• এফ এ কাপ
  • " />

     

    গুন্ডোগানের গরিমায় সিটির সপ্তম এফএ কাপ শিরোপা

    গুন্ডোগানের গরিমায় সিটির সপ্তম এফএ কাপ শিরোপা    

     ফুলটাইম স্কোর: ম্যানচেস্টার সিটি ২-১ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড


     


    ওয়েম্বলিতে এর আগে দুই দলের দেখা হয়েছিল দুইবার। ২০১১ সালে কমিউনিটি শিল্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাটেড জয় পেলে পরে এই এফএ ক্যাপের সেমি-ফাইনালেই তাদের বিদায় জানিয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি। তবে ফাইনালের আমেজ তো একেবারেই ভিন্ন। পেপ গার্দিওলার দুর্দমনীয় সিটির সামনে নিজেদের নতুন করে খুঁজতে থাকা এরিক টেন হাগের ইউনাইটেড যে শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে সেটা নিয়ে ছিল না তেমন সন্দেহ। ফাইনালটা তাই অনুমিতভাবেই জমজমাট হলেও পেপের সিটি শেষমেশ জিতেছে ফাইনাল। সিটির সুনিপুণ ফুটবলটাও যেন ফুটবল দুনিয়ার ফলাফলে এনে দিয়েছে যান্ত্রিকতা। যন্ত্রের মত হিসেব করে জয় ছিনিয়ে নিতে থাকা সিটিকে নিজেদের সপ্তম এফএ কাপ শিরোপা এনে দিতে এবার নেপথ্য নায়ক তাদের অধিনায়ক ইলকাই গুন্ডোগান।

    পরের মৌসুমে গুন্ডোগান থাকবেন কি না সেটা নিয়ে চলছে যথেষ্ট জলঘোলা। তবে সেসবকে পাত্তা না দিয়ে মাঠে নিজের কাজটা এই জার্মান মিডফিল্ড জেনারেল করে চলেছেন একাগ্রচিত্তে। তারই পরিক্রমায় ওয়েম্বলি রাঙিয়ে তুললেন ম্যাচ শুরু হওয়ার পর বলে মাত্র ছয়বার ছোঁয়া লাগতেই। এফএ কাপ ফাইনাল ইতিহাসের দ্রুততম গোলের রেকর্ড গড়ে সিটিকে এগিয়ে দিলেন ১২ সেকেন্ডেই! প্রায় ২০ গজ বাইরে গুন্ডোগানের পায়ের সামনে যখন উড়ন্ত বল এসে পড়ল, আগেপিছে না ভেবেই দুর্দান্ত এক ভলিতে বল জালে জড়ালেন সিটি অধিনায়ক। সেই সাথে লুইস সাহার গড়া ২৫ সেকেন্ডের রেকর্ড ভেঙে হয়ে গেলেন এফএ কাপ ফাইনাল ইতিহাসের দ্রুততম গোলদাতা। ৪র্থ মিনিটেই রদ্রির হেডটাও এরপর যখন জালে না জড়িয়ে পার্শ্ব জাল ঘেঁষে বেরিয়ে গেল তখন হাঁফ ছাড়ার সুযোগ পায় ইউনাইটেড।

    তাতে অবশ্য অবিচল থেকে সিটি চালিয়ে যায় সাঁড়াশি আক্রমণ। ইউনাইটেড নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে সিটির অর্ধে আক্রমণের সুযোগ তৈরির চেস্টায় ক্রমাগত মিডফিল্ডে চাপ তৈরি করলেও সিটিও সেসব সামাল দেয় সমান তালেই। ক্ষণেক্ষণে বরং সিটিই ডেভিড ডি গেয়াকে ভাবিয়ে তুলছিল। তবে কেভিন ডি ব্রুইনার দূরপাল্লার শট সামান্য কয়েক ইঞ্চি ব্যবধানে বেরিয়ে যাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যেই ম্যাচে ফেরার সুযোগ পেয়ে যায় ইউনাইটেড। গ্রিলিশের হাতে বলের আলতো ছোঁয়া লাগলেও হাত শরীর থেকে দূরে থাকায় ভিএআরের মাধ্যমে পেনাল্টি পেয়ে যায় ইউনাইটেড। ওর্তেগাকে বোকা বানিয়ে ইউনাইটেড অধিনায়ক ব্রুনো ফার্নান্দেজ বল জালে জড়াতে ভুল করেননি সেখান থেকে। ৪২ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যাওয়ার সুযোগটাও এরপর পেয়েছিল রেড ডেভিলরা। কাসেমিরোর আলতো টোকায় বল ভারানেকে বক্সের মাঝে খুঁজে নিলেও ভলিটা গোলমুখে রাখতে পারেননি এই ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার। প্রথমার্ধ তাই শেষ হয় ১-১ সমতায়।

