• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩
  • " />

     

    কলকাতা থ্রিলারে স্নায়ু ধরে রেখে অষ্টমবারের মত ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

    কলকাতা থ্রিলারে স্নায়ু ধরে রেখে অষ্টমবারের মত ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া    

    ২০২৩ বিশ্বকাপ, ২য় সেমি-ফাইনাল, দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া (টস-দক্ষিণ আফ্রিকা/ব্যাটিং)
    দক্ষিণ আফ্রিকা - ২১২, ৪৯.৪ ওভার (মিলার ১০১, ক্লাসেন ৪৭, রাবাদা ১০, স্টার্ক ৩/৩৪, কামিন্স ৩/৫১, হেজলউড ২/১২)
    অস্ট্রেলিয়া - ২১৩/৭, ৪৭.২ ওভার (হেড ৬২, স্মিথ ৩০, ওয়ার্নার ২৯, শামসি ২/৪২, কোটজিয়া ২/৪৭, মার্করাম ১/২৩)
    ফলাফল - অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জয়ী


     

    ১৯৯৯ সেমি-ফাইনালের মত লক্ষ্যটাও এবার ছিল একই; শুধু এবার রান তাড়ায় ছিল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের মাঝে সেই ম্যাচে থাকা হার্শেল গিবস সেটাই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন; রোমাঞ্চটা সেবারের মত না হলেও কম হল না কোনও অংশেই। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার মত খেই না হারিয়ে স্নায়ু ধরে রেখে অষ্টমবারের মত ফাইনালে চলে গেল অস্ট্রেলিয়া।
     

    ব্যাট হাতে ঝড়ো শুরু করেছিলেন ওয়ার্নার-হেড জুটি। পেসারদের ওপর চড়াও হয়ে ম্যাচ দ্রুত শেষ করার জন্যই যেন খেলছিলেন দুজনেই। দ্রুতই তাই দুই বাঁহাতিকে থামাতে এইডেন মার্করামকে আক্রমণে আনা হলে প্রথম বলেই তিনি উপড়ে ফেলেন ১৮ বলে ২৯ রানে থাকা ওয়ার্নারের স্টাম্প। ঠিক পরের ওভারে রাসি ভ্যান ডার ডুসেনের দুর্দান্ত ক্যাচে মিচেল মার্শ থামলেও হেড ছিলেন অবিচল; প্রথম পাওয়ারপ্লেতেই তাই ৭৪ রান তুলে ফেলে অজিরা। তবে এরপর থেকেই অসংখ্য সুযোগ তৈরি করেও লুফে নিতে পারেনি প্রোটিয়ারা। ৪০ রানে ডিপ পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েও রিজা হেন্ড্রিকসের ব্যর্থতায় বেঁচে যান হেড। কোটজিয়ার প্রথম বলেই সুযোগ পেয়ে পরে টানা তিন চারে ৪০ বলে ফিফটি পেয়ে যান হেড। শামসির করা পরের ওভারে তো তিনি আবার জীবন পান স্লিপে কঠিন ক্যাচ দিয়েও ক্লাসেনের ব্যর্থতায়! ওই ওভারে মাত্র উইকেটে আসা স্মিথও দিয়েছিলেন আধা সুযোগ। তবে বল হাতে নিয়েই ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে যাওয়া মহারাজ আবারও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ফেরান ম্যাচে। প্রথম বলেই ৪৯ বলে ৬২ রানে থাকা হেডের স্টাম্প উপড়ে ফেললে শামসির সাথে জুটি বেঁধে একেবারে কোণঠাসা করে ফেলেন অজিদের।
     

    একবার রিভিউ নিয়ে লাবুশেন বেঁচে গেলেও অদ্ভুত এক রিভার্স সুইপের চেষ্টা করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ১৮ রানে শামসির শিকার হয়ে থামেন লাবুশেন। চাপ আরও বাড়িয়ে ম্যাক্সওয়েলকে মাত্র ১ রানে স্টাম্প উপড়ে ফিরিয়ে শামসি দক্ষিণ আফ্রিকার দিকেই যেন ম্যাচটা ঘুরিয়ে ফেলেন। তবে স্মিথের সাথে যোগ দিয়ে দারুণভাবে স্পিন খেলতে থাকেন ইংলিস। দুই স্পিনার কোনও ছাড় না দিলেও তাই হুট করে কোটজিয়াকে ফেরত আনেন বাভুমা। অধিনায়কের দারুণ সেই সিদ্ধান্ত কাজে দেয় স্মিথ মনোযোগ হারালে। কোটজিয়াকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বল আকাশে ভাসালে ৩০ রানে থাকা স্মিথকে ফেরত পাঠাতে ভুল করেনি ডি কক। ইংলিসের সাথে স্টার্ক যোগ দিয়ে দেওয়াল হয়েই থাকেন। তবে কোটজিয়ার প্রাণবন্ত স্পেলের সাথে দারুণ অধিনায়কত্বে থামেন ইংলিশ ২৮ রানে; কোটজিয়ার রাউন্ড দ্য উইকেটের ইয়র্কারে স্টাম্প খুইয়ে।
     

