• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩
  • " />

     

    প্রোটিয়া-ফায়ার নিভিয়ে ডাচদের রূপকথা রচনা

    প্রোটিয়া-ফায়ার নিভিয়ে ডাচদের রূপকথা রচনা    

    ২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, দক্ষিণ আফ্রিকা-নেদারল্যান্ডস (টস-দক্ষিণ আফ্রিকা/বোলিং)
    নেদারল্যান্ডস - ২৪৫/৮, ৪৩(৪৩) ওভার (এডওয়ার্ডস ৭৮*, ভ্যান ডার মারওয়া ২৯, আরিয়ান ২৩*, ইয়ানসেন ২/২৭, রাবাদা ২/৫৬, এনগিডি ২/৫৭)
    দক্ষিণ আফ্রিকা - ২০৭, ৪২.৫(৪৩) ওভার (মিলার ৪৩, মহারাজ ৪০, ক্লাসেন ২৮, ভ্যান বিক ৩/৬০, মারওয়া ২/৩৪, ডি লিড ২/৩৬)
    ফলাফল - নেদারল্যান্ডস ৩৮রানে জয়ী


     

    উড়তে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাটিতে নামিয়ে আনল নেদারল্যান্ডস। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের বিদায় দেওয়ার পর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপেও প্রোটিয়াদের জয়ের ধারা ছিন্ন করল ডাচরা। অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের অধিনায়কোচিত ইনিংস, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন অলরাউন্ডার রোলফ ভ্যান ডার মারওয়ার দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের সাথে ডাচদের সম্মিলিত বোলিং প্রচেষ্টায় বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে আরও একটি অঘটনের জন্ম দিল ডাচরা।

    ৪৩ ওভারে ২৪৬ রানের লক্ষ্যে শুরু থেকেই অধিনায়কত্ব দিয়ে নজড় কাড়েন উইকেটকিপার এডওয়ার্ডস। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে স্পিন দিয়ে দুই ওপেনারকে বিরক্ত করে ধৈর্যের পরীক্ষা নিলে তাতে মনোযোগ ধরে রাখতে পারেনি কোনও ওপেনারই। অফ স্পিনার কলিন অ্যাকারম্যানের বলে রিভার্স সুইপ করতে গেলে সংযোগ না হওয়ায় এডওয়ার্ডসের সামনে এসে লুফে নেওয়া সহজ ক্যাচে ফেরেন কুইন্টন ডি কক। কিছুক্ষণ পরেই ভ্যান ডার মারওয়ার দারুণ আর্ম বল পড়তে না পেরে স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন টেম্বা বাভুমা। স্পিনের বদৌলতে ওপেনারদের ফেরানোর পর উইকেটের মিছিলে যোগ দিয়ে ডাচদের আত্মবিশ্বাস যোগান পেসার ভ্যান মিকেরেন। দারুণ এক ক্রস-সিম বলে এইডেন মার্করামের স্টাম্প উপড়ে। তবে তার পরের ওভারেই রিভার্স সুইপ করে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে ভ্যান ডার মারওয়ার শিকার হয়ে ভ্যান ডার ডুসেন যেভাবে ফিরলেন তা যেন দক্ষিণ আফ্রিকার চোকার তকমার কথাই মনে করিয়ে দেয় একবার।

    সেখান থেকে ম্যাচের খেই হারিয়ে বসে ১৯-তম ওভারে ফাইন লেগে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ২৮ রানে ফেরেন লড়াই করতে থাকা হাইনরিখ ক্লাসেন। ২৫ বলে ৯ রান করে এরপর মার্কো ইয়ানসেনও মিকেরেনের আর একটি ক্রস-সিমে বোল্ড হলে মিলার হয়ে থাকেন একমাত্র ভরসা। মাঝে ভ্যান ডার মারওয়ার বলে আকাশে বল ভাসিয়েও বাস ডি লিডের গাফিলতিতে বেঁচে যান মিলার। সেটার সুযোগ নিতে না পেরে লোগান ভ্যান বিকের বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে স্টাম্প খুইয়ে ৪৩ রানে মিলার ফিরলে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে ডাচরা।

    সেখান থেকে জেরাল্ড কোটজিয়া ২২ রান করে ম্যাচের মোড় বদলানোর চেষ্টা করলেও সফল হননি। রাবাদার মারমুখী ব্যাটিং এরপর অঙ্কুরে বিনষ্ট হলেও শেষদিকে লুঙ্গি এনগিডিকে নিয়ে ডাচদের জয়টা প্রলম্বিত করেছেন কেশব মহারাজ। একের পর এক আধা-সুযোগ দিয়ে বেঁচে গেলেও এক বল বাকি থাকতে ৪০ রান উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ঠিকই থামেন মহারাজ। সেই সাথে এই শতাব্দির বিশ্বকাপের ইতিহাসের সম্ভবত সবচেয়ে বড় অঘটনের গল্প লিখে ফেলে ডাচরা।

    এর আগে দশ ওভারের মধ্যেই দুই ওপেনার বিক্রমজিত সিং ও ম্যাক্স ও’ডাউডকে খুইয়ে মাত্র ৩২ রান তুলতে পারে ডাচরা। রাবাদা-কোয়েটজিদের তোপে সুবিধা করতে না পেরে পরের দশ ওভারের মধ্যে বাস ডি লিড, কলিন অ্যাকারম্যানরা ফেরার পর লড়তে থাকা সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট ১৯ রানে ফিরলে চিন্তায় পড়ে যায় ডাচরা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবার অঘটন ঘটানোর পর প্রোটিয়ারা যেন তাদের বিপক্ষে প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যেই নেমেছিল।

    এমনকি ১৫ রানে জীবন পাওয়া তেজা নিদামানুরুকেও সুবিধা করার কোনও সুযোগ দেননি প্রোটিয়া পেসাররা। কঠোর বিপদের মধ্যেই হাল ছাড়তে নারাজ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস লড়াই চালিয়ে যান। লোগান ভ্যান বিক মাঝে ফিরলে এডওয়ার্ডসের সাথে যোগ দিয়ে রোলফ ভ্যান ডার মারওয়া কোটজিয়ার ৩৫-তম ওভারে ২ চার, ১ ছয়ে ১৫ রান তুললে সেখান থেকে আত্মবিশ্বাস পায় তারা। সেই আত্মবিশ্বাসের তরীতে বিপদ পাড়ি দিয়ে ৫৩ বলে ফিফটি পেয়ে যান এডওয়ার্ডস। পরে ১৯ বলে ২৯ রানের দারুণ ক্যামিও খেলে ভ্যান ডার মারওয়া থামলেও থামেনই এডওয়ার্ডস। উল্টো তার সাথে যোগ দিয়ে আরিয়ান দত্তও খেলেন দারুণ এক ক্যামিও। ৯ বলে ২৩* রান করে রাবাদা-কোটজিয়া-এনগিডির সাথে ছেড়ে কথা বলেননি দত্ত। সেই সাথে এডওয়ার্ডস ৬৯ বলে ৭৮* রান করে অপরাজিত থাকলে ডাচরা পেয়ে যায় লড়াইয়ের রসদ। ৮২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে টেনে তুলে অধিনায়কের লড়াইয়ে পাওয়া সেই রসদ নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকাকে থমকে দিয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসে কোনও টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম জয় পেয়ে যায় ডাচরা।