• অন্যান্য
  • " />

     

    দলবদলের ৬ ছিনতাই

    দলবদলের ৬ ছিনতাই    

    দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল গ্রীষ্মকালীন দলবদলের আরেকটি মৌসুম। তারকা থেকে শুরু করে মাঝ সারির ফুটবলার; বদলে গেছে অনেকের গায়ের জার্সিই। বায়ার্ন মিউনিখের প্রতিশব্দ হয়ে ওঠা লেভানডফস্কি এসেছেন বার্সেলোনায়। চেলসিতে যাই যাই করেও শেষ মুহুর্তে বার্সার জার্সিই বেছে নিয়েছেন জুলস কুন্ডে। পাওলো দিবালা জুভেন্টাস ছেড়ে গেছেন রোমাতে। যদিও এসব প্রতি মৌসুমেরই চিত্র। তবে এর বাইরেও দলবদলের এমন কিছু ঘটনা আছে, সেসবকে দলবদলের মোড়কে হাইজ্যাক বা ছিনতাই ই বলা ভালো। 

    বার্সার নতুন সাইনিং রাফিনহা আর কুন্ডের দলবদলের কথাই বলা যায়। চেলসি পাখির চোখ করেছিল দুজনকেই। কুন্ডের সাথে যোগাযোগও ছিল দীর্ঘদিন থেকে। কিন্তু মাঝে বার্সেলোনার বোর্ড বাগিয়ে নিয়ে গেল দুজনকেই। কী বলবেন একে? মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়া?

     

    সময়টা ১৯৫৩ সাল। ট্রান্সফার উইন্ডো শব্দটার জন্মও হয়নি তখন ফুটবল বিশ্বে। কিন্তু তাই বলে কি ফুটবলারদের নিয়ে দড়ি টানাটানি বন্ধ থাকবে? সেবার আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর ওপর চোখ ছিল রিয়াল-বার্সা দুই ক্লাবেরই। স্টেফানো তখন খেলতেন মিলোনারিয়োস ক্লাবে।তবে তাকে দলে ভিড়িয়েছিল বার্সেলোনাই। প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতিও সেরেছিলেন কাতালানদের হয়ে । কিন্তু বাগড়া দেয় স্প্যানিশ ফুটবল কর্তৃপক্ষ। নিবন্ধন আটকে যায় স্টেফানোর। মোক্ষম সুযোগটা কাজে লাগায় রিয়াল মাদ্রিদ, চুক্তি সেরে ফেলে স্টেফানোর ক্লাব মিলোনারিয়াসের সাথে। কথিত আছে স্টেফানোর দলবদলে প্রভাব ছিল স্বৈরশাসক ফ্রান্সিস্কো ফ্রাংকোরও। 

    এদিকে স্প্যানিশ ফুটবলও জুড়ে দেয় এক অদ্ভুত শর্ত। পালা করে দুই ক্লাব খেলবেন স্টেফানো। অর্থাৎ,  প্রথম দুই মৌসুমে রিয়ালে, পরের দুই মৌসুম বার্সেলোনায়। স্টেফানো হাতছাড়া হওয়ায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন বার্সার তৎকালীন সভাপতি। এরপর? লোকমুখে বহুল প্রচলিত কথাটাই আসবে, দ্য রেস্ট ইজ হিস্টোরি!\

     

    ১৯৯৩ সালে রেলিগেশনে পড়েছিল নটিংহাম ফরেস্ট। রয় কিন সেবার নটিংহাম ছাড়ার ঘোষণা দিলে আগ্রহী হয়ে ওঠে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। রোভার্সের কোচ কেনি ডালগ্লিশও সব গুছিয়ে রেখেছিলেন, কথাবার্তাও পাকা ছিল। বাকি ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতা কিন্তু রোভার্সের অফিস বন্ধ থাকায় পিছিয়ে যায় কিনের দলবদল। ওদিকে কিনের জন্য ওৎ পেতে ছিলেন স্বয়ং স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন রোভার্সের দেরি দেখে নিজেই কিনের সাথে কথা বলে তাকে ইউনাইটেডে ভেড়ান স্যার ফার্গুসন। 

    ব্রাজিলিয়ান উইংগার উইলিয়ান তখন খেলতেন শাখতার দোনেৎস্কে। নামডাক সেখান থেকে ছড়ানোর পর পাড়ি জমান এক রাশিয়ান ক্লাবে। ২০১৩ সালে তাকে পাওয়ার দৌড়ে নেমেছিল টটেনহাম হটস্পার ও লিভারপুল। এরপর স্পার্সের হয়ে মেডিকেলও সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে উইলিয়ান যোগ দেন চেলসিতে! চমক দেখিয়েছিলেন চেলসির তৎকালীন মালিক রোমান আব্রামোভিচ। এক ফোন কলেই এই রাশিয়ান বিলিওনিয়ার হাইজ্যাক করে এনেছিলেন উইলিয়ানকে। কারণ উইলিয়ানের রাশিয়ান ক্লাব আনঝি এফসির মালিক কেরিমভ ছিলেন আব্রামোভিচের বন্ধু। বন্ধুর অনুরোধ আর কে ফেলে? 

     

    পল গ্যাসকোয়েন, ১৯৯০ বিশ্বকাপে চমক দেখানো ফুটবলার। সেই বিশ্বকাপের দুই বছর  আগে স্যার ফার্গুসন তাকে ফোন করেছিলেন প্রস্তাব দিতে। প্রস্তাব শুনে ফার্গুসনকে কথাও দিয়েছিলেন তিনি। খুশি মনেই ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন কিংবদন্তি এই কোচ। কিন্তু ছুটির মাঝেই খবর পান গ্যাসকোয়েন স্পার্সের সাথে চুক্তি সেরেছেন। টটেনহাম সেবার ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছিল গ্যাসকোয়েনকে দামি একটা বাড়ি কিনে দিয়ে। 

     

    ট্রান্সফার হাইজ্যাকের অন্যতম সেরা ঘটনায় জুড়ে আছে চেলসি আর ম্যান ইউনাইটেড নাম। ২০০৫ সালে জন ওবি মিকেলকে নিয়ে শুরু হয়েছিল দুই দলের কাড়াকাড়ি। তখন নরওয়ের ক্লাব লিন অসলোতে খেলতেন মিকেল। ২০০৬ মৌসুম থেকে তাকে পেতে ২০০৫ সালের এপ্রিলে চুক্তি সারে ইউনাইটেড। কিন্তু এর কদিন পরই চেলসি দাবি করে মিকেল ও তার এজেন্টের সাথে তাদের চুক্তি পাকা! শুরু হয় অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। 

     

    এরপর সংবাদ সম্মেলনে ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে হাজির হন মিকেল। চেলসিও নাছোড়বান্দা, নিজেদের জায়গায় তারা অনড়। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। শেষ অবধি রেড ডেভিলরা আর পেরে ওঠেনি চেলসির সাথে। মিকেলের গায়ে উঠেছিল চেলসির নীল জার্সিটাই। তবে এর আগে রীতিমতো বোমা ফাটান নাইজেরিয়ান ফুটবলার মিকেল। জানান তাকে নাকি জোর করেই ইউনাইটেডের সাথে চুক্তি সই করানো হয়!

     

    প্রায় এক বছর লড়াইয়ের পর মিকেলকে চেলসি পেয়েছিল ঠিকই। তবে এর জন্য ইউনাইটেডকে ১২ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল তাদের। কিন্তু বছরজুড়ে একের পর এক নাটকীয়তায় যেভাবে দলবদল সম্পন্ন করেছিল, সেটা এখনো হতে পারে আলোচ্য বিষয়।