• জিম্বাবুয়ে-নিউজিল্যান্ড
  • " />

     

    ২২ গজের সেলুলয়েড : জিম্বাবুয়ের 'অভিশপ্ত' ভেন্যু!

    ২২ গজের সেলুলয়েড : জিম্বাবুয়ের 'অভিশপ্ত' ভেন্যু!    

    ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে! 


    একদিন টেস্ট খেলা হবে!

    লাল বল, সাদা পোশাক। টেস্ট ক্রিকেট। প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই তো স্বপ্ন! ওয়ানডের আগে টেস্ট অভিষেক হয়েছে, এমন ঘটনাও কম নেই ক্রিকেটে। তবে ওয়ানডের ২২ গজে পরীক্ষা হয় যেন ক্রিকেটারের, টেস্টের উপযুক্ততা নির্ণয়ে। স্বপ্নপূরণের সেই টেস্ট খেলার আগে আবার অপেক্ষাও করতে হয় অনেককে, অথচ সে সময়টাতে ওয়ানডেতে তাঁরা নিয়মিতই খেলেছেন। টেস্ট খেলার আগে সবচেয়ে বেশী ওয়ানডে খেলার রেকর্ডটা ভারতের রোহিত শর্মার। ওয়ানডেতে দুইটা ডাবল সেঞ্চুরির মালিক টেস্ট অভিষেকের আগেই খেলে ফেলেছিলেন ১০০টি ওয়ানডে! পরের স্থান রোহিতেরই এক সতীর্থের, সুরেশ রায়না ৯৮টি ওয়ানডে খেলার পর পেয়েছিলেন টেস্টে সুযোগ। তৃতীয় স্থানে থাকা অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে(৯৪ ওয়ানডে) সরিয়ে দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের চামু চিবাবা। বুলাওয়েতে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে অভিষেকের আগে চিবাবার ৯৬ ওয়ানডে খেলা হয়ে গেছে! তালিকার পাঁচ নাম্বারে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। ইয়ান হিলির অবসরের অপেক্ষা করতে থাকা গিলি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার উইকেট সামলানোর দায়িত্ব পাওয়ার আগে খেলেছিলেন ৭৬টি ওয়ানডে!

     

    দশ আর গোলামের রাজা

    ৭২ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে রীতিমত অন্ধকার দেখছে তখন জিম্বাবুয়ে। ডোনাল্ড টিরিপানো করলেন অপরাজিত ৪৯ রান। দশ বা এগারো নাম্বারে নেমে জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোর এটিই। তিনি নিয়েছেন ব্রায়ান স্ট্র্যাংয়ের রেকর্ডটা। তবে স্ট্র্যাং যখন এ রেকর্ড করেছিলেন, জিম্বাবুয়ের ছিল সুসময়। পাকিস্তানের সঙ্গে শেখপুরায় তিনি যেবার দশ নম্বরের নেমে ৪২ রান করলেন, জিম্বাবুয়ের স্কোর ছিল ৮ উইকেটে ২৭৪। স্ট্র্যাংয়ের ব্যাটিংয়ে জিম্বাবুয়ে গিয়েছিল ৩৭৫ রান পর্যন্ত, ম্যাচটা ড্রও হয়েছিল। টিরিপানোর ব্যাটিংয়ে জিম্বাবুয়ের স্কোর গেল ১৬৪ পর্যন্ত, কিন্তু ইনিংস পরাজয় তো আটকালো না!

     

    ‘অভিশপ্ত’ ভেন্যু!

    নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচ হেরে টানা ছয়বার বুলাওয়েতে হারলো জিম্বাবুয়ে। গত নয় টেস্টে জিম্বাবুয়ে এ মাঠে হেরেছে আটবার। সেই ২০০১ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে জয়টাই একমাত্র, তাছাড়া মোট ২০টি টেস্টের ১২টিতেই হারতে হয়েছে জিম্বাবুইয়ানদের। কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব, জিম্বাবুয়ের জন্য যেন এক বিভীষিকাই! নিজেদের আরেক ভেন্যু হারাতে আবার জিম্বাবুয়ের রেকর্ডটা ভালই, ৩২ টেস্টে ১৬ হারের বিপরীতে ৮টি জয়ও আছে। তবে কিউইদের সঙ্গে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটাও বুলাওয়েতেই, জিম্বাবুয়ে হারারেতে না খেলার জন্য আফসোস করতেই পারে!
     

