অসম্ভবকে সম্ভব করল বার্সেলোনা!
দ্বিতীয় লেগ শুরুর আগে লুইস এনরিকে বলেছিলেন "পিএসজি চার গোল করতে পারলে, আমার খেলোয়াড়েরাও ছয় গোল করতে সক্ষম।" বার্সা ম্যানেজারের সেই কথাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হল! অসম্ভবকে সম্ভব করে চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসটা নতুন করে লিখল বার্সেলোনা! রোমাঞ্চকর দ্বিতীয় লেগে ৬-১ গোলের জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেছে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজের দল! দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৫ গোলের জয় নিয়ে অবিশ্বাস্য এক গল্পের জন্ম দিল স্প্যানিশ ক্লাবটি।
প্রথম লেগে ৪-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর খোদ বার্সা সমর্থকেরাই হয়ত স্বপ্ন দেখেননি পরের রাউন্ডে খেলার। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে নাটকীয়তায় ভরা এক ম্যাচ জিতে প্যারিসের সেই হারের প্রতিশোধই নিল এনরিকের দল। ইউরোপিয়ান যেকোনো প্রতিযোগিতায় চার গোলে পিছিয়ে থাকার পরও পরবর্তী রাউন্ডে ওঠা একমাত্র দল এখন বার্সেলোনাই। ন্যু ক্যাম্পে হাজির হওয়া ৯০ হাজার দর্শকের জন্য তো বটেই, যে কোনো ফুটবল ভক্তের জন্যই অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ উপহার দিয়েছে বার্সা।
অথচ ৯০ মিনিটেও মনে হচ্ছিল শেষ পর্যন্ত আফসোস নিয়েই মাঠে ছাড়তে হবে বার্সাকে। মাত্রই পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচে সমতায় এনেছেন নেইমার। রাতে ৫-১ গোলে এগিয়ে থেকেও এডিনসন করা কাভানির অ্যাওয়ে গোলে ভর করে তখনও দুই লেগ মিলিয়ে এগিয়ে পিএসজিই। ন্যু ক্যাম্পের অনেকেই হয়ত বাড়ি ফেরার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু নাটকের শেষ অংশ তখনও বাকি!
৯৫ মিনিটে নেইমারের বাড়ানো পাসে পা ছুঁয়ে পিএসজি গোলরক্ষক কেভিন ট্র্যাপের মাথার উপর দিয়ে বল জালে জড়িয়ে গোটা ন্যু ক্যাম্পেকে আনন্দ ভাসান সার্জি রবার্তো। ওই গোলেই নিশ্চিত হয় বার্সার জয়। নিজের ক্যারিয়ারে হয়ত এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল খুব কমই করবেন এই রাইটব্যাক। অথচ ৭৬ মিনিটে রাফিনহার বদলী হয়ে নামার সময় হয়ত পরাজয় নিশ্চিত জেনেই মাঠে নেমেছিলেন সার্জি রবার্তো! ম্যাচশেষে তিনিই বার্সার সব আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু।
সার্জি রবার্তোর ওই গোলের আগে বেশ কয়েকবার পাল্টেছে ম্যাচের সমীকরণ। তবে শুরুটা দুর্দান্তই করেছিল বার্সেলোনা। বড় জয়ের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে মাত্র ৩ মিনিটেই দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন সুয়ারেজ। প্রথমার্ধ শেষের আগে সেই লিড দ্বিগুণও হয়েছিল, পিএসজি লেফটব্যাক কুরযাওয়ার আত্মঘাতী গোলে।
পিএসজির চার গোলের লিড অর্ধেকে নামিয়ে আনার সাময়িক তৃপ্তি নিয়ে প্রথম ৪৫ মিনিটের খেলা শেষ করে বার্সেলোনা। অন্যদিকে উনাই এমরির দলের জন্য প্রথমার্ধটা ছিল অস্বস্তিকরই! বার্সেলোনার হাই প্রেসিং কৌশলের সাথে সেসময় সামান্যই মানিয়ে নিতে পেরেছিল পিএসজি। প্রথম মিনিট থেকেই রক্ষণাত্মক খেলতে শুরু করা পিএসজিকে সেই ভুলের মাসুল দিতে হয়েছে ম্যাচ হেরে।
প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও প্রাণবন্ত সূচনা করে বার্সেলোনা। ৫০ মিনিটে নেইমারকে ফাউল করার অপরাধে ম্যাচের প্রথম পেনাল্টিটা পেয়ে যায় এনরিকের দল। যদিও রিপ্লে দেখা মনে হয়েছে, নেইমার ইচ্ছা করে লাফ দিয়েছিলেন। স্পট কিক থেকে গোল করেন লিওনেল মেসি। পিএসজির চার গোলের লিড তখন ঠুনকোই মনে হচ্ছিল বার্সার একের পর এক আক্রমণে।
আগের ম্যাচে দুই গোল করা ডি মারিয়া এদিন শুরুতে ছিলেন বেঞ্চে। ৫৫ মিনিটে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে মাঠে নামান পিএসজি কোচ। বড় জয়ের আশায় ডিফেন্সে মাত্র তিন জন নিয়ে খেলা বার্সেলোনার রক্ষণে তখন পর্যন্তও তেমন ভীতি সৃষ্টি করতে পারেননি ড্রাক্সলার, কাভানিরা। ডি মারিয়া নামার পর কিছুটা সংগঠিত হয় পিএসজির আক্রমণভাগ।
৬২ মিনিটে এডিনসন কাভানি গোল করে গোটা ন্যু ক্যাম্পে ডেকে আনেন রাজ্যের নীরবতা! জিততে হলে তখন বাকি ২৮ মিনিটে বার্সার দরকার তিন গোল! গোলের পর দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে পিএসজি। আক্রমণে ধার বাড়িয়ে আরও কয়েকবার বার্সার রক্ষণ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন কাভানি, ডি মারিয়ারা। তবে ম্যাচ শেষে সহজ সুযোগ গুলো কাজে না লাগার আফসোসেই পুড়তে হয়েছে শেষ পর্যন্ত পিএসজির খেলোয়াড়দের।
কাভানির গোলের পর সমর্থকদের সাথে খেলোয়াড়েরাও যেন হারটা মেনেই নিয়েছিলেন তখন! ওই একটা গোলই শেষ পর্যন্ত দুই দলের ব্যবধান গড়ে তুলবে বলেই মনে হচ্ছিল তখনও। কিন্তু নাটকের শেষ ছত্র তখনও বাকি। আর সেই খন্ডচিত্রের নায়ক নেইমার। ৮৮ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে দারুণ এক গোল করেন এই ব্রাজিলিয়ান। তখনও বার্সার দরকার আরও দুই গোল! এমন সময় ৯১ মিনিটে সুয়ারজেকে ফাউল করার অপরাধে পিএসজির বিরুদ্ধে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি! দ্বিতীয় স্পট কিক থেকে আবারো নেইমারই গোল করে ৫-৫ এ সমতা আনেন ম্যাচে। এর কিছুক্ষণ পরই আসে সার্জি রবার্তোর সেই অবিস্মরণীয় মুহুর্ত।
এই জয়ের পর রেকর্ড দশমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল বার্সেলোনা।