সিলস, কিংদের দাপটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ জয়
১ম ওয়ানডে, ওয়ার্নার পার্ক (টস - ওয়েস্ট ইন্ডিজ/বোলিং)
বাংলাদেশ - ২২৭, ৪৫.৫ ওভার (মাহমুদউল্লাহ ৬২, তামিম ৪৬, সাকিব ৪৫, সিলস ৪/২২, মোতি ২/৩৬, চেইজ ১/১৮)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ - ২৩০/৩, ৩৬.৫ ওভার (কিং ৮২, লুইস ৪৯, কার্টি ৪৫, আফিফ ১/১২, রানা ১/৩৬, রিশাদ ১/৫৩)
ফলাফল - ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেটে জয়ী
প্রথম ওয়ানডেতে লড়াই করলেও একই মাঠে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ। জেইডেন সিলস, গুদাকেশ মোতিদের কাছে পরাস্ত বাংলাদেশের ব্যাটিং ইউনিট, মান বাঁচিয়েছিল মাহমুদউল্লাহ-তানজিম হাসান সাকিবের রেকর্ড জুটিতে। লক্ষ্য তাড়ায় সেই সংগ্রহকে ছেলেখেলা বানিয়ে ছেড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ অর্ডার। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে তাই সিরিজ নিশ্চিত করেছ স্বাগতিকরা।
২২৮ রানের লক্ষ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আটকাতে হল বোলিং, ফিল্ডিং দুটোই হতে হত আঁটসাঁট। অথচ ফিল্ডিংয়ে গাফিলতি দেখা গেল আজও। লুইস, কার্টি দুজনেই জীবন পেয়েছেন এক বার করে। আগের দিন ধুঁকতে থাকা লুইস আজও শুরুতে ছিলেন নড়বড়ে। তবে সেটার ফায়দা লুটতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলস্বরূপ, কিংয়ের সাথে জুটি গড়ে ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি গড়েছিলেন আজ এই বাঁহাতি। ১০৯ রানে যেয়ে যখন জুটি ভাঙল ততক্ষণে কিং অন্য প্রান্তে পেয়ে গিয়েছেন ফিফটি। যেই রিশাদকে চার মেরে কিং ফিফটি পেয়েছিলেন, সেই রিশাদকেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে কিছুক্ষণ পরে ৬২ বলে ৪৯ রান শেষে ফিরেছিলেন লুইস।
উইকেটে এসে কিংকে সঙ্গী করে আজ সাবলীল ছিলেন কার্টিও। তাই সেঞ্চুরিতেই চোখ বেঁধে এগুচ্ছিলেন কিং। বাংলাদেশের নিস্পৃহ বোলিং, ফিল্ডিংয়ের পূর্ণ সুযোগ নিয়ে সেই পথে এগুলেও নাহিদ রানার দারুণ এক ইয়র্কার ফেরাতে না পেরে ৭৬ বলে ৮২ রানে স্টাম্পে বল ডেকে এনে থামেন কিং। দ্রুত জয় বের করতে গিয়ে আক্রমণে আসা আফিফকে তুলে মারতে গিয়ে ফিফটি হাতছাড়া হয়েছে কার্টিরও। তবে আগের দিনে জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া হোপ-রাদারফোর্ডরা আজ জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন।
এর আগে সকালে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে চিড় ধরিয়েছিলেন সিলস। সৌম্য, লিটনরা আরেক দফায় আজ ব্যর্থ; সেই সাথে প্রথম পাওয়ারপ্লের মধ্যে আজ ফিরে গিয়েছিলেন মিরাজও। তিনজনকেই বাড়ির পথ দেখিয়ে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন সিলস একাই। অন্য প্রান্তে স্রোতের বিপরীতে দারুণ খেলতে থাকা তামিম মিরাজের পরের ওভারেই যেন উইকেটটা ছুঁড়ে দিয়ে আসলেন। গ্রেভসের আনকোরা এক বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে তামিম থামেন ৩৩ বলে ৪৬ রানে। সেখানেই ঘোর বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
পেসারদের সামলাতে না সামলাতে মোতি এলে তার আঁটসাঁট লাইনে একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশের মিডল অর্ডার। আফিফকে মিড অফে বন্দি করে চার ম্যাচ পর প্রথম উইকেট পান মোতি। নিজের পরের ওভারেই অনিককে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মোতি। মিন্ডলির শিকার হয়ে রানের খাতা খোলার আগেই রিশাদ ফিরলে ১১৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ! সেখান থেকে দুইশো ছোঁয়া যেন ছিল স্বপ্নের বিষয়।
অথচ লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ২৬ রানের ইনিংস খেলা তানজিম সাকিব দেখালেন ব্যাটের ঝলক, মাহমুদউল্লাহকে দিলেন যোগ্য সঙ্গ। দুজনে মিলে মান বাঁচাতে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। মাহমুদউল্লাহ এক প্রান্ত আগলে রাখলেন সাকিব নিজের খেলাটা খেলেছেন, বের করেছেন চারটি চার ও দুটো ছয়। চেইজকে আক্রমণে ফেরানো হলে তার হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাকিব ফেরেন ৬২ বলে ৪৫ রানের দারুণ ইনিংস শেষে। ততক্ষণে অবশ্য ১০৬ বলে ৯২ রানের জুটি গড়ে মাহমুদউল্লাহর সাথে মিলে গড়ে ফেলেছেন বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে অষ্টম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড। সাকিব ফেরার পর ৩১-তম ওয়ানডে ফিফটি পাওয়া মাহমুদউল্লাহ হাত খুলতে গেলে সিলসের ফাঁদে পা দিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৯২ বলে ৬২ রান শেষে। এই মাঠে এই প্রথম আউট হয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। শেষদিকে শরিফুল গ্রেভসকে এক হাত নিলেও ম্যাচের ফল বিলম্ব করতে কিছু রান যোগ করা ছাড়া আর কাজে আসেনি সেসব।