গ্রুপ সি প্রিভিউ : আর্জেন্টিনার ভারসাম্য, পোল্যান্ডের চ্যালেঞ্জ ও মেক্সিকোর 'অভিশাপ'
আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, পোল্যান্ড ও সৌদি আরবকে নিয়ে গ্রুপ বি। এক নজরে দেখা আসা যাক এই গ্রুপ...
আর্জেন্টিনা
২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের একটা ছবি আপনার মনে থাকার কথা। বেদনামথিত চোখে ট্রফিটার দিকে চেয়ে আছেন লিওনেল মেসি, যে ট্রফি দেখা দিয়েও চলে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২০১৮ বিশ্বকাপে কাছাকাছিও যেতে পারেননি। এবারের বিশ্বকাপটা মেসির শেষ সুযোগ স্বপ্নের ট্রফিটা নিজের করে নেওয়ার।
সেজন্য যা যা করা দরকার, সবকিছুই করছে আর্জেন্টিনা। ২০১৯ সালে কোপা আমেরিকার ব্রাজিলের কাছে হারার পর এই দল অপরাজিত, এর মধ্যে হয়েছে ৩৫টি ম্যাচ। এই সময়ে মেসিরা কোপা আমেরিকা জিতেছেন, সেটা ছিল মেসির বড় কোনো ট্রফি। এরপর ফিনালিসিমিতা জিতে প্রত্যাশার পারদটা আরও বেড়েছে। এবারের এই দলটাকে গত দুই বছর ধরে একসাথে খেলাচ্ছেন লিওনেল স্কালোনি, যিনি আবার বিশ্বকাপের সবচেয়ে কম বয়সী কোচ।
শক্তি
এই আর্জেন্টিনার বড় শক্তি তাদের দল হিসেবে ভারসাম্য ও একতা। মেসি ছাড়া সেই অর্থে এখনকার বড় কোনো সেনসেশন নেই, এবারের ব্যালন ডি অরের প্রথম ৩০ এ ও ছিল না আর্জেন্টিনার কেউ। কিন্তু দল হিসেবে এই দলটা বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। আক্রমণ সবসময়েই আর্জেন্টিনার বড় অস্ত্র ছি, মাথাব্যথা ছিল রক্ষণ। এবার সেই রক্ষণে কুতি রোমেরো, ওটামেন্ডি ও লিসান্দ্রো মার্টিনেজের ওপর অনেকখানি নির্ভর করবে আর্জেন্টিনা। এমিলিয়ানো মার্টিনেজ তো গোলপোস্টের নিচে আছেনই।
মধ্যমাঠেও খুব বড় কোনো তারা না থাকলেও পারেদেস, দি পল, পাপ্পু গোমেজরা নিজেদের কাজটা বোঝেন। লতারো মার্টিনেজ ফর্মে আছেন ইন্টারের হয়ে, আর আনহেল ডি মারিয়া তো বিগ ম্যাচ খেলোয়াড়। বেঞ্চে যারা আছেন, তারা সবাই ক্লাব ফুটবলের পাশাপাশি জাতীয় দলেও কমবেশি পরীক্ষিত। দিবালার চোট থেকে ফেরাও স্বস্তি দেবে স্কালোনিকে।
দুর্বলতা
লে সেলসোর চোট। টুর্নামেন্টের ঠিক আগে চোট পেয়ে ছিটকে গেছেন এই মিডফিল্ডার। দলে রক্ষণ ও আক্রমণের লিংক হিসেবে কাজ করতেন। তিনি না থাকায় এই পজিশন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে স্কালোনিকে। প্যালাসিওস, পাপ্পু গোমেজ ও এনজো ফার্নান্দেজের কেউ হয়তো সুযোগ পাবেন। কিন্তু সেলসো যেভাবে দলের অন্যতম সদস্য হয়ে উঠেছিলেন, তার অভাব কতটা পূরণ হবে তা নিয়ে আছে সংশয়।
মেক্সিকো
একটা জায়গায় মেক্সিকো এই বিশ্বকাপ নিয়ে আশাবাদী ও শংকিত দুই হতে পারে। সেই ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিটি বিশ্বকাপেই তারা শেষ ১৬তে উঠেছে, সেই হিসেবে নকআউটে ওঠার জন্য মেক্সিকো ফেবারিট। আবার কোনোবারই তারা শেষ আটে যেতে পারেনি, সেটা চিন্তার কারণ। এবার পরের পর্বে যেতে না পারলে তারা হতাশ হবে অবশ্যই, তবে সাম্প্রতিক কিছু চিহ্ন খুব আশাদায়ক নয়।
