• " />

     

    অন্তিম শরে বুমেরাং!

    অন্তিম শরে বুমেরাং!    

    যেসব রান তাড়ায় শেষ বলে বাউন্ডারির বিকল্প ছিল না!....

     

    ‘শিব-মিরাকল’!

    তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারটা চাপাই পড়ে যেন সবসময়। ৪১.৬০ গড়, ৮৭৭৮ রান। শিবনারাইন চন্দরপলের সেরা ওয়ানডে ইনিংসের কথা বললে সবার আগে কোনটা থাকা উচিৎ? আলোচনা সাপেক্ষ ব্যাপার, তবে ২০০৮ সালের পোর্ট অব স্পেনকে ভোলার সাধ্য কই! শিব এদিন যে 'মিরাকল' ঘটিয়েছিলেন!

    শেষ ওভারে দরকার ১৩ রান, শিবের সঙ্গী শেষ ব্যাটসম্যান ফিডেল এডওয়ার্ডস। এক বল ডট দিয়ে শিবকে স্ট্রাইক দিতে পারলেন এডওয়ার্ডস। চন্দরপল আবার এক রান নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন এডওয়ার্ডসকে, অসহায়ত্বও ফুটে উঠলো কি! এডওয়ার্ডস আবার স্ট্রাইক ফেরালেন তাঁর দিকে, শেষ দুই বল, দরকার ১০ রান। একটা চার, একটা ছয় হলেই হয়ে যায়। হয়ে তো যায়, বলাও যায়, কিন্তু হয় কই!

    চামিন্দা ভাসের পঞ্চম বলে মিড-অফ দিয়ে চার। শেষ বলটা করলেন লো ফুলটস, মিড-উইকেটে জয়াবর্ধনেকেই শুধু পরাজিত করলো বলটা। চন্দরপলের অপেক্ষা বাড়ছিল, ছয়ের পর ফেটে পড়লেন উল্লাসে, গোটা ড্রেসিংরুম ছুটে এলো মাঠে! প্রতিদিন তো আর এমন ‘শেষ’ হয় না, প্রতিদিন তো আর চন্দরপল ছয় মেরে ম্যাচ জেতান না, প্রতিদিন তো আর ‘মিরাকল’ ঘটে না!   

     

     

    শুধু একটি রান!

    হোবার্টে খেলার মধ্যবিরতি। প্রেসবক্সের আনঅফিশিয়াল স্কোরাররা অফিশিয়াল স্কোরারদের হিসাব দিলেন, অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে একটা রান যোগ হয়নি। যোগ করা হলো তা, অস্ট্রেলিয়ার রান হলো ২২৮। এই একটা রানই যেন গড়ে দিল ম্যাচের ভাগ্য!

    ১২৩ রানে যখন সেলিম মালিক পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন, পাকিস্তানের তখন প্রয়োজন ওভারপ্রতি ৭.৫ রান। রশীদ লতিফ ও আসিফ মুজতবার জুটি আনলো ৬৮ রান, কিন্তু তখনও জয় ১৭ রান দূরে, হাতে মাত্র এক ওভার। স্টিভ ওয়াহর প্রথম বলেই আউট মুশতাক আহমেদ, পরের চার বলে এলো ১০ রান, আকিব জাভেদ ও মুজতবা, দুজনই নিলেন পাঁচ করে। শেষ বল, দরকার ৭। ওয়াহর স্লোয়ারটা মিড-উইকেট দিয়ে মুজতবা মারলেন ছয়, ম্যাচ টাই! ওয়ানডে ক্রিকেটের পঞ্চম টাই। যে রানটা ভুলে বাদ পড়েছিল, যে রানটা যোগ করা হয়েছিল পরে, সেটাই হয়ে দাঁড়ালো ব্যবধান, জয় আর টাইয়ের মাঝে!

    ২৫ টেস্ট ও ৬৬ ওয়ানডে খেলা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মুজতবারও ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা বোধহয় এই ছয়, ১৯৯২ সালের এই টাই ম্যাচ!

