• ভারত-ইংল্যান্ড
  • " />

     

    অভিষেকেই নায়ক হার্টলি: যেভাবে ডাক পেয়ে ভারতে স্পিনের জাল বুনলেন এই স্পিনার

    অভিষেকেই নায়ক হার্টলি: যেভাবে ডাক পেয়ে ভারতে স্পিনের জাল বুনলেন এই স্পিনার    

    টম হার্টলি - এই টেস্টের আগে হয়ত নামটা অনেকেই শোনেনি। শোনার কথাও না; ভারত সফরে ইংল্যান্ড দলের হয়ে যখন ডাক পেলেন তখন হয়ত নিজেই নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারেননি হার্টলি। কিন্তু এই স্পিনারই আজ নায়ক বনে গেলেন। ইংল্যান্ডকে এই শতাব্দীর সবেচেয়ে স্মরণীয় জয়গুলোর একটা এনে দিলেন। হ্যাঁ, অলি পোপের ১৯৬ রানের অবিস্মরণীয় ইনিংসটা না এলে জয়ের ভিতটাই দাঁড়াত না। তবে ভারতের সামনে লক্ষটাও যে বিশাল ছিল তা না; আর ভারতের মাটিতে ভারতের অনবদ্য রেকর্ডটাও মাথায় রাখতে হয়। তাদের মাটিতে তাই একজন আনকোরা স্পিনার এসে তাদের বাঘাবাঘা ব্যাটারদের খাবি খাওয়াবে, তা হয়ত এই টেস্টের আগে কাউকে বললে হেসেই উড়িয়ে দিত।

    হেসে হয়ত উড়িয়ে দিতেন হার্টলি নিজেও। এই দলেই তো তার থাকার কথা ছিল না। এই সফরের আগে ইংল্যান্ড ভিন্ন পথে হেঁটেছে বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। স্কোয়াডে এবার একমাত্র পেসার ছিলেন মার্ক উড। যতই প্রতিকূল কন্ডিশন হয়, ইংল্যান্ডকে এরকম সিদ্ধান্ত নিতে তো সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু রব কি ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মেলবন্ধন থেকে দেখা মিললে অভূতপূর্ব সেরকম কিছুরই। দলে শোয়েব বশিরের সাথে হার্টলিও জায়গা পেয়ে গেলেন; সাথে স্পিন নেতা হিসেবে তো জ্যাক লিচ আছেন।

    হার্টলির ক্যারিয়ারের রাস্তাটা দেখলেও সিদ্ধান্তটা চমক জাগানিয়াই মনে হয় বটে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তো অত অভিজ্ঞতাই নেই তার। বরং টি-টোয়েন্টিতেই হাত পাকিয়েছেন এই বাঁহাতি অফ স্পিনার। ল্যাঙ্কাশায়ার ও ম্যানচেস্টার অরিজিনালসের হয়ে নিয়মিত একাদশে থাকা এই স্পিনার খেলেছেন ৮২টি টি-টোয়েন্টি। এমনকি ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের হাওয়া বদলে দেওয়া 'দ্য হান্ড্রেড'-এর প্রথম বলটা এসেছিল তার বাঁ হাত থেকে। সেখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছেন মোটে ২০ ম্যাচ। ৩৬.৫৭ গড়ে তার নেওয়া ৪০ উইকেটে রেকর্ডটাও অত আহামরি নয়। তবে এই মৌসুমে ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে ইতিমধ্যে খেলে ফেলেছিলেন ১০ ম্যাচ।

    সেখান থেকেই তাকে পর্যবেক্ষণ করে হুট করে আরব আমিরাতে ডাকা হল তাকে। ভারত সফরকে সামনে রেখে সেখানে অনুশীলন ক্যাম্প করছিল ইংল্যান্ড দল। এই ক্যাম্পে তার ডাক পাওয়াটাও হয়ত রেকর্ড বিবেচনায় বিস্ময়য়ের। তবে তার মধ্যে যে কিছু খুঁজে পেয়েছিলেন ম্যানেজমেন্ট সেটা বোঝা যায় যখন তাকে এর মাঝপথেই ইংল্যান্ড লায়ন্সের হয়ে খেলতে পাঠানো হয়। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে কোনও ম্যাচ খেলার সুযোগই মেলেনি তার।