    ১৯৩ রানে দলকে রেখে তিনি ফিরলে ম্যাচ যেকোনো দিকেই যেতে পারত। উইকেটে এসে কামিন্স দিয়েছিলেন আধা সুযোগ; মার্করামের বলে ডি ককের কাছে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন। শেষমেশ দুজনেই স্নায়ু ধরে রাখলে তাই আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি প্রোটিয়ারা; হারতে হয়েছে নিজেদের পঞ্চম সেমি-ফাইনালে।
     
    এর আগে আকাশ জুড়ে মেঘ; ফ্লাড লাইটের প্রজ্বলন সত্ত্বেও নিজেদের রান তাড়ার শঙ্কাটা মাথায় নিয়েই হয়ত দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে যেন অস্ট্রেলিয়াকে পাতে দিল সোনার বার। সেগুলো দুমুঠো ভরে লুফে নিয়ে বাইশ গজে টেস্ট বোলিংয়ের ত্রাস ফিরিয় আনলেন স্টার্ক-হেজলউড জুটি। দুজনে টানা বল করলেন ১২ ওভার, আর তাতেই প্রোটিয়ারা খোয়াল চার উইকেট। প্রথম ওভারেই স্টার্কের সুইংয়ে উইকটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বাভুমা ফিরলে ৫ ওভারে তারা পায় মাত্র ৮ রান। ওই ওভারেই শিকল ছিড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে মিড অনে কামিন্সের দুর্দান্ত ক্যাচে হেজলউডের শিকার হয়ে ফেরেন ডি কক। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে মাত্র ১৮ রান এলে সেই চাপ ধরে রাখতেি দুজনকে আক্রমণে রাখেন কামিন্স। আর তাতেই স্টার্কের বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে মার্করাম থামলে পরের ওভারে হেজলউডের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে থামেন ডুসেন; ২৪ রানে নেই দক্ষিণ আফ্রিকার ৪ উইকেট!

     

    এর কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি নেমে কোনও ওভার না খুইয়েই খেলা শুরু হলে সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা। মিলার-ক্লাসেন জুটি স্পিনারদের জন্য যেন অপেক্ষা করছিলেন। দলীয় শতরান ছুঁতে তাদের লাগে ২৮ ওভার। তবে উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া ক্লাসেন তখন ভয়ংকর হয়ে উঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। হেডকে আক্রমণে আনা হলে দুই বাউন্ডারিতে তাকে স্বাগত জানান তিনি। তবে হেডের এক অফ স্পিনে একেবারে হতভম্ব হয়ে লেগ স্টাম্প খুইয়ে তিনি ৪৮ বলে ৪৭ রানে থামলে তার পরের বলেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন ইয়ানসেন। আবারও যখন অল্প রানেই তাদের গুটিয়ে ফেলার ঘ্রাণ পাচ্ছিল অজিরা, তখনই দেয়াল হয়ে দাঁড়ান মিলার। ৭০ বলে ফিফটি পূর্ণ করে কোটজিয়াকে নিয়ে একবার লড়লেন, কামিন্সকে একহাত নিলেন, জাম্পাকে কখনই থিতু হওয়ার সুযোগ দিলেন না। অন্য প্রান্তে কেউ সেই অর্থে সাহায্য করতে না পারলেও শেষে এসে কামিন্সকে দারুণ এক ছয় মেরে ১১৫ বলে মিলার পেয়ে যান নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি। ওই কামিন্সের খাটো লেংথের বলেই ডিপ স্কয়্যার লেগে ক্যাচ দিয়ে ১১৬ বলের ১০১ রানের অসামান্য ইনিংস শেষে মিলার থামলে শেষ ওভারে রাবাদাকেও ফিরিয়ে কামিন্স দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুটিয়ে দেন ২১২ রানে। পরে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়েও আরও একবার স্বপ্নওভঙ্গের বেদনা নিয়েই অজিদের কাছে হার মানতে হয়েছে প্রোটীয়াদের।