    তবে দ্বিতীয়ার্ধে গল্পটা যেন একইভাবে লেখার পণ করে নেমেছিলেন গুন্ডোগান। পরের মৌসুমে থাকুন বা না থাকুন এই মৌসুমে নিজের নামটা সিটি কিংবদন্তিদের কাতারে সিলগালা করে তবেই থামবেন যেন তিনি! ৫১ মিনিটের মাথায় ডি ব্রুইনার ফ্রি-কিক খুঁজে নিল ডি বক্সের মাথায় থাকা গুন্ডোগানকে। সেখান থেকেই আবারও ঈগলের দৃষ্টিতে জাল খেয়াল করে ভলিতে পেয়ে গেলেন গোল। প্রথমবারের মত নিখুঁত সংযোগ না হলেও বলটা ঠিকই জায়গামতই জড়ালেন তিনি। ১৯৬৩ সালের পর বক্সের বাইরে থেকে এফএ কাপ ফাইনালে দুই গোল দেওয়ার ঘটনাও এটাই প্রথম।

    ম্যাচে এরপর ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠা টেন হাগ নামিয়েছিলেন গারনাচোকেও। তবে ম্যাচে নিজেদের আধিপত্য ধরে রেখে ৭২ মিনিটে হ্যাটট্রিকটাও করে ফেলার সুযোগ পেয়েছিলেন গুন্ডোগান। হালান্ডের প্রচেষ্টা ক্ষিপ্রভাবে ডি গেয়া ফিরিয়ে দিলে ফিরতি শটে বল জালে জড়িয়েছিলেন গুন্ডোগান। তবে অফ সাইডে সেটা বাতিল হলে বদলি গারনাচো সুযোগ লুফে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন অন্য প্রান্তে। বাঁ প্রান্ত থেকে দারুণভাবে ভিতরে ঢুকে দূরবর্তী পোস্ট খুঁজে নিতে চেয়েছিলেন মাটি কামড়ানো শটে। কয়েক সেন্টিমিটারের জন্য আর্জেন্টাইন উইঙ্গারকে আশাহত হতে হয় সেবার।

    সেখান থেকে শেষ দশ মিনিটে লড়াইটাও হয় সেয়ানে সেয়ানে। ৮৪ মিনিটের মাথায় ডান পোস্ট ঘেঁষে হালান্ডের আরও একটি প্রচেষ্টা বের হয়ে গেলে সমতা ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল ইউনাটেড, ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে। ডি-বক্সের মধ্যে ইউনাইটেডের প্রায় হাফ ডজন খেলোয়াড়ের উপস্থিতিতে গারনাচোর বল ডানে থাকা ভারানেকে খুঁজে নিলে ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার যেন বুঝে উঠতে পারেননি। দুর্বল সংযোগটা সিটি গোলকিপার ঠেকিয়ে দিলেও তার সামনেই থাকা স্কট ম্যাকটমিনের সামনে ছিল বল জালে জড়ানোর সুযোগ। তবে উত্তেজনার বশে হাতছোঁয়া দূরত্ব থেকে ম্যাকটমিনে হেডটা মাথায় লাগালেও বল নিচে রাখতে পারেননি। পোস্ট ঘেঁষে বল উপরের জালে আটকে থাকলে সেখানেই যেন লেখা হয়ে যায় রেড ডেভিলদের ভাগ্য। হলও তাই! গুন্ডোগানের সেই দুই গোল সিটিকে এনে দিল পেপের দ্বিতীয় এফএ কাপ শিরোপা। স্টিভেন জেরার্ড ও পিয়েরে এমেরিক অবামেয়াংয়ের পর তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে ফাইনালে জোড়া গোল দিয়ে ব্যবধান হয়ে থাকলেন গুন্ডোগানই।