• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩
  • " />

     

    অচেনা অস্ট্রেলিয়া, আম্পায়ারিং বিতর্ক, সব ছাপিয়ে প্রোটিয়াদের প্রতাপশালী পারফরম্যান্স

    অচেনা অস্ট্রেলিয়া, আম্পায়ারিং বিতর্ক, সব ছাপিয়ে প্রোটিয়াদের প্রতাপশালী পারফরম্যান্স    

    ২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, অস্ট্রেলিয়া -দক্ষিণ আফ্রিকা (টস-অস্ট্রেলিয়া/বোলিং)
    দক্ষিণ আফ্রিকা - ৩১১/৭, ৫০ ওভার (ডি কক ১০৯, মার্করাম ৫৬, বাভুমা ৩৫, ম্যাক্সওয়েল ২/৩৪, স্টার্ক ২/৫৩, হেজলউড ১/৬০)
    অস্ট্রেলিয়া - ১৭৭, ৪০.৫ ওভার (লাবুশেন ৪৬, স্টার্ক ২৭, কামিন্স ২২, রাবাদা ৩/৩৩, মহারাজ ২/৩০, শামসি ২/৩৮)
    ফলাফল - দক্ষিণ আফ্রিকা ১৩৪ রানে জয়ী


     


    ম্যাচের মাঝে আম্পায়ারিং বিতর্ক জন্ম নিল দুবার; অস্ট্রেলিয়ার ভয়াবহ ফিল্ডিং অবাক করলে ছয় বারের মত। তবে ম্যাচ শেষে সবার মুখে একটাই নাম - দক্ষিণ আফ্রিকা। পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নদের সব জায়গায় বিধ্বস্ত করে কোনও বিতর্কের সুযোগ রাখেনি প্রোটিয়ারা।

    ৩১২ রানের লক্ষ্য লক্ষ্ণৌয়ের পিচে কঠিন হবে সেটা আঁচ করা যাচ্ছিল। তবে দুই পেসার লুঙ্গি এনগিডি, মার্কো ইয়ানসেনকে সামলাতে যে এতটা খাবি খাবেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার সেটা বোঝা ছিল দায়। দলীয় ২৭ রানেই এই দুজনের শিকার হয়ে পরপর দুই ওভারে ফিরলেন দুই অজি ওপেনার। তবে ম্যাচের প্রথম বিতর্কটা তৈরি হল ১০ম ওভারে। স্টিভ স্মিথের পায়ে লাগা বলে এলবিডব্লিউর আবেদন করে দক্ষিণ আফ্রিকা যেটায় সাড়া দেননি আম্পায়ার জোয়েল উইলসন। ডি কক রিভিউয়ের জন্য অধিনায়ককে রাজি করালে টিভি রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত আসে আউট। লেগ স্টাম্প দিয়ে যেটা পরিষ্কার বের হয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল সেই সিদ্ধান্তে স্মিথ তো বটেই খোদ আম্পায়ার উইলসনও যেন থ হয়ে যান। ১৯ রানে স্মিথকে ফেরানোর এক ওভার পর অবশ্য যে বলে জশ ইংলিসের স্টাম্প উপড়ে ফেললেন রাবাদা তাতে অস্ট্রেলিয়ার আত্মসমর্পণটাও যেন লেখা হয়ে গিয়েছিল।

    যেটুকু বাকি ছিল সেটাও মহারাজকে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে ম্যাক্সওয়েলের ফেরার পর স্টয়নিস বিতর্কে নিশ্চিত হয়ে যায়। ডি ককের ক্যাচটায় স্টয়নিসের গ্লাভ আদৌতে ব্যাটের সাথে সংযুক্ত ছিল কি না তা নিয়ে ধারাভাষ্য কক্ষেও অ্যারন ফিঞ্চরা তুলেছেন প্রশ্ন। তবে সেসব প্রশ্নের কোনও অবকাশ না রেখে শেষদিকে কামিন্স, স্টার্কের প্রতিরোধ গুড়িয়ে শামসি, মহারাজ, রাবাদারা নিশ্চিত করেছেন ম্যাচের অবিসংবাদিত রাজা প্রোটিয়ারা।

    এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের ১৩-তম ওভারে বাভুমার মামুলি ক্যাচ ফেলে দেন আজ উইকেটকিপার হিসেবে নামা জশ ইংলিস; সেখান থেকেই শুরু অস্ট্রেলিয়ার বাজে ফিল্ডিং। নিজের প্রথম ওভারেই ১৯ রানে থাকা বাভুমার উইকেটটা তো জাম্পা পেলেনই না; উল্টো সেখান থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা শতরানের ওপেনিং জুটি পেয়ে যায় ১৮ ওভারেই। জাম্পা না পারলেও আরেক স্পিনার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলই পরে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ককে থামান ৩৫ রানে। ভ্যান ডার ডুসেনকে সঙ্গী করে অবশ্য ফিফটি পাওয়া ডি কক তখন থেকেই দিচ্ছেন বড় কিছুর ইঙ্গিত। দারুণ ফর্মে থাকা ডুসেন ২৬ রানেই জাম্পার শিকার হয়ে থামলেও ডি কক তাই ছিলেন অবিচল।

    উইকেটে এসে আরেক ফর্মে থাকা ব্যাটার এইডেন মার্করাম আপন ছন্দে খেলতে থাকলে ডি কক হয়ে ওঠেন এক অর্থে দুর্দমনীয়। ১ রানে থাকা মার্করামের সহজ এক ফিরতি ক্যাচ ফেলে দেওয়ার জন্য কামিন্সকেও অবশ্য সেটার জন্য ধন্যবাদ দিতেই পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। এক বল পরেই কামিন্সকে দুর্দান্ত এক ছয় মেরে ৯০ বলে ডি কক পেয়ে যান তানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। পুরো ইনিংস জুড়ে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করা ম্যাক্সওয়েলের শিকার হয়ে এর পরপরই থামতে হয় ডি কককে, ১০৬ বলে ১০৯ রান শেষে।

    তবে এরপর অস্ট্রেলিয়ার ভুলের মাশুল দিতে হয় মার্করামের বদৌলতে। বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ার পরের ম্যাচেই মার্করাম ফিফটি পেয়ে যান ৪১ বলে। পরের ওভারে এসে অবশ্য নিজের শাপমোচনের কাজটা সারেন কামিন্স নিজেই, ৪৪ বলে ৫৬ রানের ইনিংস শেষে মার্করামকে থামিয়ে। এরপরও কামিন্সের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে ৪৯-তম ওভার। প্রথম বলেই হাত খুলে খেলতে থাকা মিলার বাউন্সারে ব্যাটে-বলে করতে না পারলেও সুযোগ লুফে নিতে পারেননি স্টার্ক; চতুর্থ বলে কাভারে এরপর ইয়ানসেনের তুলে দেওয়া যেই ক্যাচটা স্টয়নিস ফেলে দিলেন তা হয়ত অস্ট্রেলিয়ার শিবিরের জন্য ক্ষমার অযোগ্য। শেষ ওভারে স্টার্ক দুজনকেই ফেরালেও ইয়ানসেনের ২৬ রান, মিলারের ১৭ রানে দক্ষিণ আফ্রিকা শেষমেশ তিনশো পেরিয়ে তুলেছে ৩১১ রান।