• " />

     

    শচীন-দ্রাবিড়কে ছাড়িয়ে কুক

    শচীন-দ্রাবিড়কে ছাড়িয়ে কুক    

    পহেলা মার্চ, ২০০৬। ভিদার্ভা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন গ্রাউন্ড, নাগপুর। ইংল্যান্ড ভারতের প্রথম টেস্ট। দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বল। শান্তকুমারন শ্রীশান্তের মিডল-লেগ স্ট্যাম্পে পড়া শর্ট বলটা ব্যাকফুটে গিয়ে পুল করলেন অ্যালেস্টার কুক। ফাইন লেগ দিয়ে চার। অ্যালেস্টার কুকের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হলো বাউন্ডারি দিয়ে।

     

    ৩০ মে, ২০১৬। চেস্টার-লি-স্ট্রিটের রিভারসাইড গ্রাউন্ড। ইংল্যান্ড শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করছে ইংল্যান্ড। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বল। নুয়ান প্রদীপকে ফ্লিক করে মিডউইকেট দিয়ে সীমানাছাড়া করলেন। টেস্ট ক্রিকেটে দশ হাজার রান হয়ে গেল কুকের! 

     

    মাঝে কেটে গেছে ১০ বছর ৮৯ দিন। নাগপুরে অভিষেক হওয়া গ্লস্টারের সেই তরুণ হয়েছেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। বয়ে চলেছেন দলের ভার। আজ সেই কুকই পৌঁছালেন টেস্ট ক্রিকেটের অভিজাত দশ-হাজারী ক্লাবে। প্রথম ইংলিশ ও ইতিহাসের দ্বাদশ ব্যাটসম্যান হিসেবে।

     

    দশ-হাজারী ক্লাবে পৌঁছানোর পথে কুক ভেংগে দিলেন শচীন টেন্ডুলকারের রেকর্ড। 'ক্রিসমাস-ডে'তে জন্ম দেয়া ইংলিশ অধিনায়কের বয়স এখন ৩১ বছর ১৫৭ দিন। দশ হাজার রানের চূড়া ছোঁয়ার সময় ভারতীয় কিংবদন্তির বয়স ছিল ৩১ বছর ৩২৭ দিন। সেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই 'হবো-হবো' বলে যেন হচ্ছিল না রেকর্ডটা। কুকের হাতে অবশ্য সময় ছিল পুরো ইংলিশ গ্রীষ্মই, মানে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজের পর পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজেও থাকতো রেকর্ড গড়ার সুযোগ।

     

    অভিষেক সেঞ্চুরির পর পাড়ি দিয়েছেন সুদীর্ঘ পথ! 

     

    হেডিংলিতে সিরিজের প্রথম টেস্টে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন ১০ হাজার থেকে ৩৬ রান দূরে। করলেন ১৬ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে সুযোগই পেলেন না ব্যাটিংয়ের! চেস্টার-লি-স্ট্রিটের প্রথম ইনিংসে করলেন ১৫, 'আক্ষেপ' থেকে গেল ৫ রানের! প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা অল-আউট ১০১ রানে, কুকের জন্য অপেক্ষাটা বোধহয় পরের টেস্ট পর্যন্তই করতে হতো! তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ালো শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ডকে নামতে হলো আবার। 

     

    কুক অপেক্ষাটা আর দীর্ঘায়িত করলেন না, চেস্টার-লি-স্ট্রিটেই গড়ে ফেললেন ইতিহাস! 

     

                                     কুকের আগের দশ-হাজারী ক্লাব

    ব্যাটসম্যান ম্যাচ রান গড়
    শচীন টেন্ডুলকার ২০০ ১৫৯২১ ৫৩.৭৮
    রিকি পন্টিং ১৬৮ ১৩৩৭৮ ৫১.৮৫
    জ্যাক ক্যালিস ১৬৬ ১৩২৮৯ ৫৫.৩৭
    রাহুল দ্রাবিড় ১৬৪ ১৩২৮৮ ৫২.৩১
    কুমার সাঙ্গাকারা ১৩৪ ১২৪০০ ৫৭.৪০
    ব্রায়ান লারা ১৩১ ১১৯৫৩ ৫২.৮৮
    শিব চন্দরপল ১৬৪ ১১৮৬৭ ৫১.৩৭
    মাহেলা জয়াবর্ধনে ১৪৯ ১১৮১৪ ৪৯.৮৪
    অ্যালান বোর্ডার ১৫৬ ১১১৭৪ ৫০.৫৬
    স্টিভ ওয়াহ ১০৯২৭ ১০৯২৭ ৫১.০৬
    সুনীল গাভাস্কার ১২৫ ১০১২২ ৫১.১২

     

    শুধু শচীন নয়, অ্যালেস্টার কুক ছাপিয়ে গেছেন আরেক ভারতীয় কিংবদন্তী রাহুল দ্রাবিড়কেও। অভিষেকের পর থেকে সবচেয়ে কম সময় ব্যবধানে দশ হাজার রান করার রেকর্ড এখন কুকের। নাগপুরে অভিষেকের পর থেক চেস্টার-লি-স্ট্রিটের আজকের ম্যাচের সময় ব্যবধান ১০ বছর ৯০ দিন। আর লর্ডসে অভিষেকের পর চেন্নাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে প্রথম টেস্ট, দ্রাবিড়ের সময় লেগেছিল ১১ বছর ২৮০ দিন। আর দশ হাজার রান করতে সবচেয়ে বেশী সময় নিয়েছিলেন শিবনারাইন চন্দরপল, ১৯৯৪ সালে অভিষিক্ত শিবের দশ-হাজারী ক্লাবে ঢুকেছিলেন ২০১২ সালে,অভিষেকের ১৮ বছর পরে।

     

    ইনিংসের হিসেবে অবশ্য একটু পিছিয়েই আছেন অ্যালেস্টার কুক, চেস্টার-লি-স্ট্রিট টেস্টের এই ইনিংসটি তাঁর ২২৮তম, ১৯৫ ইনিংসেই দশ হাজার রান করে সবার ওপরে তিনজন, ব্রায়ান লারা, শচীন টেন্ডুলকার, কুমার সাংগাকারা। আর টেস্ট সংখ্যায় ওপরে ব্রায়ান লারাই, ক্যারিবীয় রাজপুত্রের লেগেছিল ১১১ টেস্ট। অ্যালেস্টার কুকের এটি ১২৮তম টেস্ট।