• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩
  • " />

     

    মার্কো ইয়ানসেন : ব্যাটার থেকে যেভাবে বোলার হলেন

    মার্কো ইয়ানসেন : ব্যাটার থেকে যেভাবে বোলার হলেন    

    সময়টা ২০১৮ সাল। চলছিল ভারতের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর।  নেট সেশনে সেবার বল করেছিলেন জমজ দুই ভাই। মার্কো ইয়ানসেন ও ডুয়ান ইয়ানসেন। এই দুই প্রোটিয়া  জমজের একজন আলাদা করে নজর কেড়েছিলেন বিরাট কোহলির,  প্রশংসা পেয়েছিলেন মার্কো ইয়ানসেন। সেই মার্কোই এবার বিশ্বকাপে আলো ছড়াচ্ছেন প্রোটিয়াদের হয়ে।

     

    মার্কোর উচ্চতা ছয় ফুট ৮ ইঞ্চি, করেন বাঁহাতি পেস। আর সাত নম্বরে পজিশনে মারকুটে ব্যাটিংটা তো আছেই।  ৮ ম্যাচ খেলে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। এই ১৭ উইকেটের ১২টিই নিয়েছেন পাওয়ারপ্লেতে নতুন বলে। এবারের বিশ্বকাপে সাত নম্বর পজিশনে সর্বোচ্চ রানও তার, ১৫৭। কমপক্ষে পাঁচ ম্যাচ খেলা ব্যাটারদের মধ্যে মার্কোর স্ট্রাইকরেট দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ১১১.৩৪। 

     

    বোলিং অলরাউন্ডার হলেও ব্যাটিংটাই বেশি পছন্দ মার্কোর। শুরুটাও করেছিলেন ব্যাটার হিসেবেই। মার্কো ও ডুয়ানের প্রথম ক্রিকেট কোচ ছিলেন তাদের বাবা কুস ইয়ানসেন। পচেফস্ট্রুমে তাদের বাড়িতেই কুসের অধীনেই চলত ক্রিকেট কোচিং। যিনি পেশাদার রাগবির সাথে ক্রিকেটও খেলেছেন। 

    মার্কো-ডুয়ান দুজনই বাঁহাতি পেসার, উচ্চতাও প্রায় একই। স্কুল ক্রিকেটেও খেলতেন একই সাথে। সেখানে গতির ঝড় তুলে দুজনই ডাক পান ওয়ান্ডারার্সে ভারতের নেটে বোলিংয়ের। সেই নেট সেশনে মার্কোর করা আউট সুইংগারে টানা তিনবার বিট হয়েছিলেন তৎকালীন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি।  সেদিন নেটে এতটাই ভালো বোলিং করেছিলেন মার্কো, কোহলিও বলেছিলেন ‘ওয়েল বোল্ড’।

     

    নেট সেশনের পর দুই ভাই মিলে একটা ছবিও তুলে রেখেছিলেন কোহলির সাথে স্মৃতি হিসেবে।  এবং পরেরদিনই দুই জমজকে আবার নেটে বোলিংয়ের জন্য ডেকেছিলেন কোহলি। কোহলিকে নেটে বল করার তিন বছর পর বক্সিং ডে টেস্টে নিজের অভিষেকে কোহলির উইকেট নিয়েছিলেন মার্কো,পেয়েছিলেন পাঁচ উইকেটও। 

    টেস্ট দলে ডাকও পেয়েছিলেন আচমকাই। অভিষেক টেস্টের আগে খেলেছিলেন মাত্র ১৪টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ। সেই ম্যাচগুলোতে গতি আর কন্ট্রোল দিয়েই নজর কেড়ে সুযোগ পান জাতীয় দলে। মজার ব্যাপার হচ্ছে তার তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই অভিষেকই ভারতের বিপক্ষে। জিতেছেন ২০২২ সালের আইসিসির সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কারও। 

     

    তবে আন্তর্জাতিক অভিষেকের আগেই খেলেছেন আইপিএলে। ২০২১ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলেছিলেন কেবল দুই ম্যাচ। শেষ দুই মৌসুম খেলেছেন অবশ্য সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সিতে। সেবার ভিত্তিমূল্য ছিল ২০ লাখ রুপি। 

    মার্কো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থিতু হলেও বয়সে ১৫ মিনিটের বড়  ডুয়ান এখনো খেলছেন ঘরোয়া সার্কিটেই। অবশ্য গত আইপিএলে খেলেছেন মার্কোর সাবেক দল মুম্বাইয়ের হয়েই। দুজন বড় হয়েছেন ক্রীড়াপ্রেমী পরিবারে। যে কারণে ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে বেগ পেতে হয়নি তাদের। 

    তবে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে লোয়ার ব্যাকের চোটে ভুগেছেন মার্কো। বয়সের তুলনায় শারীরিক উচ্চতা বেশি হওয়াতেই সেমি ফ্র্যাকচারও ছিল লোয়ার ব্যাকে। মার্কো সেসব চোট কাটিয়ে উঠেছেন, খেলেছেন চোট ম্যানেজ করেই। সেজন্যই মার্কোকে নিয়ে একটু বাড়তি সচেতন দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যানেজমেন্ট। বিশ্বকাপের আগে ২০ মাসে তাকে খেলিয়েছে মাত্র ১৪ ওয়ানডেতে। 

    কারণ মার্কোর মতো পেস বোলিং অলরাউন্ডার যেকোনো দলের জন্যই আশীর্বাদস্বরূপ। তার ওয়ার্কলোড ম্যানেজ করে ঠিকঠাকভাবে ব্যবহার করা গেলেই সেরা ফলটা পাবে দল। যেমনটা পাচ্ছে এবারের বিশ্বকাপে। ইতোমধ্যে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে প্রোটিয়ারা। এবার সেমির গেরো খুলতে মার্কো ইয়ানসেনও হতে পারেন তাদের তুরুপের তাস। যার শুরুটা হয়েছিল ওয়ান্ডারার্সের নেটে কোহলিকে বল করে।