লর্ডসে বোলিং রাজত্ব
দিনের দ্বিতীয়, ক্রিস ওকসের প্রথম ওভার। প্রথম বলটা একটু ফুললেংথের, আগ বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে মিস করলেন কুশল মেন্ডিস, প্যাডে লাগলো বল। আম্পায়ার এস রভী আউট দিতে সময় নিলেন না বেশী, আগের দিনের টিকে থাকার সংগ্রামও ওখানেই শেষ মেন্ডিসের। দিনের শুরুর আঘাতটা ওকসের।
শ্রীলঙ্কান ইনিংসটা শেষও করলেন ওই ওকসই, শামিন্দা এরাংগাকে স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে। মেন্ডিস থেকে এরাংগা, শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা ড্রেসিং রুম আর উইকেটের মাঝের পথটা যাওয়া আসা করেছেন নিয়মিতই। আগের দিন শেষ হয়েছিল ১ উইকেটে ১৬২ রানে, তৃতীয় দিনে চা বিরতির আগ দিয়ে লঙ্কান ইনিংস শেষ হয়েছে ২৮৮ রানেই। মানে ১১৬ রান যোগ করতেই নয় ব্যাটসম্যান নেই!
ওকস নিয়েছেন তিনটি, আগের দিনের উইকেটটি সহ ফিনেরও উইকেট তিনটিই। ব্রড ও অ্যান্ডারসন নিয়েছেন দুইটি করে। মাঝে একটু প্রতিরোধ গড়েতে চেয়েছিলেন কুশল পেরেরা(৪২) ও রঙ্গনা হেরাথ(৩১)। হয়নি। সিরিজে প্রথমবার ফলো-অন এড়াতে পারলেও তাই লিড নেয়া হয়নি শ্রীলঙ্কার।
অথচ তৃতীয় দিনে লর্ডসের উইকেট হওয়ার কথা বোলারদের ‘বধ্যভূমি’! আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল, অ্যালেস্টার কুক ও জো রুট বোলারদের কাজেও লাগিয়েছেন সেভাবে। জো রুটের কথা বলতে হচ্ছে, কারণ শিনপ্যাড ছাড়াই সিলি মিড-অফে ফিল্ডিং করতে গিয়ে পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন কুক, উঠে গিয়েছিলেন, ওপেন করতেও নামেননি পরে। এক্সরে রিপোর্টে অবশ্য খারাপ কিছু দেখা যায়নি, ২০০৬ সালের পর কোনো টেস্ট মিস না করা কুক অবশ্য জুলাই পর্যন্ত সময় পাবেন পূর্ণভাবে সেরে ওঠার জন্য।
কিন্তু সময় কি পাবেন নিক কম্পটন? কুকের জায়গায় ওপেনিং করতে নেমেছিলেন, নিজেও জানতেন, এই ইনিংসে ভাল কিছু করতে না পারলে আপাতত বিদায় বলতে হবে ইংল্যান্ড শার্টকে। শামিন্দা এরাংগার মিডিয়াম পেসের বলের লাইনটাই যেন বুঝলেন না, ব্লক করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন উইকেটকিপার দীনেশ চান্ডিমালকে। কম্পটন বোধহয় খেলেই ফেললেন ইংল্যান্ডের হয়ে শেষ ইনিংসটা!
কম্পটন- হয়েই গেল শেষ?
ডেনিস কম্পটনের নাতী নাহয় ব্যাট হাতে কিছু করে দেখাতে পারেননি, কিন্তু ওকস তো ব্যাট-বল হাতে করেছেন! তবুও বেন স্টোকস চোট থেকে সেড়ে উঠলে হয়তো ওকসেরই জায়গা ছেড়ে দিতে হবে! তাঁকে ‘অভাগা’ বললে কি বাড়িয়ে বলা হবে?
শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং ব্যর্থতার ভীড়ে নুয়ান প্রদীপের প্রশংসা করলে অবশ্য বাড়িয়ে বলা হবে না! প্রথমে জো রুট বোকা বনেছেন প্রদীপের হঠাৎ নীচু হওয়া বলে, পরের বলেই জেমস ভিনস বল ছেড়ে দিতে গিয়ে হয়েছেন রুটের মতোই বোল্ড। প্রদীপকে ড্রাইভ করতে গিয়ে ভুল বল বেছেছিলেন ‘স্বপ্নের’ ফর্মে থাকা বেইরস্টো। বোল্ড হয়েছেন তিনিও।
দিনের শেষ কটা ওভার নাইটওয়াচম্যান ফিনকে নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন অ্যালেক্স হেলস। যে দিনটা ওকসের পেয়েও না পাওয়ার ‘আক্ষেপের’, যে দিনটা কম্পটনের হতাশার, যে দিনটা শ্রীলঙ্কার হতাশার, যে দিনটা হতাশার মাঝেও প্রদীপের বোলিং-আলোর!
লর্ডসের চতুর্থ দিনেও কি জ্বলবে প্রদীপের মতো অন্য কোনো লঙ্কান পারফরম্যান্সের আলো? নাকি ম্যাচটা শুধু নিজেদেরই করে নিবে ইংলিশরা?