• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    এবার কি দেখা যাবে ক্লপ-জাদু?

    এবার কি দেখা যাবে ক্লপ-জাদু?    

    ৫ মে, ২০১৪। এ দিনটার কথা আর কেউ মনে না রাখলেও লিভারপুল সমর্থকেরা ঠিকই মনে রেখেছেন। কি এমন হয়েছিল এই দিনে? স্মৃতি ভাল না হলে গুগল করলেই জানতে পারবেন, এই দিনেই ০-৩ গোলে এগিয়ে থেকেও ক্রিস্টালে প্যালেসের কাছে শেষ নয় মিনিটে তিন গোল খেয়ে বসেছিল লিভারপুল। ফলশ্রুতিতে ভঙ্গ হয় ’৯০-এর পর প্রিমিয়ার লিগ জেতা। শৈশবের ক্লাবটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগ নামক সোনার হরিণ জয়ের এত কাছে এসেও হার মানতে হয়েছিলো স্টিভেন জেরার্ডকে। জার্সিতে মুখ লুকিয়ে সুয়ারেজের সেদিনের শিশুতোষ কান্না আজো লিভারপুল সমর্থকদের নাড়া দেয়।

     

    সেবারের কোচ ব্রেন্ডন রজার্সের বদলে অ্যানফিল্ড হটসিটে বসেছেন হালের সেনসেশেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। সোনালী চুল, চশমা ও মুখভর্তি দাড়িময় সদা হাস্যোজ্জ্বল এই জার্মান দল গুছিয়ে প্রতিপক্ষদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, এবার লিভারপুল থেকে দারুণ ও অপ্রত্যাশিত কিছুই দেখতে যাচ্ছে ফুটবলবিশ্ব। গত মৌসুমে ভাঙ্গাচোড়া এক লিভারপুলকে নিয়েও কার্লিং কাপ ও ইউরোপা লিগের ফাইনালে কোয়ালিফাই করে ইতোমধ্যেই নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন ক্লপ।

     

     

    দুশ্চিন্তার নাম গোলরক্ষকঃ

     

    গেল মৌসুমে লিভারপুলের গোল সামলানোর পরীক্ষায় রীতিমত ফেলই মেরেছেন বেলজিয়াম সিমন মিনিওলে। একাধিক ভুলে জেতা ম্যাচে পয়েন্ট খোয়াতে হয়েছে অলরেডদের। বাজে পারফরম্যান্সের দরুণ হারিয়েছেন নিজ সমর্থকদের আস্থা। তাই তো এবারের দলবদলে কেনা অনভিজ্ঞ জার্মান মিলোস কারিওসকেই নাম্বার ওয়ান হিসেবে দেখতে চাচ্ছিলেন কপাইটরা। কিন্তু প্রাক-মৌসুমে আঙ্গুল ভেঙ্গে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে চলে যাওয়া কারিওসের জায়গায় মিনিওলেকেই দেখা যাবে লিভারপুলের গোলে। লিভারপুল সমর্থকদের আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্য নিজের সর্বোচ্চ দেওয়ার কোনো বিকল্পই নেই মিনিওলের সামনে।

     

    প্রশ্ন আছে রক্ষণ নিয়েওঃ

    লিভারপুলের ক্লিনশিট রাখতে না পারার কারণ শুধু মিনিওলে নন, সমান "অপরাধী" স্কারটেল, লভরেনরাও। দীর্ঘদিনের সেনানী স্কারটেল এবং ২৫ মিলিয়ন খরচ করে কেনা লভরেনও মৌসুমজুড়ে ছিলেন খুবই সাধারণ। লেফটব্যাক আলবার্তো মরেনোকে তো বিক্রি করার জন্য লিভারপুল সমর্থকেরা পিটিশনও বানিয়েছিলেন! ডিফেন্সে ধারাবাহিকতা দেখাতে পেরেছেন কেবল সাখো এবং ক্লাইন।

     

    স্কারটেল ফেনেরবাচেতে চলে যাওয়ায় এবার তার শূণ্যস্থান পূরণ করতে ক্লপ দলে ভিড়িয়েছেন এস্তোনিয়ার কাপ্তান রাগনার ক্লাভান ও জোয়েল মাতিপকে। সেন্ট্রাল ডিফেন্সের জন্য চার সেন্টার ব্যাকের নিজেদের মধ্যকার লড়াইটা তাই বেশ হাড্ডাহাড্ডিই হতে যাচ্ছে বলা যায়।

