• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩
  • " />

     

    ২০০৭ এর চমক, নো বল এবং যেভাবে শুরু বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথ

    ২০০৭ এর চমক, নো বল এবং যেভাবে শুরু বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথ    

    ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসরে আরও একবার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। সাম্প্রতিক সময়ে এক ধরনের ক্রিকেটীয় দ্বৈরথই তৈরি হয়েছে দুই দেশের মাঝে। চলুন এক নজরে দেখে আসা যাক এই দ্বৈরথের উৎপত্তি ও স্মরণীয় মুহূর্তগুলো- 

    পোর্ট অব স্পেন, ২০০৭

    ওয়েস্ট ইন্ডিজে হওয়া ২০০৭ বিশ্বকাপে গাঙ্গুলি, শেবাগ, টেন্ডুলকার, দ্রাবিড়, আগারকার, জহির খানদের নিয়ে গড়া ভারতের অল-স্টার একাদশকে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের তরুণ এক দল। পোর্ট অব স্পেনের এই পরাজয়েই পরে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে ভারত। এবং এই ভরাডুবির জন্যই বিশ্বকাপের পর বড়সড় ধারা-বদল আসে ভারত ক্রিকেটে। নেতৃত্বে আসেন ধোনি। পরের ছয় বছরে একটি করে বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শিরোপা জেতে ভারত। আপনি চাইলে বলতে পারেন, পোর্ট অব স্পেনের সেই ম্যাচের কারণেই শুরু হয়েছিল ধোনি-যুগের। 

    ক্রিকেট ডিকশনারিতে ২০০৭-এর সেই ম্যাচ ঠুকা হয়েছে ‘অঘটন’ হিসেবেই। কিন্তু পরে যতবারই মুখোমুখি হয়েছে এই দুই প্রতিবেশী দেশ, প্রতিবারই অন্তত একবার হলেও এসেছে এই ম্যাচের প্রসঙ্গ। ২০১১ বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের আগেও সংবাদ সম্মেলনে একটি বড় সময় এই ম্যাচ নিয়ে কথা বলেছেন দুই অধিনায়ক এম এস ধোনি ও সাকিব আল হাসান। তবে এই ম্যাচকে ঠিক রাইভালরির শুরু বলা যাবে না। 

    মেলবোর্নে আম্পায়ারিং বিতর্ক 

    বাংলাদেশ-ভারত রাইভালরির শুরুটা আসলে ২০১৫ বিশ্বকাপে। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বে পা রাখে টাইগাররা। কোয়ার্টারে তাদের প্রতিপক্ষ? তৎকালীন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারত। 

    খাতায়-কলমে এই দুই দলের মাঝে বিস্তর ফারাক থাকলেও বাংলাদেশ আসলে সবসময়ই বিশ্বাস করেছিল, তাদের পক্ষে এই ম্যাচ জেতা সম্ভব। এই মনোভাব নিয়েই ম্যাচ শুরু করা টাইগাররা ভারতের ইন-ফর্ম টপ অর্ডার- শেখর ধাওয়ান, ভিরাট কোহলি ও আজিঙ্কা রাহানেকে হাটে ফেরত পাঠায় স্বল্প রানেই। 

    এরপর রোহিত শর্মা ও সুরেশ রায়নার এক বড় জুটি ভারতকে রক্ষা করে। কিন্তু রায়না তার ইনিংসের শুরুতেই একটি ক্লোজ এলবিডব্লিউ উইকেট থেকে রক্ষা পান। রোহিত লাইফ পান ৯০ রানে, যখন রুবেলের বলে ডিপ-উইকেটে তার ক্যাচ ধরা হলেও আম্পায়ার হাত তুলে দেখান নো বল। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, কোমরের নিচ থেকেই বলটি খেলেছিলেন এগিয়ে আসা রোহিত শর্মা। ৪০তম ওভারে এই ঘটনা ঘটার সময় ভারতের রান ছিল ১৯৭। ভারত শেষ পর্যন্ত ইনিংস শেষ করে ৩০২ রানে, রোহিত করেন ১৩৭। 

    জবাবে বাংলাদেশ ব্যাট হাতে ঠিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে না পারলেও তাদের তিন নাম্বার ব্যাটার, আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আউট হন বিতর্কিতভাবে। তার ক্যাচ ধরার সময় শেখর ধাওয়ানের পা বাউন্ডারি লাইন স্পর্শ করেছিল বলেই দাবি অনেক টাইগার সমর্থকের।   

    এই ম্যাচ নিয়ে পরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বাংলাদেশ শিবিরের সবাই। তৎকালীন আইসিসি প্রেসিডেন্ট মুস্তফা কামাল সরাসরি ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দাবি তুলেন। বলেন, এ ম্যাচ পূর্ব নির্ধারিত ছিল। নিজের পদ থেকে সড়ে দাঁড়ানোর হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, “ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারব না আমি”। আইসিসি= ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল। বুঝতে পেরেছেন? 

