প্যাভিলিয়নের চোখে ২০২৩ বিপিএলের সেরা একাদশ
চার বছরের মধ্যে কুমিল্লার তৃতীয় ও সব মিলিয়ে তাদের চতুর্থ শিরোপা জয়ের মদ্ধ দিয়ে শেষ হল এবারের বিপিএল। সিলেটকে প্রথমবারের মত ফাইনালে তুলেও প্রথমবারের মত ফাইনাল হারলেন বিপিএলের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ফাইনালটা যেমন আনন্দদায়ী হয়েছে, পুরো আসর জুড়ে সেরকম ক্রিকেটের দেখা মিলেছে নাকি তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। মাঠে ও মাঠের বাইরে এবারও নানা তর্ক-বিতর্ক ছিল বিপিএলের সঙ্গী। তবে সিলেট ও চট্টগ্রামের দারুণ উইকেটগুলো হয়ত বহু বছরের মধ্যে টি-টোয়েন্টি সুলভ এক বিপিএল উপহার দিয়েছে। মাঠের খেলাতেও এবার তাই দেশি খেলোয়াড়রা নিজেদের মেলে ধরেছে। ২০২৩ বিপিএল শেষে আসরের সেরা একাদশ কেমন হতে পারে সেটাই খতিয়ে দেখা হল এই প্রতিবেদনে।
নাজমুল হোসেন শান্ত
ইনিংস: ১৫
রান: ৫১৬
ব্যাটিং গড়: ৩৭.৬৬
স্ট্রাইক রেট: ১১৩.৮৫
বহু সমালোচনার জবাবটা হয়ত টি-টোয়েন্টির মত করে দিতে পারেননি শান্ত। স্ট্রাইক রেটের তেমন একটা উন্নতি এবারও পরিলক্ষিত হয়নি। তবে শান্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঠিকই পেয়েছেন রানের দেখা। সেই সাথে হয়েছেন এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও টুর্নামেন্ট সেরা। ফাইনালে ফিফটি পেলেও বিপিএল শিরোপাটা এবার থেকে গেছে অধরাই। তবে যেই ধারাবাহিক শান্ত প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিপিএলের এক মৌসুমে ৫০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন সেই শান্ত তো এবার যে কারও সেরা একাদশেই থাকবেন।
লিটন দাস
ইনিংস: ১৩
রান: ৩৭৯
ব্যাটিং গড়: ৩১.৫৮
স্ট্রাইক রেট: ১২৯.৩৫
পুরো টুর্নামেন্টে হয়ত ওভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি লিটন। তবে গুরুত্বপূর্ণ ৩টি ফিফটি পেয়েছেন। এমনকি ফাইনালেও দারুণ এক ইনিংস খেলে কুমিল্লাকে দারুণ সূচনা তিনিই এনে দিয়েছিলেন। লিটনের জায়গায় রনি তালুকদারকে আপনি দলে রাখতেই পারেন, তবে রনির ৩টি ফিফটির মধ্যে একটিই ভূমিকা রেখেছে জয়ে। লিটন তাই দলের জয়ে ভূমিকা রাখার জন্যই থাকবেন কিছুটা এগিয়ে।
তৌহিদ হৃদয়
ইনিংস: ১৩
রান: ৪০৩
ব্যাটিং গড়: ৩৬.৬৩
স্ট্রাইক রেট: ১৪০.৪১
সন্দেহাতীতভাবেই এবারে আসরের সেরা তরুণ খেলোয়াড় হৃদয়। ইঞ্জুরিতে পড়ার আগে টানা তিন ম্যাচে পেয়েছিলেন ফিফটি। সিলেটের দুর্দান্ত এক মৌসুমে হৃদয় ছিলেন অগ্রগামীদের একজন। শুধু যে রান করেছেন তাই নয়, প্রায় প্রতি ম্যাচেই খেলে গিয়েছেন দৃষ্টিনন্দন স্ট্রাইক রেট নিয়ে। বাংলাদেশের বেশিভাগ খেলোয়াড় এবার টি-টোয়েন্টিসুলভ ব্যাটিং করতে না পারলেও হৃদয়কে নিয়ে সেই প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক)
ইনিংস: ১৩
রান: ৩৭৫
ব্যাটিং গড়: ৪১.৬৬
স্ট্রাইক রেট: ১৭৪.৪১
উইকেট: ১০
ইকোনমি: ৬.৩১
এলিমিনেটরে তার ব্যাটিংয়ে তিনে না নামা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। সেই সমালোচনার জায়গাটা সাকিব নিজেই তৈরি করেছেন এবারের আসরে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফর্ম দেখিয়ে। আসরের লম্বা সময় জুড়ে তিনি ছিলেন শীর্ষ রান সংগ্রাহক। রান পাওয়ার চেয়ে বড় বিষয় যেই স্ট্রাইক রেটে তিনি ব্যাট করেছেন। স্বল্প সময় উইকেটে থাকলেও দলের রানের চাকা সচল রাখার জন্যই খেলেছেন প্রতি ম্যাচে। সেই সাথে উইকেট পাওয়ার দিক দিয়ে মৌসুমটা ঠিক সাকিব-সুলভ না হলেও রান আটকে রাখায় এবারও তিনি দেখিয়েছেন পারদর্শিতা।
ইফতিখার আহমেদ
ইনিংস: ১১
রান: ৩৫১
ব্যাটিং গড়: ৫৮.৫০