     

    মধ্যমাঠের ভরসা দুই ব্রাজিলিয়ানঃ

    কৌতিনহো ও ফিরমিনো। ব্রাজিলিয়ান এই জুটির পা থেকেই এসেছে লিভারপুলের গত মৌসুমের অধিকাংশ গোল ও অ্যাসিস্ট। মৌসুমের প্রথমদিকে নিজের ছায়া হয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ভাগে জ্বলে ওঠেন ফিরমিনো। আর কৌতিনহোর কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা এই মিডফিল্ডার এবারো ক্লপের ট্যাকটিক্সের কেন্দ্রেই থাকবেন এমনটাই স্বাভাবিক।

     

    এই দুই ব্রাজিলিয়ানের ‘সাপোর্টিং কাস্ট’-এ আছেন চান, লালানা, হেন্ডারসন, মিলনার। নতুনদের মধ্যে আছেন মার্কো গ্রুজিক এবং জর্জিনিও ওয়াইনাল্ডাম। হেন্ডারসন ও মিলনারের নেতৃত্ব, চান ও লালানার পজেশন ধরে রাখা, ফিরমিনো ও কৌতিনহোর জাদু এবং গ্রুজিক ও ওয়াইনাল্ডামের প্রতিভা। সবমিলিয়ে মধ্যমাঠের তারকাদের কাছ থেকে আশাটা একটু বেশিই থাকবে অলরেড সমর্থকদের।

     

    স্টারিজ, বেন্টেকের বাঁচা-মরার মৌসুমঃ

    লিভারপুলে নিজের প্রথম মৌসুম ভাল গেলেও এরপর থেকে ইঞ্জুরির কারণে নিজের ছায়া হয়েই আছেন ড্যানিয়েল স্টারিজ। তার বিকল্প হিসেবে দলে ভেড়ানো ক্রিশ্চিয়ান বেন্টেকেও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এজন্যই গত মৌসুমে ফিরমিনোকে সাইন করানোর পাশাপাশি লিলেতে ধারে থাকা ডিভক ওরিগিকেও ফিরিয়ে এনেছিলেন ক্লপ।

     

    তাই এই মৌসুমটি ওরিগি, স্টারিজ, বেন্টেকের জন্য হতে যাচ্ছে লিভারপুলে ক্যারিয়ার নির্ধারণী এক মৌসুম। পারফরম্যান্সের উন্নতি না হলে হয়তো ১৮-১৯ মৌসুমে এই তিনজনকে লিভারপুলের লাল জার্সি-শর্টসে নাও দেখা যেতে পারে। ফরওয়ার্ড লাইনে এবার যোগ দিয়েছেন সাউদাম্পটনের অন্যতম তারকা সাদিও মানে। প্রাক-মৌসুমে বার্সার বিপক্ষে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হয়ে স্টার্টিং একাদশে থাকার সম্ভাবনা বেশ জোরালোই করে রেখেছেন এই উইঙ্গার।

     

    সম্ভাব্য ফরমেশনঃ ৪-২-৩-১, ৪-৩-৩

     

    ইউনাইটেড, সিটি, চেলসি, আর্সেনালের মত তারকাঠাসা না হলেও লিভারপুলের কোচ যে ইয়ুর্গেন ক্লপ! মৌসুম শুরুর আগে তাই বলে রেখেছেন, এই লিভারপুল এখন তার এবং এই দলকে নিয়েই তিনি সমর্থকদের দারুণ কিছু উপহার দিতে চান। ক্লপের এহেন হুঙ্কারের পর গড়পড়তার এক দল থাকা সত্ত্বেও লিভারপুলকে সেরা চারের লড়াই থেকে এখনই বাতিলের খাতায় ফেলছেন না কেউই। ক্লপ কি পারবেন লিভারপুলকে আবারো প্রতিনিয়ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলা এক দলে ফিরিয়ে নিতে? ফিরমিনো, কৌতিনহো, হেন্ডারসন, মানেরা কি পারবেন গুরু এবং সমগ্র লিভারপুলবাসীকে অভূতপূর্ব কিছু উপহার দিতে? উত্তর গুলো জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরো বছরখানেক।