বার্সাকে দুঃস্বপ্ন উপহার দিলেন দিবালা
তাঁর তুলনা হয় লিওনেল মেসির সাথে। খেলার ধরণের সাথে দু'জনের দেশটাও একই হওয়ায় মিল খুঁজে পাওয়াটা কঠিন কিছু নয়! এই তুলনার কথা জানতেন দিবালা নিজেও। ম্যাচের আগেই জানিয়েছিলেন মেসির প্রতি শ্রদ্ধার কথা। বলেছিলেন মেসি নয়, তিনি দিবালা হয়েই থাকতে চান। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আট, প্রতিপক্ষ বার্সেলোনা। নিজের পরিচয়টা আলাদা করে জানান দেয়ার এর চেয়ে বড় উপলক্ষ্য আর কিই বা হতে পারত? পাউলো দিবালা করলেন জোড়া গোল। আর তাতে তাঁর দল জুভেন্টাস বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে সেমিফাইনালের টিকেটটা প্রায় নিশ্চিত করেই ফেলল প্রথম লেগ শেষেই!
৭ ও ২২ মিনিটে দর্শনীয় দুই গোল করে বার্সেলোনাকে হারানোর নায়ক পাউলো দিবালা। দ্বিতীয়ার্ধের দশ মিনিটের সময় কর্নার থেকে কিয়েলিনি করেন তৃতীয় গোলটি। জুভেন্টাসের হয়ে শেষবার চ্যাম্পিয়নস লিগে জোড়া গোলের দেখা পেয়েছিলেন যিনি তিনিও এক আর্জেন্টাইন! ২০১৫ সালের মার্চ মাসে জুভেন্টাসের হয়ে জোড়া গোল করেছিলেন তেভেজ।
২৩ বছর বয়সী আর্জেন্টাইনের সব আলো কেড়ে নেয়াটা লিওনেল মেসি একরকম দর্শক হয়েই দেখেছেন প্রথমার্ধে। সুয়ারেজ নেইমাররও গোলের সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হন। অবশ্য পুরো ম্যাচে সুয়ারেজ বেশ কয়েকবার সুযোগ পেলেও হাতছাড়া করেছেন।
ম্যাচের শুরু থেকেই বার্সার উপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন হিগুয়েইন, দিবালারা। এই দুই আর্জেন্টাইনের বোঝাপড়া মাঠে এতোটাই ভালো ছিল যে ম্যাথিউ, উমিতিতিরা শুরুতেই চাপে পড়ে যান। সেই চাপ সামলে না উঠতেই টার স্টেগানের জালে বল জড়িয়ে বসেন দিবালা। বা পায়ের বাঁকানো শটে গোল করে জুভেন্টাসকে ঘরের মাঠে এগিয়ে দেন দিবালা।
এরপর ম্যাচে ফেরার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল বার্সা। মাঝমাঠ থেকে মেসির ডিফেন্স চেরা থ্রু বল খুঁজে পেয়েছিল ইনিয়েস্তাকেও। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালেন বুফন! দিবালার মতো জুভেন্টাস গোলরক্ষকও এবার জাদুই দেখালেন, কিন্তু বা হাতে! ঠেকিয়ে দিলেন নিশ্চিত গোল হতে যাওয়া ইনিয়েস্তার শট। সমতায় ফিরতে না পেরে পরের মুহুর্তেই উল্টো গোল খেয়ে বসে বার্সা। ডিবক্সের বাইরে থেকে দিবালার জোরালো শট সবাইকে অবাক করে দিয়ে জালে জড়ালে বাইশ মিনিটেই দুই গোলে এগিয়ে যায় ম্যাক্সিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রির দল। প্রথমার্ধের বাকি সময় দিবালা-হিগুয়েইন-মাঞ্জুকিচদের সামলাতেই ব্যস্ত ছিল বার্সেলোনা।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য কিছুটা ফিরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছিল লুইস এনরিকের দল। নিষেধাজ্ঞায় ছিলেন বার্সার মিডফিল্ড কারিগর সার্জিও বুসকেটস। তাঁর জায়গায় শুরু করেছিলেন মাসচেরানো। মিডফিল্ডে আধিপত্য বিস্তারের আশায় প্রথমার্ধ শেষে লেফটব্যাক জেরেমি ম্যাথিউকে বসিয়ে এনরিকে মাঠে নামান আন্দ্রে গোমেজকে। তাতে অবশ্য কিছুক্ষণের জন্যে বল পজেশনও বেড়েছিল বার্সার। শুরুতেই গোল করার সুযোগও পেয়েছিলেন মেসি, সুয়ারেজরা। কিন্তু সব সমীকরণ আবার পাল্টে যায় ৫৫ মিনিটে। কর্নার থেকে গোল করে জুভেন্টাসের জয় নিশ্চিত করেন জর্জিও কিয়েলিনি।
সাথে প্যারিসের মতো তুরিনেও মেসিদের জন্যে ফিরে আসল আরও একটি দুঃস্বপ্নের রাত। তবে এদিন কিছু গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন বার্সা খেলোয়াড়েরা। একটি অ্যাওয়ে গোল হয়ত পাল্টে দিতে পারত দ্বিতীয় লেগের হিসেব-নিকেশও! কিন্তু মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে বুফনের দৃঢ় হাতের তালুতে। ম্যাচ জয়ের কৃতিত্বটা দিবালার হলেও প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও বেশ কয়েকটি দারুণ সেভ করে ক্লিনশিট রাখার কৃতিত্বটা বুফনের একারই!
এই নিয়ে প্রথমবারের মতো লুইস এনরিকের অধীনে পরপর দুই অ্যাওয়ে ম্যাচেই হারল বার্সেলোনা। পিএসজির বিপক্ষে ন্যু ক্যাম্পের সেই অবিশ্বাস্য ফিরে আসার গল্পটাই হয়ত আবারও লিখতে চাইবেন বার্সা ফ্যানরা। কিন্তু পিএসজি আর জুভেন্টাসের পার্থক্যটাও তো তাঁদের অজানা নয়!