ে- ২০৫/৩, ২০ ওভার (মাধেভেরে ৬৭, রাজা ৬৫*, উইলিয়ামস ৩৩, মোস্তাফিজ ২/৫০, মোসাদ্দেক ১/২১)
বাংলাদেশ- ১৮৮/৬, ২০ ওভার (নুরুল ৪২*, শান্ত ৩৭, লিটন ৩২, জংওয়ে ২/৩৪, ওয়েলিংটন ১/২৩, রাজা ১/৩০)
জিম্বাবুয়ে ১৭ রানে জয়ী
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের জরাজীর্ণ দশা আরও একবার উন্মোচিত হল; নতুন মোড়কেও দেখা মিলল সেই পুরনো বেগতিক, বেমানান টি-টোয়েন্টির প্রদর্শনী। কয়েক মাস আগেই নামিবিয়া, আফগানিস্তানের কাছে কুপোকাত হওয়া জিম্বাবুয়ে তো উল্লাসে মাতোয়ারা হল বাংলাদেশকে হারিয়ে। আর নুরুল হাসান সোহানের বাংলাদেশকে হয়ত খুঁজতে হচ্ছে মুখ লুকানোর জায়গা। ক্রেইগ আরভিনের জিম্বাবুয়ের কাছে ১৭ রানের এই জয় যে বিশেষ কিছুই।
এই নুরুলের সামনেই সুযোগ ছিল বিশেষ কিছু করে দলকে বাঁচানোর। নুরুলের ব্যাটিং নিয়ে ছিল যথেষ্ট প্রশ্ন। তাকে অধিনায়ক করায় আঙুল তোলা হয়েছিল টি-টোয়েন্টিতে তার ১২ ব্যাতিং গড়ের দিকেই। সমালোচকদের মুখে কুলুপ এঁটে দেওয়ার সুযোগ তাই ছিল নুরুলের সামনে; ১২.৩ ওভারে আফিফ মাত্র ১০ রানে ফেরার পর যখন তিনি উইকেটে এলেন। সাথে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত তখন উইকেটে থিতু। ১৫তম ওভারে তো দারুণ বল করতে থাকা ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে দুই ছয় মেরে ১৬ রান নিয়ে নুরুল ইঙ্গিত দিলেন বিশেষ কিছু করে দেখানোর। তার পরের ওভারেই অবশ্য লুক জংওয়ের দুর্দান্ত বোলিংয়ে কোণঠাসা হয়ে শেষ বলে বাউন্সারে কাবু হয়ে শান্ত ফিরলেন ৩৭ রানে।
নুরুলের সঙ্গও ওখানেই যেন শেষ হয়ে গেল। উইকেটে এসে মোসাদ্দেক হোসেন তো যোগ্য সঙ্গী হতে পারেনি নাই, উল্টো প্রশ্নবোধক সব শটের চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন বারবার। শেষ দুই ওভারে ৩২ রান প্রয়োজন হলে মোসাদ্দেকও ১৩ রানে ফেরায় নুরুলকে স্ট্রাইক ধরে রাখার চেষ্টা করতে হয়েছে। আর রিচার্ড গারাভা, তানাকা চিভাঙ্গাদের দুর্দান্ত ডেথ বোলিংয়ে নুরুলকে তাই সন্তুষ্ট হয়ে থাকতে হয়েছে ২৬ বলে ৪২* রানে অপরাজিত থেকেই।
এর আগে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর শুরু থেকেই চড়াও হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই খেলেছিলেন জিম্বাবুয়ে ব্যাটাররা। মোস্তাফিজ শুরুতেই রেজিস চাকাবভাকে ফেরালেও পাওয়ারপ্লেতে ৪৩ রান তোলা জিম্বাবুয়েকে আক্রমণের পথটা এরপর দেখান শন উইলিয়ামস। নাসুমের এক ওভারে দুই চার ও এক ছয়ে ১৬ রান নেওয়ার পর লাগামছাড়া হওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকা উইলিয়ামসকে ফেরান আক্রমণে ফেরা মোস্তাফিজ। ততক্ষণে উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া ওয়েসলি মাধেভেরে তখন বুঝে নেন আক্রমণের ঝান্ডা; সাথে উইকেটে এসেই সিকান্দার রাজাও শুরু করেন নিজের দাপুটে ইনিংস। ৩৭ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করা মাধেভেরে এরপর শুধুই দর্শক। মোস্তাফিজুর-শরিফুল কাউকেই ছেড়ে কথা বলেননি অন্য প্রান্তে থাকা রাজা। শরিফুলের ১৯তম ওভারে তো দুই ছয় আর এক চারে নিলেন ১৯ রান। ২৩ বলে দুই রান নিয়ে রাজা যখন ফিফটি পূর্ণ করলেন, ওই জোড়া রান পূর্ণ করতে গিয়েই অবশ্য ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ৪৬ বলে ৬৭ রানে থাকা মাধেভেরেকে। পরের তিন বলে ২ চার ও ১ ছয়ে রাজা এরপর দলকে নিয়ে যান ২০৫ রানে, নিজে অপরাজিত থাকেন ২৬ বলে ৬৫* রানে।
সেই লক্ষ্যে মুনিম শাহরিয়ারকে শুরুতেই হারানোর পর লিটন দাস এনে দিয়েছিলেন দারুণ শুরু। পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৬০ রানের সংগ্রহ। অবশ্য লিটন অদ্ভুতুড়ে এক রান আউটের শিকার হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের ভাগ্য যে সুপ্রসন্ন নয় তা বুঝতে আর বাকি ছিল না। ৬ষ্ঠ বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০০ রান পূর্ণ করা লিটন ১৯ বলে ৩২ রানে থাকার সময় র্যাম্প শট খেলতে গিয়ে ফিল্ডারের হাতে বল তুলে দিয়ে আগেই উদযাপন করতে গিয়ে বল ফেলে দেন তিনি; তবে লিটনকে ক্রিজের বাইরে দেখে রান আউটের সুযোগ লুফে নেন তিনি। সেখান থেকে বিজয় খেলতে পারেননি কোনও সুযোগ্য ইনিংস, নুরুলকেও সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। বাংলাদেশকে তাই বরণ করতে হয়েছে লজ্জাজনক এক পরাজয়।