কোচ জেরার্দো টাটা মার্টিনোরও চাপ বাড়ছে। তার ট্যাকটকস ও দল নির্বাচন নিয়ে মেক্সিকোতে সমালোচনা হচ্ছে অনেক, এমন গুঞ্জনও আছে বিশ্বকাপের পরেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন। বিশ্বকাপে খেলা দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়স তাদের, এটাও একটা চিন্তার কারণ।
শক্তি
মিডফিল্ডে এডসন আলভারেজ ও আক্রমণে হারভিং লোজানো বড় অস্ত্র হতে পারে। প্রেসিং ফুটবল খেলে মেক্সিকো, আর লোজানো এবার নাপোলিতে একই ধাঁচের ফুটবল খেলে বেশ ছন্দে আছেন। আলভারেজ ডিফেন্সিভ মিডে বড় আস্থা। আর গোলপোস্টের নিচে চিরবিশ্বস্ত ওচোয়া তো আছেনই, যিনি বিশ্বকাপ এলে হয়ে ওঠেন অতিমানব।
দুর্বলতা
নিয়মিত স্ট্রাইকার রাউল হিমেনেজ স্কোয়াডে আছেন। তবে এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি চোট থেকে। তার খেলতে না পারা বড় আঘাত হবে মেক্সিকোর জন্য। টুর্নামেন্টের আগেই ছিটকে গেছেন জেসুস করোনা, সেটাও চিন্তার কারণ।
পোল্যান্ড
রবার্ট লেভানডফস্কির দল হিসেবেই তাদের সবাই চেনে। পোল্যান্ড বিশ্বকাপে একদম অনিয়মিত নয়, কিন্তু এখন পর্যন্ত গ্রুপ পর্বের বাধা পার হওয়া হয়নি। এবারে বিশ্বকাপে আসা পথটাও ছিল নাটকীয়। প্লে অফের আগে হুট করে কোচ পাউলো সোসা দায়িত্ব ছেড়ে দেন। নতুন কোচ জেসল মিশেনোভিচকে ন্যে আসা হয় লেগিয়া ভারসভ থেকে। সেটা নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল, কিন্তু মিশেনেভিচের অধীনে দল প্লে অফ সুইদেনকে হারিয়ে পায় বিশ্বকাপের তিকিট।
নেশন্স লিগে বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের সাথে খুব ভালো না করলেও ওয়েলসকে টপকে তৃতীয় হয়েছে পোলিশ। এবার তারা শেষ ১৬কে পাখির চোখ করবে।
শক্তি
রবার্ট লেভানডফস্কি এই দলের বড় নাম এবং বড় শক্তি। ফিফার বর্ষসেরা হওয়া এই ফুটবলারকে মনে করা হয় এই প্রজন্মের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন। বিশ্বকাপে অবশ্য এখনো মনে রাখার মতো কিছু করতে পারেননি। তবে পোলিশদের ট্রাম্প কার্ড হতে পারেন নাপোলির হয়ে দারুণ ফর্মে থাকা পিওতর জিলেন্সকি। সঙ্গে বযাক আপ স্ট্রাইকার হিসেবে আর্কাদিউস মিলিকও আছেন।
দুর্বলতা
চোটের জন্য দলটাকে এখনো থিতু করতে পারেননি কোচ, প্রশ্ন আছে বেশ কিছু সিনিয়র প্লেয়ারের ফিটনেস নিয়ে। বেশ কিছু খেলোয়াড় সেরা সময় পেছনে ফেলে এসেছেন, বিশ্বকাপে তারা কেমন করবেন তা নিয়ে আছে প্রশ্ন।
সৌদি আরব
এই গ্রুপের সম্ভবত সবচেয়ে দুর্বল দল। বিশ্বকাপে এশিয়া থেকে তারাও মোটামুটি নিয়মিত। এবারের বাছাইপর্ব থেকে উঠে এসেছেও ভালোমতোই। তবে ১৯৯৪ সালে সাইদ আল ওয়াহরাইনের সেই অবিশ্বাস্য গোল হচাড়া বিশ্বকাপের মঞ্চে তাদের মনে রাখার মতো খুব বেশি কিছু নেই। এবারের দলটাকে কোচ হার্ভে রেনার্ড চেনেন খুব ভালোমতোই।
শক্তি
দুই ফরোয়ার্ড আল দাউসারি ও সামি আল নাজেই গতি দিয়ে চমকে দিতে পারেন প্রতিপক্ষকে। লো ব্লকে খেলে বলে সৌদিদের বিপক্ষে গোল পাওয়াটাও বড় একটা চিন্তার কারণ হবে অন্য দলগুলোর
দুর্বলতা
ইউরোপিয়ান ফুটবল খেলার অভিজ্ঞতা তেমন কারও নেই, এটা একটা চিন্তার কারণ হতে পারে। কাউন্টার অ্যাটাকর্নিভর খেলা বলে গোল পাওয়াটাও তাদের জন্য সহজ নয়।
প্রেডিকশনঃ আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকো পরের রাউন্দে। এরপর পোল্যান্ড ও সৌদি আরব।