• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩
  • " />

     

    কোহলির রাজসিক সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের টানা তৃতীয় পরাজয়

    কোহলির রাজসিক সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের টানা তৃতীয় পরাজয়    

    ২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, ভারত-বাংলাদেশ (টস-বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
    বাংলাদেশ - ২৫৬/৮, ৫০ ওভার (লিটন ৬৬, তামিম ৫১, মাহমুদউল্লাহ ৪৬, জাদেজা ২/৩৮, বুমরাহ ২/৪১, সিরাজ ২/৬০)
    ভারত - ২৬১/৩, ৪১.৩ ওভার (কোহলি ১০৩*, গিল ৫৩, রোহিত ৪৮, মিরাজ ২/৪৭, হাসান ১/৬৫ )
    ফলাফল - ভারত ৭ উইকেটে জয়ী
     


     

    ঘরের মাঠে ভারত যেন আবারও অপ্রতিরোধ্য। টানা চতুর্থ জয় তো পেলই, সেটাও পেল বাংলাদেশকে রীতিমত নাকানিচুবানি খাইয়ে। ব্যাটিং উইকেটে প্রথমে ব্যাট করেও বাংলাদেশের ‘সম্মানজনক’ সংগ্রহ যে ধোপে টিকবে না সেটা আঁচ করা গিয়েছিল; তবে সেই রান তাড়ায় ভারত যেন নিজেদের শক্তিমত্তার ছাপ রেখে গেল পদে পদে।

    ২৫৭ রানের লক্ষ্যে রীতিমত নেটে ব্যাট করার ঢঙে আগাচ্ছিলেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। অন্য প্রান্তে শুবমান গিল রয়েসয়ে খেললেও পেসারদের এক হাত নিয়ে দারুণ সব পুল, হুক শটে বাংলাদেশের বোলারদের লেংথের ভুলটা যেমন বারবার দেখালেন, তেমনি বাংলাদেশি ব্যাটারদেরও যেন এই পিচে ব্যাট করার তরিকাটা হাতে-কলমেই শেখালেন। তবে তার প্রিয় পুল শটেই হাসান মাহমুদের বলে তাওহিদ হৃদয়ের একেবারে দড়ির কোণে দাঁড়ানো ক্যাচে থামেন রোহিত, ৪০ বলে ৪৮ রান করে। অবশ্য ওই ওভারেই উইকেটে মাত্র আসা ভিরাট কোহলিকে টানা দুই বলে স্বাগতম জানিয়ে বাংলাদেশের সব সম্ভাবনাও যেন মাটিচাপা দিয়ে দেন হাসান। শুরুর জন্য এমন ফ্রি টিকিট পেয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার মানুষ তো আর কোহলি নন। যা ভাবা তাই, এক প্রান্তে কোহলি সাবলীলভাবে খেলতে থাকলে নাসুম আহমেদের ওপর চড়াও হয়ে গিলও পেয়ে যান নিজের প্রথম বিশ্বকাপ ফিফটি। মেহেদী হাসান মিরাজকেও একই কায়দায় মোকাবেলা করতে গেলে অবশ্য বাউন্ডারিতে মাহমুদউল্লাহর দারুণ ক্যাচে থামতে হয় ৫৫ বলে ৫৩ রান করা গিলকে।

    শ্রেয়াস আইয়ারকে সঙ্গী করে যথারীতি আসরের তৃতীয় ফিফটি পেয়ে যান কোহলি। মিরাজের ওপর চড়াও হতে গিয়ে একই জায়গায় মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দিয়ে শ্রেয়াস ১৯ রানে থামলেও থামেননি কোহলি। লোকেশ রাহুলকে সঙ্গী করে পরে সেঞ্চুরি পাবেন কি না সেটা নিয়েই বরং রোমাঞ্চ ছড়িয়েছেন কোহলি। কোহলির সেঞ্চুরি আটকানোর বহু চেষ্টা করেও সফল হয়নি বাংলাদেশ। ২০১১ বিশ্বকাপের পর আবারও ২০২৩ সালে এসে নাসুমকে ছয় মেরে সেঞ্চুরি দিয়েই ম্যাচ শেষ করেছেন কোহলি।

    দিনের প্রথমার্ধে ব্যাটিং নেওয়ার পর বাংলাদেশের দুই ওপেনারের শুরুটাই হয় সাবধানী। তবে উইকেট পড়ে ফেলার পর ধীরে ধীরে খোলস থেকে বের হন দুজনেই। মাঝে হার্দিক পান্ডিয়াকে লিটন টানা দুই চার মারলে দ্বিতীয় চারের শটটা ঠেকাতে গিয়েই ইনজুরিতে পড়েন ভারতের এই অলরাউন্ডার। সেখান থেকেই যেন আত্মবিশ্বাসটা ফির পায় দুই ওপেনার। পরে ওভারের শার্দুল ঠাকুরের টানা তিন বলে ছয়, চার ও ছয় মারেন তামিম, যার মধ্যে বেরিয়ে আসা উড়িয়ে মারা চারটা আরেক তামিমের কথাই মনে করিয়ে দেয়। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে কোনও উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশ ৬৩ রান তুলে ফেললে তানজিদ তামিম নিজের প্রথম বিশ্বকাপ ফিফটি পেয়ে যান ৪১ বলে। তবে ইনিংস লম্বা করতে না পেরে কুলদীপের করা পরের ওভারেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে তামিম ফেরেন ৪৩ বলে ৫১ রানে।

    সেখান থেকে খেই হারিয়ে বসে বাংলাদেশের ইনিংস। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ওপেনিং জুটির রেকর্ডের (৯৩) পর সেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ৮ রানে ফেরেন জাদেজার শিকার হয়ে। মাঝে ৬২ বলে লিটন আসরে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি পেয়ে গেলেও চারে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ একেবারেই সুবিধা করতে না পেরে ১৩ বলে ৩ রানে মোহাম্মদ সিরাজের শিকার হয়ে ফেরেন। পাঁচে নেমে হৃদয়ও ডট গুণতে থাকলে চাপে পড়ে জাদেজাকে আক্রমণ করতে গিয়ে ৮২ বলে ৬৬ রানে থামেন লিটন।

    উইকেটে থিতু লিটনের বিদায়ে বাংলাদেশের ইনিংসটা আরও একবার মুখ থুবড়ে পড়ার শঙ্কা জাগে। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম এসে ইনিংস মেরামতে চেষ্টা করলেও হৃদয় একেবারেই সুবিধা করতে না পারায় সেই অর্থে হাত খুলতে পারেননি মুশফিকও। লিটনের বিদায়ের দশ ওভারের মাথায় শার্দুল ঠাকুরের শিকার হয়ে ৩৫ বলে মাত্র ১৬ রান করে থামেন হৃদয়। ওই সময়টায় বাংলাদেশ তুলতে পারে মোটে ৪৪ রান। মাঝে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডে বিশ্বকাপে মুশফিক ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেও উইকেটে সময় ব্যয় করে তিনিও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। অবশ্য ৪৬ বলে ৩৮ রানে তার ফেরার বলটায় বুমরাহর চেয়ে পয়েন্টে জাদেজার দুর্দান্ত ক্যাচটাকেই ধন্যবাদ দিবে ভারত। পরে নাসুম আহমেদও তেমন একটা সুবিধা করতে না পেরে ১৪ রান করে সিরাজের বাউন্সারে ফিরলে শেষের দিকে লড়াইটা একাই চালাতে হয় মাহমুদউল্লাহকে। নিউজিল্যান্ড ম্যাচের মত এদিনও শেষদিকে তাকে সিঙ্গেল ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। নিয়মিত বাউন্ডারি তুলে নিয়ে তবুও বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রেখে বুমরাহর করা শেষ ওভারে দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে স্টাম্প খুইয়ে তিনি ফিরেছিলেন ৩৬ বলে ৪৬ রানে। সেই প্রচেষ্টার পর শরিফুল ইসলামের শেষ বলের ছয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৫৬ রানের রসদ।