    নড়বড়ে উইলিয়ামসন

    ৯১ রানে গ্রায়েম ক্রেমারের বলে প্রথম স্লিপে হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে ক্যাচ দিলেন। এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো টেস্টে নড়বড়ে নব্বইয়ে কাটা পড়লেন কিউই অধিনায়ক। সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার রেকর্ডটার জন্য অপেক্ষাটাও বাড়লো তাই কেন উইলিয়ামসনের। সব মিলিয়ে টেস্টে তৃতীয়বার সেঞ্চুরি কাছে এসেও দূরে সরে গেল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট ৯ বার। পূর্বসূরী ন্যাথান অ্যাস্টল ও স্টিফেন ফ্লেমিং-ও নড়বড়ে নব্বইয়ে আউট হয়েছিলেন ৯ বার করেই। ওয়ানডেতে যে ছয়বার নড়বড়ে আউট হয়েছেন উইল্যামসন, তার পাঁচটিই আবার গত বছর!

     

    বিদেশ বিভুঁই, তাতে কী!

    এ মাঠেই একমাত্র সেঞ্চুরিটা করেছিলেন রড ল্যাথাম। পিতাকে ছাড়িয়ে গেছেন আগেই, পুত্র টম ল্যাথাম বুলাওয়েতে করলেন নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পথে কেন উইলিয়ামসনকে ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে কমপক্ষে ১০০০ রান করা কিউইদের বেশী গড়ের তালিকায় তিনি দ্বিতীয়। ল্যাথামের(৪৫.৮১) আগে আছেন শুধু স্টিফেন ফ্লেমিং। সাবেক কিউই অধিনায়কের বিদেশের মাটিতে গড় ৪৫.৯২।
     

    উইলিয়ামস ও ক্রেমারের দুই মেরু

    যেন হঠাৎ করেই অধিনায়কত্ব পেয়ে গেলেন গ্রায়েম ক্রেমার। অধিনায়ক হিসেবে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশী রান দেয়ার ‘কীর্তি’টা এখন জিম্বাবুইয়ান অধিনায়কেরই। তিনি ছাড়িয়ে গেছেন উইলিয়ামসনের উত্তরসূরি ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকে। ভারতের সঙ্গে এক ইনিংসে ৫৮ ওভার বল করে ভেট্টোরি গুনেছিলেন ১৭৮ রান। উইকেট পেয়েছিলেন ৩টি। ক্রেমার বল করেছেন ভেট্টোরির চেয়ে ৫ ওভার কম, রান দিয়েছেন ১৮৭। একটা উইকেট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে জিম্বাবুয়ের নতুন অধিনায়ককে। শন উইলিয়ামসের আবার একটা সুখস্মৃতি যুক্ত হয়েছে এ ম্যাচ দিয়ে। নিল জনসনকে(১০৭) ছাপিয়ে জিম্বাবুয়ের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান এখন উইলিয়ামসই(১০৬)। আট নম্বরে নেমে  জিম্বাবুয়ের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরও এখন উইলিয়ামসেরই।

     

    বড় জয়!

    সব মিলিয়ে বড় জয়টা এই জিম্বাবুয়ের সঙ্গেই। ২০১২ সালে নেপিয়ারে কিউইরা জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছিল ইনিংস ও ৩০১ রানে। এ টেস্টে ইনিংস ও ১১৭ রানে জিতেছে নিউজিল্যান্ড, দেশের বাইরে এটি দ্বিতীয় বড় জয় তাদের। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়েকেই হারারেতে ইনিংস ও ২৯৪ রানে হারিয়েছিল কিউইরা।