     

    আসিফ মুজতবা

     

     

    মাশরাফির ভুলে যাওয়ার দিন!

    মাশরাফি কি ভুলতে পারেন ম্যাচটা? কিংবা শাহাদাত হোসাইন? ২০০৬ সালের হারারের সেই ম্যাচটা!

    জিম্বাবুয়ের ১৭ রান দরকার, হাতে তিন উইকেট, ছয়টা বল। মাশরাফি যেন সব বল করতে চাইলেন ফুললেংথে। চারটা হলো ফুলটস। চার বলের একটিতে হলো আবার রান-আউট। দ্বিতীয় বলেই ছয় মেরেছিলেন টেলর, চতুর্থ বলে চার। শেষ বলে দরকার পাঁচ। চার হলে টাই, জিততে হলে টেলরকে মারতে হবে ছয়। আবার ফুলটস দিলেন মাশরাফি, মিড-উইকেট ভেদ করে ছয়! উন্মত্ত টেলর উচ্ছ্বাসে ভাসালেন হারারেকে, হতাশায় ডোবালেন মাশরাফিকে। সঙ্গে শাহাদাতকেও কি নয়! এই ম্যাচেই যে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ওয়ানডে হ্যাটট্রিক করেছিলেন শাহাদাত!

     

     

     

    ‘কিলার’ কেভিন!

    বৃষ্টি এসেছিল ঘুরেফিরেই সেদিন, ডুবলিনে, ২৩ মে, ২০১৩ সালে। ৪৭ ওভারে পাকিস্তান করলো ২৬৬, আয়ারল্যান্ডের সামনে ডি-এল পদ্ধতিতে লক্ষ্য দাঁড়ালো ২৭৬। পল স্টার্লিংয়ের সেঞ্চুরি ভাল একটা ভিত গড়েছে, কেভিন ও’ব্রায়েন হয়ে উঠলেন ভয়ঙ্কর, ওই ভিতের উপরে দাঁড়িয়েই। সব এসে ঠেকলো শেষ ওভারে। ৯ ওভারে ৫৭ রান দেয়া সাঈদ আজমলেই ভরসা করলেন মিসবাহ-উল-হক। প্রথম তিন বলে ২ রান দিয়ে ভরসার সপক্ষেই কথা বললেন আজমল। চতুর্থ বলে লং-অন ফিল্ডারকে অল্পতে পার করে হলো ছয়। পরে বলে ডাবলস। চার হলে টাই, ছয় হলে আইরিশদের আরেকটি পাকিস্তান-বধ রচনা। ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে চারই মারলেন ও’ব্রায়েন, ম্যাচ করলেন টাই।

    যে টাই আইরিশদের কাছে জয়ের চেয়েও বেশী কিছু!

     

     

     

    ডাচ-রোমাঞ্চ!

    দুই ওভারে দরকার ছিল ১৬, টম কুপার আউট হলেন তখনোই। অ্যালেক্স কুসাক ৪৯তম ওভারে দিলেন ৩ রান, নিলেন মুদাসসার বুখারীর উইকেট। শেষ ওভার, দরকার ১৩।

    জন মুনির প্রথম চার বলে এলো মাত্র দুই রান, সঙ্গে আবার একটি উইকেট। জিততে হলে ডাচদের দুই বলে করতে হবে ১১। শেষ উইকেটে মাইকেল রিপ্পনের সঙ্গী আহসান মালিক। একটা করে চার আর ছয় হলেই হয়ে যায় টাই। রিপ্পন করলেন ঠিক সেটাই! আমস্টিভিলিনে ২০১৩ সালে আইসিসির ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগের ম্যাচটা হলো টাই। আইরিশরা চলে গেল বিশ্বকাপে, ডাচরাও এগুলো সে পথেই! মাঝে রইলো শেষ দুই বলে বাউন্ডারিতে হওয়া ‘টাই’ ম্যাচের রোমাঞ্চ!