• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩
  • " />

     

    রানের মহোৎসবে প্রোটিয়াদের প্রতাপশালী জয়

    রানের মহোৎসবে প্রোটিয়াদের প্রতাপশালী জয়    

    ২০২৩ বিশ্বকাপ, দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা(টস-শ্রীলঙ্কা/বোলিং)
    দক্ষিণ আফ্রিকা - ৪২৮/৫, ৫০ ওভার (ডুসেন ১০৮, মার্করাম ১০৬, ডি কক ১০০, মাদুশাঙ্কা ২/৮৬, ওয়েলালাগে ১/৮১)
    শ্রীলঙ্কা - ৩২৬, ৪৪.৫ ওভার (আসালাঙ্কা ৭৯, মেন্ডিস ৭৬, শানাকা ৬৮, কোয়েটজি ৩/৬৮, রাবাদা ২/৫০, মহারাজ ২/৬২)
    ফলাফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১০২ রানে জয়ী


     


    রানের মহোৎসবে দক্ষিণ আফ্রিকাই হাসল শেষ হাসি। এইডেন মার্করামের খুনে সেঞ্চুরি, ভ্যান ডার ডুসেন ও কুইন্টন ডি ককের সেঞ্চুরিতে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ার পর শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কা শেয়ানে শেয়ানে লড়লেও নিয়মিত উইকেট তুলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়েছে বড় জয়।

    মার্কো ইয়ানসেনের দারুণ ইনসুইঙ্গারে স্টাম্প খুইয়ে শুরুতেই পাথুম নিসাঙ্কা ফেরার পর কুশল মেন্ডিস যেন ভিনগ্রহী ব্যাটিং শুরু করেন। একের পর এক পিক আপ শটে ছয়ের পসরা সাজিয়ে মাত্র ২৫ বলে ফিফটি পেয়ে যান তিনি। ইয়ানসেনের দ্বিতীয় শিকার হয়ে অন্য দিকে কুশল পেরেরা ফিরলেও থামেননি মেন্ডিস। তােই বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা তাদের সবচেয়ে সফল প্রথম পাওয়ারপ্লে পার করার পর দলীয় শতরান পেয়ে যায় ১২-তম ওভারেই। তবে স্রোতের বিপরীতে রাবাদার নিরীহ এক বলে উইকেটে পেছনে ক্যাচ তুলে দিয়ে মেন্ডিস ৪২ বলে ৭৬ রানে থামলে শ্রীলঙ্কার আশা ক্ষীণ হয়ে আসে।

    ২১ ওভারের মধ্যেই এরপর সাদিরা সামারভিক্রমা ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ফিরলে লজ্জার মুখে পড়তে হতে পারে বলেই ভাবছিল শ্রীলঙ্কা। উইকেটে থাকা অধিনায়ক দাসুন শানাকা তো ছিলেন ভীষণ নড়বড়ে; তবে তার পুরো বিপরীত চারিথ আসালাঙ্কা। শ্রীলঙ্কার প্রতিরোধের নেতৃত্ব দিয়ে ফর্মে থাকা এই বাঁহাতি ফিফটি তুলে নিয়ে স্ট্রাইক রেটটাও ধরে রেখেছিলেন। তবে এনগিডির শিকার হয়ে ৬৫ বলে ৭৯ রানে তিনি থামার পর টানা দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দুনিথ ওয়েলালাগে গোল্ডেন ডাকের শিকার হওয়ায় কার্যত শেষ হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার আশা।
    দুর্বিষহ এক ইনিংস খেলতে থাকা শানাকা হঠাৎ ব্যাট পরিবর্তন করে কোয়েটজির এক ওভারে ২৩ রান নিয়ে ফিফটি করলেও মহারাজের নিরীহ বলে স্টাম্প খুইয়ে থামেন ৬২ বলে ৬৮ রানে। শেষদিকে কাসুন রাজিথা ৩৩ রানের এক ইনিংসে বিনোদন দিয়েছেন ঠিকই। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৫ ওভারের মধ্যে ম্যাচ শেষ করে নিজেদের রান রেট বাড়িয়ে নেওয়ার কাজটা সেরেছে ঠিকঠাক।

    এর আগে টস জিতে শ্রীলঙ্কার নেওয়া বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত যেন দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য শাপেবর হয়ে এল। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বোলারদের তুলোধোনা করে রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা জানাল তাদের আগমনী বার্তা।

    অথচ নিজেদের সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করতে শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেছিলেন দিলশান মাদুশাঙ্কা। শ্রীলঙ্কা শিবিরের আনন্দ যেন সেখানেই শেষ হয়ে যায়। উইকেটে আসা রাসি ভ্যান ডার ডুসেনের সাথে আক্রমণের আনন্দে মেতে ওঠেন কুইন্টন ডি কক। বলপ্রতি ভ্যান ডার ডুসেন ফিফটি পাওয়ার পর ৬২ বলে ফিফটি পেয়ে যান ডি ককও। তবে এরপর শ্রীলঙ্কার জরাজীর্ণ ফিল্ডিংয়ের মাশুল তারা গুনেছে ভয়ংকরভাবেই। ২২-২৬ ওভারের মধ্যে দুবার জীবন পেয়েছেন ভ্যান ডার ডুসেন, ডি কক পেয়েছেন একবার। এরপর থেকে আরও এক দফা গিয়ার পরিবর্তন করে সেটার পূর্ণ সুযোগ নিয়ে ডি কক সেঞ্চুরি পেয়ে যান মাত্র ৮৩ বলে; যদিও তার পরের বলে তুলে মারতে গিয়ে পাথিরানার শিকার হয়ে তিনি থামেন ১০০ রানেই। তার কিছুক্ষণ পরেই অবশ্য ১০৩ বলে সেঞ্চুরি পেয়ে যান ভ্যান ডার ডুসেন।

    সেটার জন্য এইডেন মার্করামকে ধন্যবাদ দিতে পারেন ওয়ানডেতে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ডুসেন। অন্য প্রান্তে মার্করাম এসেই হাত খুলে খেলতে থাকলে কাজটা সহজ হয়ে যায় তার জন্য। ১১০ বলে ১০৮ রানে ডুসেন কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরলেও মার্করাম তাই ছিলেন অবিচল। অন্যদিকে হাইনরিখ ক্লাসেন উইকেটে এসে তিন বার সুযোগ পেয়েছিলেন। এরই মাঝে মাত্র ৩৪ বলে ফিফটি পেয়ে যান মার্করাম। অন্য প্রান্তে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে না পেরে ২০ বলে ৩২ রানে ক্লাসেন ফিরলে মার্করাম যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন। পরের পঞ্চাশ রান তুলতে তিনি খরচ করেন মাত্র ১৫ বল! তাতেই মাত্র ৪৯ বলে ফিফটি করে কেভিন ও ব্রায়েনের রেকর্ড ভেঙে হয়ে যান বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান। মাদুশাঙ্কার দ্বিতীয় শিকার হয়ে ৫৪ বলে ১০৬ রানে থামার আগে নির্দয় পিটুনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাজটা ততক্ষণে সারা হয়ে গিয়েছেন মার্করামের। শেষদিকে ২১ বলে ৩৯* রানে অপরাজিত থেকে বাকি কাজটুকু সেরেছেন ডেভিড মিলার। তাতেই বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ডটাও গড়া হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার।