• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩
  • " />

     

    পাকিস্তান-জজু কাটিয়ে আফগানদের আরও একটি ঐতিহাসিক জয়

    পাকিস্তান-জজু কাটিয়ে আফগানদের আরও একটি ঐতিহাসিক জয়    

    ২০২৩ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব, পাকিস্তান-আফগানিস্তান (টস-পাকিস্তান/ব্যাটিং)
    পাকিস্তান - ২৮২/৭, ৫০ ওভার (বাবর ৭৪, শফিক ৫৮, ইফতিখার ৪০, নূর ৩/৪৯, নাভিন ২/৫২, নবী ১/৩১)
    আফগানিস্তান - ২৮৬/২, ৪৯ ওভার (ইব্রাহিম ৮৭, রহমত ৭৭*, গুরবাজ ৬৫, হাসান ১/৪৪, আফ্রিদি ১/৫৮)
    ফলাফল - আফগানিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী


     


    পাকিস্তানের বিপক্ষে এর আগে বিশ্বকাপ তো দূরে থাক, ওয়ানডেই জিতেনি আফগানিস্তান। সেই সাথে তাদের সাথে আফগানিস্তানের তীরে এসে বহুবার তরী ডুবানো নিয়েও কথা কম হয়নি। সেসবকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে পাকিস্তানকে ধরাশায়ী করে আসরে নিজেদের দ্বিতীয় জয় পেয়ে গেল আফগানরা।

    ২৮৩ রানের লক্ষ্যটা আফগানদের জন্য চেন্নাইয়ে বড়ই হয়ে গিয়েছে বলে ধারাভাষ্য কক্ষেও উঠেছিল রব। অথচ দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ-ইব্রাহিম জাদরান যেন অন্য উইকেটেই খেলতে নেমেছিলেন বলে মনে হল। শুরুটা রয়েসয়ে পার করে দেওয়ার পর নিজেদের মেলে ধরে দুজনে মিলে দলীয় শতরান পূর্ণ করে ফেলেন ১৬ ওভারেই! এর আগের ওভারে ৫৪ বলে ইব্রাহিম ফিফটি পেয়ে গেলে এই ওভারে গুরবাজ ফিফটি পেয়ে যান ৩৮ বলে। ফিফটির পরেই গুরবাজ আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিলে আক্রমণে ফেরানো হয় শাহীন আফ্রিদিকে। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে ২২-তম ওভারে তিনি ভাঙেন ১৩০ রানের ওপেনিং জুটি। কিছুটা খাটো লেংথের বল টেনে মারতে গিয়ে আকাশে ভাসিয়ে গুরবাজ ফেরেন ৫৩ বলে ৬৫ রান শেষে। 

    তবে রহমত শাহকে সঙ্গী করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান ইব্রাহিম। পাকিস্তানের বাজে ফিল্ডিং, সেই সাথে নিজেদের দারুণ রানিং বিটউইন দ্য উইকেট- দুইয়ে মিলে পাকিস্তানকে নাজেহাল করে ফেলে আফগানরা। প্রথম আফগান হিসেবে বিশ্বকাপ সেঞ্চুরির খুব কাছাকাছি এসেও অবশ্য ৩৪-তম ওভারে হাসান আলীর শিকার হয়ে ইব্রাহিম ১১৩ বলে ৮৭ রান শেষে থামলেও আশা হারায়নি আফগানরা।

    অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদিকে নিয়ে এরপর কাজটা ক্রমান্বয়ে সহজ করে তুলেন রহমত। কোনও সুযোগ না দিয়েই বল প্রতি রান রেট বজায় রেখেই ইনিংস এগিয়ে নিয়ে গেলে অদ্ভুত এক রিভিউ নেওয়া পাকিস্তানের অস্থিরতাটাও টের পাওয়া যায় বেশ। সুযোগ বুঝে আসরে নিজের প্রথম ফিফটি তুলে নেন রহমত, শহীদিও স্পিনারদের লক্ষ্য বানিয়ে বাউন্ডারি বের করতে থাকেন। ৪৯-তম ওভারের শেষ বলে অধিনায়কের ব্যাট থেকেই বাউন্ডারি এলে আফগানরাও তাই পেয়ে যায় ঐতিহাসিক জয়। রহমতের ৮৪ বলে ৭৭* রান ও শহীদির ৪৫ বলে ৪৮* রানে এবার তাই আর পাকিস্তান-জুজু পেয়ে বসেনি আফগানদের।

    চীপকে টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরুটা ভালই করেছিল পাকিস্তান। প্রথম পাওয়ারপ্লেতেই আবদুল্লাহ শফিক-ইমাম উল হক জুটি তুলে ফেলে ৫৬ রান। তবে পাওয়ারপ্লের পরের প্রথম বলেই নাভিন-উল-হকের শিকার হয়ে ১৭ রানে থামেন ইমাম। আক্রমণে এসে সেখান থেকেই মোহাম্মদ নবী উইকেট না পেলেও দারুণ এক স্পেলে চাপ তৈরি করেন, রশিদ ও অভিষিক্ত নূর আহমেদরা সেই চাপটাই ধরে রাখেন পরে।

    মাঝে ৫৯ বলে শফিক নিজের ফিফটি পেয়ে গেলেও স্পিনারদের সেই চাপ থেকেই থামতে হয় শফিককে। তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ৭৫ বলে ৫৮ রানে থামিয়ে নূর পেয়ে যান নিজের প্রথম ওয়ানডে উইকেট। উইকেটে এসে মুজিবকে ডিপ মিড উইকেটের ওপর উড়িয়ে মেরে শুরু থেকেই মোহাম্মদ রিজওয়ান হাত খোলার ইঙ্গিত দিলে পরের ওভারে নূর তাকে থামান সেই মুজিবের ক্যাচেই, ৮ রানে।

    মাঝের সেই ধাক্কা সামলে বাবর আজম ধরে রাখেন এক প্রান্ত। তবে আফগানরা হাল না ছাড়ায় পাকিস্তানের জন্য গিয়ার পালটানো দুষ্কর হয়ে উঠছিল। ২৫-তম ওভারে রিজওয়ান যখন ফিরলেন ওই ওভারের পর পাকিস্তান প্রথম বাউন্ডারি পায় ৩১.১ ওভারে গিয়ে। হাত খোলার চেষ্টা করার সেই সুযোগটাই লুফে নিয়ে দুর্দান্ত বল করা নবী থামান সাউদ শাকিলকে, ২৫ রানে। ৬৯ বলে এরপর বাবর নিজের ৩০-তম ওয়ানডে ফিফটি তুলে নিয়ে হাত খুলতে গেলে তারও হয় একই পরিণতি। ৪২-তম ওভারে নূরকে দারুণ এক ছয় মারার তিন বল পর এক্সট্রা কাভারে সরাসরি ক্যাচ তুলে দিয়ে বাবর থামেন ৯২ বলে ৭৪ রান শেষে।

    তবে আফগানদের প্রচেষ্টা একেবারেই ভেস্তে যায় শেষের দিকে ইফতিখার-শাদাব জুটির মারমুখী ব্যাটিংয়ে। নাভিন-ওমরযাইদের ওপর চড়াও হয়ে দুজনে মিলে ৪৫ বলে তোলেন ৭৬ রান! শেষ ওভারে সেই নাভিনের বলেই ডিপ এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ তুলে দিয়ে ২৭ বলে ৪০ রানে ইফতিখার থামলে ওই ওভারের শেষে বলে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ৩৮ বলে ৪০ রান করে মাঠ ছাড়েন শাদাব। শেষ ৬ ওভারে ৬৭ রান তুলে পাকিস্তান তাই পায় ২৮২ রানের রসদ।