ওয়েম্বলি, গোলশূন্য ড্র ও টাইব্রেকার: আবারও চেলসিকে হতাশ করে শিরোপা জিতল লিভারপুল
কারাবাও কাপ ফাইনালের পর টটেনহাম ম্যানেজার আন্তনিয়ো কন্তে বলেছিলেন, মানের দিক থেকে এই ফাইনাল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের মতোই ছিল। ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় দুই দল এবং দুই ম্যানেজার যখন একত্র হবে, তখন এরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তা অনুমিতই। ওয়েম্বলিতে চেলসি ও লিভারপুলের মধ্যকার দ্বিতীয় হাই-কোয়ালিটি ফাইনালটিও দেখল একই পরিণতি। হাড্ডাহাড্ডি ১২০ মিনিটের ফুটবলের পর টাইব্রেকারে চেলসিকে হারিয়ে এফএ কাপ শিরোপা জিতেছে লিভারপুল।
ম্যাচ শুরুটা ফ্রন্টফুটে থেকে করে লিভারপুল। প্রথম ২০ মিনিটে চেলসিকে দাঁড়াতেই দেয়নি থিয়াগোরা। অষ্টম ও নবম মিনিটে গোলের খাতা প্রায় খুলেই ফেলেছিলেন লুইস ডিয়াজ। বিশেষ করে, নবম মিনিটে আউটসাইড ফুটে দেওয়া ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আর্নল্ডের নিখুঁত এক থ্রু বল থেকে বক্সে বল পেয়ে যান ডিয়াজ। তবে গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে পারেননি তিনি।
২০ মিনিটের পর ম্যাচে পা রাখতে শুরু করে চেলসি। ৩৩ মিনিটে চোটের জন্য মাঠ ছেড়ে যান মোহামেদ সালাহ। তার জায়গায় নামেন ডিয়গো জোটা।
প্রথমার্ধের বাকি সময়ে দুই দলই বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু জালের দেখা পায় না কেউই।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আবার আগ্রাসী ফুটবল খেলা শুরু করে চেলসি। ৪৭ মিনিটে লুকাকুর পাস থেকে বক্সে বল পেয়ে সরাসরি শট নেন পুলিসিক। তবে ওয়ান-অন-ওয়ানে বিশেষজ্ঞ গোলকিপার অ্যালিসনের এই শট ফেরাতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। পরের মিনিটেই বক্সের ডানপাশে একটি ফ্রিকিক পায় চেলসি। অ্যালোনসোর নেওয়া সেই ফ্রিকিক ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে।
চেলসির এই আগ্রাসন সামলে নিয়ে আবার নিজেদের মতো খেলতে শুরু করে লিভারপুল। ৫২ ও ৬০ মিনিটে দুটি দুর্দান্ত সুযোগও তৈরি করে তারা। প্রথমটিতে বক্সের সামনে নেওয়া ডিয়াজের জোরালো মাটি কামড়ানো শট সাইডবারের খুব কাছে দিয়ে চলে যায়। ৬০ মিনিটে কেইটার বাড়ানো বলে সিক্স ইয়ার্ড বক্সের কাছে থেকে শট নেন জোটা। কিন্তু তার শটও অল্পের জন্য লক্ষভ্রষ্ট হয়।
ম্যাচজুড়ে পজিশনিং ঠিক রেখে সময়মত আক্রমণে উঠলেও পুলিসিক একাই চেলসির প্রতিশ্রুতিশীল বেশ কিছু সুযোগ নষ্ট করেছেন। আর অপর পাশে লুইস ডিয়াজ একের পর আক্রমণ করে একটি ম্যাচসেরা পারফরম্যান্স উপহার দিলেও শেষ পর্যন্ত আর গোলের দেখা পাননি।
কারাবাও কাপের মতোই কোয়ালিটি ফুটবল উপহার দিয়ে গোলশূন্য অবস্থায় নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ করে চেলসি ও লিভারপুল। অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন ভার্জিল ভ্যান ডাইক। তবে তার বদলি হিসেবে নামা জুয়েল মাতিপ ম্যাচের বাকি সময়ের দলের রক্ষণ নিশ্ছিদ্র রাখতে সক্ষম হন।
ক্লান্তি নিয়ে খেলতে থাকা দুই দল অতিরিক্ত সময়েও গোলের কোনো সুরাহা করতে পারেনি। কারাবায়ো কাপের মতো টাইব্রেকারে যাওয়াটাই যেন নিয়তি ছিল।
টাইব্রেকারের দল দুটো এক হলেও এদিন গোলরক্ষক দুজন ছিলেন ভিন্ন। কারাবায়ো কাপে বদলি গোলরক্ষকদের সুযোগ দিলেও এই ফাইনালে মূল কিপারদের উপরই ভরসা রাখেন দুই ম্যানেজার।
প্রথম পেনাল্টি দুই দলই ঠিকঠাক নেওয়ার পর চেলসির দ্বিতীয় পেনাল্টিটি মিস করেন আজপিলিকুয়েতা। সাইডবারে লেগে তার শট ফিরে যাওয়ার পর টানা ছয়টি পেনাল্টি জালে জড়ান দুই দলের খেলোয়াড়েরা। দলের পঞ্চম ও শেষ পেনাল্টি নিতে আসেন সাদিও মানে। টাইব্রেকারে সেনেগালকে আফকন জেতানো দুই নায়ক মানে ও এডওয়ার্ড মেন্ডি মুখোমুখি হন। এবার স্বদেশী মানেকে পরাস্ত করে চেলসি ভক্তদের আবার আশা দেখান মেন্ডি।
হাকিম জিয়েশের বুলেট পেনাল্টি পর সেই আশা আরেকটু পাকাপোক্ত হয়। কিন্তু দলের সপ্তম পেনাল্টি নিতে আসা ম্যাসন মাউন্টের পেনাল্টি ফিরিয়ে দেন অ্যালিসন বেকার। দলকে ১৪ বছর পর এফএ কাপ শিরোপা জেতানোর সুযোগটি চলে আসে কসতাস সিমিকাসের কাছে। এবং অল্প সময়েই ফ্যান-ফেভারিট হয়ে উঠা এই ব্যাক-আপ লেফটব্যাকের পা থেকেই জয়সূচক গোলটি পায় লিভারপুল।
এরই মাধ্যমে অধরা এফএ কাপ শিরোপাটিকে সিভিতে যোগ করেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের পর প্রথম ম্যানেজার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, প্রিমিয়ার লিগ, লিগ কাপ ও এফএ কাপ শিরোপা জেতার রেকর্ড করেছেন এই জার্মান। আশ্চর্যজনক শোনালেও সত্য, এই চারটি শিরোপা এই মৌসুমের মধ্যেই জিতে ফেলার সম্ভাবনা আছে লিভারপুলের। তবে রিয়ালের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলতে যাওয়া অলরেডদের প্রিমিয়ার লিগ জেতার সম্ভাবনা এখন প্রায় পুরোপুরিই নির্ভর করছে ভাগ্যের উপর।