    হার্টলি হয়ত সেখানেই তার স্বপ্ন মাটি দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের পরিকল্পনা তো এবার ভিন্ন। আরব আমিরাতে তাকে যে কারণে ডাকা হয়েছিল সেই কারণেই ইংল্যান্ড দলেও ডাকা হল তাকে। মূলত, এবারের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে আম্পায়ারদের ক্যাপে ক্যামেরা রয়েছে। সেখান থেকে খেলোয়াড়দের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আইহক ক্যামেরা গুলো থেকেই ইংল্যান্ডের বিশ্লেষকরা খেয়াল করলেন হার্টলির মূল অস্ত্র তার উচ্চতা। এই উচ্চতাকে ব্যবহার করে তিনি বল ছাড়েন বেশ উঁচু থেকে। ভারতের মাটিতে এই উঁচু 'রিলিজ পয়েন্ট' যে বেশ কার্যকর সেটা ইংল্যান্ডের চেয়ে ভালো আর কারা জানে! গতবার এখানে সফরে এসে দারুণ শুরু করেও ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ হারতে হয়েছিল অক্ষর পাটেলের কাছে গুঁড়িয়ে গিয়ে। ইংল্যান্ডের বিশ্লেষকরা খেয়াল করেন যে হার্টলির বোলিংয়ের ধরনটাও অক্ষরের মতই।

    ৬ ফিট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার হার্টলি শুধু যে তার উচ্চতাকে কাজে লাগান তা নয়, হাতে কোণটাই তৈরি করেন এমনভাবে যাতে করে পিচ বরাবর ৫০-৬০ মাইল/ঘণ্টায় নিয়মিত বল করতে পারেন। সেখান থেকেই ক্যাম্পে তাকে দেখে স্টোকসও মুগ্ধ হয়েছিলেন। ভারতে তাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনাও তখনই এঁটে ফেলেছিলেন ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক, "ও যে লম্বা সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ওর বিষয়টা হল এমন এক গতিতে ও বল করে যেটা বেশিক্ষণ সামাল দেওয়া যায় না; পাশাপাশি স্বাভাবিক কিছু ভ্যারিয়েশন তো আছেই। ভারতে কিন্তু এটাই মোকাবেলা করে সবচেয়ে কঠিন। আপনি দেখবেন একই জায়গায় একই গতিতে বল বারবার ঘুরছে তো ঘুরছেই; কিন্তু একটা বল আসবে যেটা না ঘুরে আপনার ব্যাটের তল গলে ঢুকে যাবে, আপনি গতিটা বুঝে ওঠার আগেই দেখবেন আপনার স্টাম্প নেই। হার্টলির মধ্যে সেই জিনিসটা আছে।" 

    সেই জিনিসটা যে আছে সেটা তো হার্টলি দেখালেন আজ। স্টোকসের আস্থার প্রতিদান দিয়ে একে একে রোহিত, জয়সওয়াল, গিল অক্ষর, শ্রিকার, আশ্বিন, সিরাজকে ফেরালেন। সেই সাথে ভারতের মাটিতে মনে রাখার মত এক জয়ের গাঁথা রচনা করলেন বাঁ হাতের ভেল্কিতে। শেষ যেবার ভারত দেশের মাটিতে সিরিজ হেরেছিল সেবার মন্টি পানেসার নামক এমন এক মারণাস্ত্রেই কতল হয়েছিল তারা। পানেসার অভিজ্ঞ ছিলেন বটে। তবে পড়ার মত যথেষ্ট ভিডিও হয়ত নেই বলে হার্টলি এবার হয়ে উঠতে পারেন আরও ভয়ংকর। ভারতকে ভারতের মাটিতে শেষ সিরিজ হারানো ইংল্যান্ড আরও একবার সেটা করে দেখাতে পারবে কি-না তাই সময়ই বলবে। তবে সেই জয়ের ফর্মুলা বের করতে গেলে হার্টলি হবেন স্টোকসের তুরুপের তাস - সেটা তো এখন বলাই বাহুল্য।