স্ট্রাইক রেট: ১৫৭.৩৯
ইফতি-ম্যানিয়াতে বিপিএল মজেছিল বেশ লম্বা সময় ধরে। বরিশালের একমাত্র সেঞ্চুরিটাও এসেছে তার ব্যাট থেকে। ইফতিখার এবারের বিপিএলে ব্যাট হাতে যেই দাপট দেখিয়েছেন বরিশালের প্লে-অফ খেলার ভূমিকা অসামান্য।
নাসির হোসেন
ইনিংস: ১২
রান: ৩৬৬
ব্যাটিং গড়: ৪৫.৭৫
স্ট্রাইক রেট: ১২০
উইকেট: ১৬
ইকোনমি: ৬.৮১
ব্যাটে-বলে এবার যেন নিজেকে নাসির ফিরে পেয়েছেন পূর্ণ রূপে। ঢাকার দুর্বিষহ এক মসুম কাটলেও নিজের সর্বোচ্চটাই দিয়ে গিয়েছেন অধিনায়ক নাসির। ব্যাট হাতে ছিলেন ধারাবাহিক; আর বল হাতে যখনই দলের নাগালের মধ্যেও ম্যাচ ছিল না তখনই গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু এনে দিয়ে দলকে ম্যাচে রেখেছেন। আসরের সেরা অল-রাউন্ডারের নাম নিতে গেলে এবার নাসিরের নাম থাকব শীর্ষ দুইয়েই।
করিম জানাত
ইনিংস: ১৩
রান: ২২২
ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট: ১৬৬.৯১
ব্যাটিং গড়: ৩১.৭১
উইকেট: ১০
বোলিং গড়: ২১.৯০
ইকোনমি: ৮.৩৬
আফগান এই অল-রাউন্ডার ব্যাট হাতে জিতিয়েছেন দারুণ কিছু ম্যাচ। ঝড়ো ক্যামিও খেলার পাশপাশি বোলিংয়েও তিনি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কয়েক ম্যাচে বল হাতে হতাশ করলেও দলের বিপদের সময় গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়েছেন নিয়মিতই। সেই সাথে ব্যাট হাতে তার ঝড়ের জন্যই মূলত এই একাদশে জায়গা পাচ্ছেন তিনি।
আজমতউল্লাহ ওমরযাই
ইনিংস: ১১
উইকেট: ১৫
বোলিং গড়: ১৮.৩৩
ইকোনমি: ৭.১৭
নতুন বলে এবার বোধহয় সবচেয়ে দুর্ধর্ষ বোলিং করেছেন আফগানিস্তানের এই মিডিয়াম পেসার। ক্ষুরধার সুইংয়ে খাবি খাইয়েছেন ওপেনারদের, আর উইকেট তুলে নিয়েছেন ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতেও। ওমরযাই তাই নিঃসন্দেহে এই আসরের সেরা বিদেশি খেলোয়াড়দের একজন।
মোহাম্মদ আমির
ইনিংস: ১১
উইকেট: ১৪
ইকোনমি: ৬.১৩
বোলিং গড়: ১৯.২৮
পিএসএলের জন্য বিপিএল ছাড়ার আগে সিলেটের বোলিং আক্রমণের দাপটের অন্যতম কান্ডারি ছিলেন আমির। বিশেষত ম্যাচের শেষদিকে তিনি যেভাবে রান আটকিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। সেই সাথে উইকেটের মিছিলেও হেঁটেছেন নিয়মিতই।
হাসান মাহমুদ
ইনিংস: ১৪
উইকেট: ১৭
ইকোনমি: ৭.৯৮
বোলিং গড়: ২৪.৮২
হাসান হয়ত রান গুনেছেন বেশ, তবে রংপুরে তার ভুমিকাটাই সেটাই - উইকেট এনে দেওয়া। হারিস রউফ, ওমরযাইরা অন্য প্রান্তে রান আটকে রাখার কাজটা সারায় হাসান মৌসুম শেষ করেছেন যৌথভাবে আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হিসেবে।
তানভীর ইসলাম
ইনিংস: ১৪
উইকেট: ১৭
বোলিং গড়: ১৭.৫৮
ইকোনমি: ৬.৩৬
শুধু যে তিনি এবারের আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তাই নয়, রান আটকে রেখেও কুমিল্লার বহু জয়ে একদম প্রত্যক্ষ অবদান রেখেছেন তানভীর। এমনকি পাওয়ারপ্লেতেও তিনি ব্যাটারদের মাথাব্যাথার বিশাল এক কারণ হয়েছিলেন। কুমিল্লার শিরোপা জয়ের সবচেয়ে বড় নায়কদের একজন হিসেবে তানভীরের নাম তাই এবার আসতে বাধ্য।
মাশরাফি বিন মুর্তজা (দ্বাদশ খেলোয়াড়)
ইনিংস: ১৪
উইকেট: ১২
ইকোনমি: ৭.৬৭
ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট: ১২৩.৮৮
মাশরাফি বল হাতে মৌসুমের শুরুটা করেছিলেন দারুণ। শেষের দিকে বল হাতে কিছুটা নিষ্প্রভ হলেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্পেলে ম্যাচে অন্যদের কাজটা সহজ করেছেন। সেই সাথে নিজেকে তিনে বা চারে নামিয়ে যে দুটো ক্যামিও খেলেছিলেন সেটাও দারুণ কাজে দিয়েছিল। সেই সাথে দারুণ অধিনায়কত্ব তো আছেই।