    বাংলাদেশের গণমাধ্যমও এই ম্যাচকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। পরদিন দৈনিক যুগান্তরের শিরোনাম ছিল “আম্পায়ারদের হাতে ‘খুন’ লাল-সবুজের স্বপ্ন”।  ঢাকা ট্রিবিউনের শিরোনাম ছিল, “বিতর্কিত সিদ্ধান্তে টাইগারদের পতন”। 

    এই ম্যাচের পর থেকেই মূলত ভারতকে রাইভাল হিসেবে দেখতে শুরু করে বাংলাদেশী সমর্থকরা। এর কয়েক মাস পরই বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে আসে ভারত। যাতে ২-১ ব্যবধানে জয় পায় টাইগাররা, নতুন তারকা হিসেবে উত্থান হয় মুস্তাফিজুর রহমানের। 

    দুই বলে তিন রানের আফসোস 

    বড় টুর্নামেন্টে ১৫ বিশ্বকাপের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ পায় বাংলাদেশ পরের বছরই। ভারতের মাটিতে হওয়া সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে বিদায় করে দেওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিল টাইগাররা। কিন্তু শেষ তিন বলের ট্র্যাজেডিতে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। 

    ১৮’র দুই ফাইনাল 

    ২০১৮ সালে দুটি বড় ফাইনালে মুখোমুখি হয় ভারত ও বাংলাদেশ। প্রথমে শ্রীলঙ্কায় হওয়া নিদহাস ট্রফির ফাইনাল। যেখানে বাংলাদেশের দেওয়া ১৬৬ রানের লক্ষ্যে শেষ দুই ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৩৪ রান। ম্যাচ তখন পুরোপুরি বাংলাদেশের হাতে। কিন্তু রুবেল হোসেনের করা ১৯তম ওভারে ২২ রান নিয়ে নেন ভারতের সাত নাম্বার ব্যাটার দীনেশ কার্তিক। শেষ ওভারে ১২ রান ডিফেন্ড করতে আসেন পার্ট-টাইমার সৌম্য সরকার। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি প্রথম ৫ বলে দেন মাত্র ৭ রান। কিন্তু শেষ বলে আবার ছক্কা মেরে ভারতে জেতান কার্তিক। 

    পরের ফাইনালটি এশিয়া কাপে। ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশের দেওয়া ২২৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করা কখনোই কঠিন হওয়ার কথা ছিল না ভারতের। কিন্তু সেই ম্যাচও গড়ায় শেষ বল পর্যন্ত। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি নিয়ে খোরাতে খোরাতে  শেষ বলে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন কেদার যাদব। 

    ২২-এর ভেজা আউটফিল্ড 

    ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরেকটি বিতর্কিত ও দুর্ভাগ্যজনক পরাজয়ের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। ভারতের দেওয়া ১৮৫ রানে লক্ষ্যে দুর্দান্ত শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সপ্তম ওভারে বৃষ্টি নামার আগে বিনা উইকেটে বোর্ডে ৬৬ রান তুলে টাইগাররা। বৃষ্টির পর ডিএল মেথডে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ৯ ওভারে ৮৫, হাতে ১০ উইকেট। কিন্তু খেলার শুরু হওয়ার দ্বিতীয় বলেই ভেজা উইকেটে স্লিপ খেয়ে পড়ে যান লিটন। হন রান-আউট। শেষ পর্যন্ত পাঁচ রানে জয় পায় ভারত। 

    ম্যাচের পর বিসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সাকিব আম্পায়ারদের অনুরোধ করেছিলেন ম্যাচ একটু পরে শুরু করতে। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে ভেজা আউটফিল্ড নিয়েই শুরু হয়েছিল ম্যাচ।   

    সেবছর আবার বাংলাদেশ সফরে আসে ভারত। সেই সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয় পায় স্বাগতিকরা। কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া এশিয়া কাপেও রোহিত শর্মার দলকে হারিয়েছে টাইগাররা। ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ চার ম্যাচের তিনটিতেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে ১৯ বিশ্বকাপের এই ম্যাচেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে হেরেছিল টাইগাররা। 

    দুই দলের দেখায় এখনো ভারত অনেকটা এগিয়ে। তবে ইতিহাস বলছে, বাংলাদেশ হারলেও ম্যাচ কয়েকবারই গেছে শেষ পর্যন্ত, আর মাঠে ও মাঠের বাইরে ছড়িয়েছে বিতর্ক নিয়ে উত্তাপ। এবারও কি তেমন কিছু হবে?