মিলারদের যেভাবে আটকাতে পারেন তাসকিনরা?
টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান, ফর্ম সবই বাংলাদেশের বিপক্ষে। কিন্তু আফ্রিকা ব্যাটারদের সাথে ঠিক কী করলে বাংলাদেশের বোলারদের সুযোগ থাকবে?
প্রথমেই ওপেনার কুইন্টন ডি কককে দিয়ে শুরু করা যাক। বল বাই বল তথ্য পাওয়া যায় এমন স্বীকৃত টি২০ ম্যাচগুলোর পরিসংখ্যান অনুসারে, ডানহাতি অফ স্পিনারদের বিপক্ষে দ্রুত রান তুলতে একটু কষ্ট হয় কুইন্টন ডি ককের। পেসার বা বাঁহাতি স্পিনারদের তুলনায় অফ স্পিনের বিপক্ষে তাঁর গড়টাও বেশ কম। নতুন বলে কুইন্টন ডি ককের বিপক্ষে তাই মাহেদী হাসানকে আক্রমণে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
তবে ডি কক ক্রিজে সেট হয়ে গেলে বাংলাদেশ আক্রমণ করতে চাইবে লেগ স্পিনার রিশাদকে দিয়ে, চলতি টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেও শ্রীলঙ্কার হাসারাঙ্গার বলেই আউট হয়েছিলেন তিনি। এর বাইরে, পেস বোলার বা বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে চড়াও হওয়ারই চেষ্টা করবেন ডি কক, পরিসংখ্যানও সেটাই বলছে।
ডি ককের সাথে ওপেনিংয়ে দেখা যাবে রিজা হেনড্রিকসকে। স্ট্রাইক রেটের হিসেবে কুইন্টন ডি ককের মতো অতটা বিধ্বংসী নন তিনি, পরিসংখ্যান থেকেও আলাদা করে দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে চলতি টুর্নামেন্টে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, নতুন বলে পেসারদের সুইংয়ের বিপক্ষে একটু হলেও দুর্বলতা রয়েছে হেনড্রিকসের। তাসকিন-তানজিমরা সেই সুযোগটাই নিতে চাইবেন।
ওয়ান ডাউনে নামবেন অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। অফ স্পিনারদের বিপক্ষে বেশ ভালো গড় এবং স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তবে বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে তাঁর দুর্বলতা লক্ষ্যণীয়। এই সুযোগটা হয়তো নিতে চাইবেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সাকিবকে দ্রুত আক্রমণে আনলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
দুটো উইকেট পড়ার পরে মাঠে নামবেন তরুণ ব্যাটসম্যান ট্রিস্টান স্টাবস। মার্করামের মতো এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানও অফ স্পিনারদের বিপক্ষে ধ্বংসাত্মক, কিন্তু বাঁহাতি স্পিন দিয়ে তঁকে কাবু করা সম্ভব। লেগ স্পিনের অবশ্য স্টাবসের রেকর্ড বেশ ভালো, সেক্ষেত্রে রিশাদের চেয়ে সাকিবই তার জন্য কার্যকরী টোটকা হতে পারেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনের পাঁচ নম্বর জায়গাটা বরাদ্দ হেনরিখ ক্লাসেনের জন্য। নিজের দিনে তিনি কতটা বিধ্বংসী হতে পারেন, তার প্রমাণ দেখা গেছে আইপিএলে। তবে এই ডানহাতি মারকুটে ব্যাটসম্যানকে সবচেয়ে ভালোভাবে আটকে রাখতে পেরেছেন অফ স্পিনাররা। তবে তাঁকে আউট করার জন্য ডানহাতি পেসারদের দিকেই তাকিয়ে থাকবেন অধিনায়ক।
দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান ডেভিড মিলার। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অপরাজিত ফিফটি করে ম্যাচ জেতানো এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান অফ স্পিনের বিপক্ষে দ্রুত রান তুলতে একটু হলেও হিমশিম খান। এছাড়া পেসারদের বিপক্ষে তাঁর গড় অপেক্ষাকৃত কম।ডেথ ওভারে মিলারকে আউট করতে তাই তাসকিন-মোস্তাফিজদের ভ্যারিয়েশনই ভরসা।অর্থাৎ টি-টোয়েন্টির পরিসংখ্যান যেমনটা বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নতুন বলে মাহেদী হাসানের কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বাংলাদেশ সম্ভব উইনিং কম্বিনেশন নাও ভাঙতে পারে। সেক্ষে্ত্রে প্রোটিয়াদের মিডল অর্ডারের দুর্বলতার সুযোগটা নিতে হবে অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানকেই।
নতুন বলে সুইং আর পুরনো বলে ভ্যারিয়েশন না থাকলে পেসাররা ব্যয়বহুল হতে পারেন। আর বড় দলের বিপক্ষে বড় পরীক্ষা দিতে হবে তরুণ রিশাদকে।
চলতি বিশ্বকাপের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগ পর্যন্ত নিউ ইয়র্কে খেলা হয়েছে চারটি। এই চার ম্যাচে স্পিনারদের তুলনায় পেসাররাই রাজত্ব করেছেন বেশি।বাংলাদেশ আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও তাই তিন পেসার নিয়েই সম্ভবত নামছে। এই তিন পেসার, দুই স্পিনার, নিউ ইয়র্কের পিচ-কন্ডিশন, আর একটুখানি সৌভাগ্য।
কে জানে, তাতেই হয়তো টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো প্রোটিয়া বধের গল্প লিখবে বাংলাদেশ।