• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    ইতিহাস গড়েই চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ

    ইতিহাস গড়েই চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ    

    প্রাণবন্ত এক প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই খেলার দখল রিয়ালের হাতে। কার্ডিফের স্টেডিয়ামে তখনও খেলায় ১-১ গোলেই সমতা। মাঝমাঠে আধিপত্য বিস্তার করে রাখলেও গোলটা যেন আসছিল না কিছুতেই! মারিও মাঞ্জুকিচের অসাধরণ এক গোলে সমতায় ফিরেছিল জুভেন্টাস। সেই গোলের বদলা নিতে আরও এক ভয়ঙ্কর সুন্দর মুহুর্তের জন্ম দিলেন কাসেমিরো। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারের দূরপাল্লার শট খেদিরার পায়ে লেগে ঢুকে গেল জালে! ২-১ গোলে এগিয়ে যাওয়ার মিনিট তিনেকের মধ্যেই রোনালদোর হাতেই নিশ্চিত হয়ে গেল রিয়ালের ইতিহাস গড়া! মদ্রিচের ক্রসে ডান পায়ের ছোঁয়ায় জালে বল জড়িয়ে যখন ব্যবধান দ্বিগুণ করলেন- তখনই একরকম নিশ্চিত হয়ে গেল টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগটা রিয়ালের ঘরেই যাচ্ছে! ম্যাচশেষের ঠিক আগে ব্যবধানটা বাড়িয়ে জুভেন্টাসের লজ্জাটা কেবল বড়ই করেছেন অ্যাসেনসিও। 

    সবমিলিয়ে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাসকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা ধরে রাখল রিয়াল মাদ্রিদ। আর এই নিয়ে টানা ৫ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল হার দিয়েই শেষ করল জুভেন্টাস।



    চ্যাম্পিয়নস লিগে এই মৌসুমের সর্বোচ্চ গোল দেয়া দল বনাম সবচেয়ে কম গোল হজম করা দল- কার্ডিফের ফাইনালের ট্যাগলাইনটা ছিল এমনই। গোটা মৌসুমে মাত্র তিন গোল হজম করা জুভেন্টাসের জালে আজ এক রাতেই চার বার বল ঢুকিয়ে দিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বটাই নতুন করে জানান দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। লস ব্ল্যাংকোসদের ইতিহাস গড়ার দিনে রোনালদো নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্যন্য এক উচ্চতায়। ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের তিন ফাইনালে গোলের দেখা পেলেন পর্তুগিজ উইঙ্গার। তাঁর জোড়া গোলেই আসলে নিশ্চিত হয়েছে রিয়ালের ইতিহাস গড়া! চ্যাম্পিয়নস লিগে এই মৌসুম রোনালদো শেষ করলেন ১২ গোল নিয়ে।

    ফাইনালে গোলের খাতাটা খুলেছিলেন রোনালদোই। ম্যাচের ২০ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে কারভাহালের ক্রস খুঁজে পায় রোনালদোকে। ডান পায়ের নিখুঁত ফিনিশে বুফনকে কোনো সুযোগ না দিয়েই জালে বল জড়িয়ে রোনালদোই এগিয়ে দিয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদকে।

    রোনালদোর ওই গোলের আগ পর্যন্ত অবশ্য ভালোই খেলছিল জুভেন্টাস। শুরুর ৫ মিনিটেই দু'বার দুরপাল্লার শটে কেইলর নাভাসের পরীক্ষাটাও নিয়ে ফেলেছিলেন পিয়ানিচ, হিগুয়াইনরা। গোল হজম করার পর ম্যাচের শুরুর দিকের মতোই আক্রমণে ধার বাড়ায় ম্যাক্সিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রির দল। গোল আসে ২৭ মিনিটে। মারিও মাঞ্জুকিচের চোখ ধাঁধানো সিজার কিক কেইলর নাভাসকে হতবাক করে দিয়ে ঢুকে যায় রিয়ালের জালে। ১-১ গোলে সমতায় ফেরে ম্যাচ।  

    প্রথমার্ধে লড়াইটা হয় সেয়ানে সেয়ানে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। ৩-৫-২ ফরমেশনে খেলতে নামা জুভেন্টাসের দুই ফুলব্যাক দানি আলভেজ ও অ্যালেক্স সান্দ্রোরা দুই উইঙয়ে আধিপত্য হারাতে থাকেন। সাথে মাঝমাঠে পিয়ানিচ ও খেদিরারাও সুবিধা করতে পারছিলেন না। মদ্রিচ, ক্রুসদের সাথে বেইলের জায়গায় খেলতে নামা ইস্কো মাঝমাঠের দখলটা পোক্ত করে নিচ্ছিলেন দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই। সেই সুবাদে গোল আসে ৬১ মিনিটে। কাসেমিরোর ওই গোলটা আসলে রিয়ালের চাপ প্রয়োগ করে খেলারই ফল। 

    ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো পিছিয়ে পড়ে আরও একবার গোলের জন্য হন্যে হয়ে খেলতে থাকলেও পরের দফায় আর সফলতার মুখ দেখেননি হিগুয়াইন, দিবালারা। উল্টো কাসেমিরোর গোলের পর ৬৪ মিনিটে রোনালদোর গোল জুভেন্টাসের ম্যাচে ফেরার সব আশাই শেষ করে দেয়।

    তিন গোল হজমের পর বদলী হয়ে খেলতে নেমে দুই হলুদ কার্ড দেখে ৮৪ মিনিটে মাঠ ছাড়েন কুয়াদ্রাদোর। জুভেন্টাসের হতাশার গল্পটা অবশ্য শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় রূপ নেয়; চতুর্থ গোল হজম করে। ৯০ মিনিটে বদলী অ্যাসেনসিওর গোলে কার্ডিফ থেকে ভুলে যাওয়ার মতো এক রাতের স্মৃতিই তুরিনের ফিরতি যাত্রায় সঙ্গী হয়েছে বুফন, কিয়েলিনিদের।