চেনা মঞ্চে অচেনা ধোনি
জুলাই, ২০১৩। ত্রিনিদাদ। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল। শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে গেছে ২০১ রানে। ৩২তম ওভারে রোহিত শর্মা আউট হলেন, ভারতের রান হয়ে গেছে ১৩৯। জয়ের জন্য প্রয়োজন ৬৩। মহেন্দ্র সিং ধোনির আদর্শ মঞ্চ বলা চলে, শেষ করে আসার কাজটা ভারতীয় অধিনায়কের জন্য সহজই। সেই সহজ কাজটাই কঠিন বানিয়ে দিলেন ধোনির সতীর্থ লেট মিডল অর্ডার ও লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। ৪৭তম ওভারে ৯ম ব্যাটসম্যান বিনয় কুমার আউট হলেন, জয় থেকে তখনও ২০ রান দূরে ভারত। ধোনির সঙ্গী ইশান্ত শর্মা। তাকে নিয়েই কাজটা শেষ করলেন ধোনি, ইশান্ত ৭ বলে ২ করে অপরাজিত। আর ৫২ বলে ৪৫ করে অপরাজিত ধোনি, ৫টা চার, ২টা ছয়। ধোনি ম্যাচসেরা। ধোনি ফিনিশিংয়ের নায়ক।
জুলাই, ২০১৭। অ্যান্টিগা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ৪র্থ ওয়ানডে। ভারত জিতেছে দুইটি, একটা ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। এ ম্যাচ জিতলেই সিরিজ ভারতের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থমকে গেছে ১৮৯ রানেই। পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করে ২০০ এর নিচে ক্যারিবীয়রা শেষ আটকে গিয়েছিল ২০০৬ সালে, কিংস্টনে ভারতের সঙ্গেই ১৯৮ রানে। সে ম্যাচটা হেরেছিল ভারত। এরপর ২০০ এর নীচে কোনো রান তাড়া করে ভারত কখনও ব্যর্থ হয়নি। কালকের আগ পর্যন্ত।
১৩তম ওভারে আউট তৃতীয় ব্যাটসম্যান দীনেশ কার্তিক। ভারতের রান ৪৭। রাহানে আছেন, নেমেছেন ধোনি। দুজনের জুটি ৫৪ রানের। রাহানের আউটের সময় ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ৮৯ রান। ধোনির আদর্শ মঞ্চ। তবে এর আগেই রানের চাকাটা ঘুরেছে ধীরলয়ে। ২১ থেকে ৪০তম ওভার পর্যন্ত ভারত তুলেছে ৫৪ রান। ২০০১ সালের পর এই ওভারগুলোতে ভারতের সবচেয়ে কম রান। এই ২০ ওভারে অর্ধেকের বেশি বল খেলেছেন ধোনি, ৬৫ বলে ২৪ রান করেছেন ৩৬.৫৪ স্ট্রাইক রেটে। অচেনা ধোনি। চেনা মঞ্চটা ধীরে ধীরে হয়ে যাচ্ছে অচেনা। আসলেই কি তাই? ভারতীয় ড্রেসিংরুমে কি একটা বড় স্বস্তির বাতাস তখনও বয়ে দেননি এমএস?
কেদার যাদব আউট হয়েছেন, পান্ডিয়া ফিরেছেন। ধোনির ফিফটি হয়নি তখনও। ১০৭ বলে ৪৯ রান তার। তখনই নিশ্চিত হয়ে গেছে, ফিফটি হলেও ভারতের হয়ে ২০০১ সালের পর সবচেয়ে ধীরগতির হবে তা। হলোও তাই। ২০০৫ সালে ফিফটি করতে ১০৫ বল খেলেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। ধোনি খেললেন ১০৮ বল।
ধোনি গিয়ার পরিবর্তন করবেন। ধোনি শেষ করে আসবেন। ড্রেসিংরুমে কোহলির মনে হয়তো এ আশাটা ছিল তখনও। দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা কেসরিক উইলিয়ামসের বলে যেন বেশি করে ভুগছিলেন ধোনি। সেই উইলিয়ামস ৪৯তম ওভারের শেষ বলটা করলেন অফস্টাম্পের বাইরে, ফুললেংথে। সামনের পা সরিয়ে নিয়ে জোরের ওপর চালালেন ধোনি। অন্যদিন হলে হয়তো এ শটটাই পেরিয়ে যেত লং-অন, ২ ওভারে ১৬ রানের প্রয়োজনীয়তাটা অনেকখানি কমিয়ে আনতে পারতেন ধোনি। কিন্তু আজ অন্যদিন নয়। জোসেফের হাতের ধরা পড়লেন। ১১৪ বলে ৫৪, স্ট্রাইক রেট ৪৭.৩৬। ২৫ এর বেশী রানের ইনিংসে সবচেয়ে ধীরগতির ইনিংস খেলে বিদায় নিলেন ভারতের ফিনিংশিংয়ের নায়ক। ‘ফিনিশ’ না করেই!
ভারত হারলো। ২০১৩ সালের পর কমপক্ষে ৯৫ ওভার খেলা হয়েছে এমন ম্যাচের মধ্যে সবচেয়ে কম রানরেটের ম্যাচটা শেষ হলো। ১৯৯৮ সালের পর ভারত প্রথমবার ১৯০ বা এর নিচের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ব্যর্থ হলো।
২০১৩ সালে ধোনি ছিলেন লো-স্কোরিং ম্যাচে ভারতের নায়ক। ২০১৭ সালে ধোনি বনে গেলেন লো-স্কোরিং ম্যাচে ভারতের খলনায়ক।