'এ মুহুর্তে মাশরাফির বিকল্প নেই'
২০১৫ বিশ্বকাপ : কোয়ার্টার ফাইনাল। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি : সেমিফাইনাল। শুধু দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নয়, বৈশ্বিক টুর্নামেন্টেও বাংলাদেশ এমন প্রথম মাইলফলকের স্বাদ পেয়েছে তার অধিনায়কত্বেই। দৃষ্টি সামনের দিকে এখন, নজরে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ। হঠাৎ করেই যেন মাশরাফি বিন মুর্তজার অধিনায়কত্ব নিয়ে কথা উঠলো, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের ‘কথা’ সে আলোচনা উসকে দিল। তবে নাজমুল বলছেন, এমন কিছু তো তিনি বলেননিই, উলটো মাশরাফিকে অধিনায়ক হিসেবে ভেবেই বিশ্বকাপের দিকে তাকাচ্ছেন তারা।
‘ওয়ানডে নিয়ে বা মাশরাফির অধিনায়কত্ব নিয়ে কথাই হয়নি। কিন্তু এমনভাবে সব জায়গায় প্রচারিত হচ্ছে, যেন মাশরাফিকে এখনই বাদ দেওয়া হচ্ছে, নতুন অধিনায়ক খোঁজা হচ্ছে। এরকম কোনও আলাপ হওয়ার কারণ নেই।’
‘দুইটি ব্যাপার মনে রাখতে হবে। প্রথমত, মাশরাফি শুধু একজন খেলোয়াড়ই নন। সে অধিনায়ক। তার যে দায়িত্বটি আছে, এই ভূমিকাটা সে যেভাবে সম্পন্ন করে যাচ্ছে এবং করে আসছে, বাংলাদেশে তার বিকল্প পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনো বিকল্প নেই তার। সে যতটা সুন্দরভাবে করে আসছে।”
শুধু অধিনায়কত্ব নয়, দলের পারফরমার হিসেবেও মাশরাফিকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই তার ‘আপনি যদি পারফরম্যান্সের কথা ধরেন, অবশ্যই পেস বোলার হিসেবে পারফরম্যান্সও তার অনেক ভালো। আমাদের যতজন ফাস্ট বোলার আছে, (তাদের মধ্যে) তার পারফরম্যান্স অনেক অনেক ভালো।’
পরিসংখ্যানও সমর্থন করে পাপনের কথা। অধিনায়কত্ব নেয়ার পর মাশরাফির চেয়ে বোলিংয়ে ভাল পারফরম্যান্স নেই আর কোনো বাংলাদেশি বোলারের, ২০১৬ সালেও ছিলেন দেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। সবকিছু নিয়ে, বোর্ডের পরিকল্পনা নিয়ে মাশরাফির সঙ্গে কথাও বলেছেন নাজমুল। মাশরাফিকে নিয়ে বেশ দৃঢ় কন্ঠেই বলেছেন, ‘আজকে পরিষ্কার বলে দিচ্ছি, ও যতদিন খেলতে পারবে, ততদিন ওকে বাদ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ সে শুধু খেলোয়াড়ই নয়, অধিনায়কও। ওর মতো অধিনায়ক বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন।’
‘মাথায় চিন্তা-ভাবনা সবসময় থাকবে, সাকিব চলে গেলে কি হবে, মুশফিক না থাকলে কি হবে। এই চিন্তা তো আমাদের সবসময় থাকবেই। কিন্তু এমন একটা ভাব হচ্ছে যেন আজকেই বাদ দিয়ে দিচ্ছি মাশরাফিকে। যেটা ওর জন্য অস্বস্তিকর, আমাদের জন্যও অস্বস্তিকর পরিবেশ।’
সেই অস্বস্তিকর পরিবশের পেছনে সংবাদমাধ্যমেরও একটা হাত আছে বলে মনে করেন তিনি, ‘সেদিন আমি যেটা বলেছি, সেটা পরিষ্কার। (টেলিভিশনে) আপনারা তো পুরোটা দেখান না। একটা অংশ দেখান তো, এতে লোকে বিভ্রান্ত হয়। ওখানে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভারতের ধোনির উদাহরণ দিয়ে যে, সে ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলবে না বলে এখনই ভারত তাদের নতুন অধিনায়ক এনেছে। বাংলাদেশে আমাদের সেই পরিকল্পনা আছে কিনা। আমি বলেছিলাম, এটার যে চিন্তা ভাবনা আছে, সেটার সবচেয়ে বড় উদাহরণ টি-টোয়েন্টি। পরের বিশ্বকাপের কথা ভেবে যেটা আমরা করেছি। কিন্তু ওটার সঙ্গে ওয়ানডের তো কোনো সম্পর্ক নাই।’
শুধু বোর্ড নয়, যে ক্রিকেটারকে নিয়ে এমন আলোচনা ওঠে, তিনিও অস্বস্তিতে পড়ে যান বলে মত বোর্ড প্রধানের, ‘এসব প্রশ্ন এই সময়ে ওঠা উচিতই না। আমাদের সামনে আরও অনেক খেলা আছে। একটা বিকল্প যদি আমরা না পাই, তার আগেই যদি একটা খেলোয়াড়কে নিয়ে এসব প্রশ্ন হয়, তাহলে তার মনের ভেতর কী যেতে পারে!’
‘ওর কথা চিন্তা করে আমার নিজের ভেতরও তো অস্বস্তি লাগে। যদি ওর জায়গায় থাকতাম যে থাকছি কি থাকছি না, বাদ পড়ব কি পড়ব না! তো আমি যেটাই করি, আগে খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলি। সেটাই হবে। যার কথা বলছি, সেই জানতে পারবে।’
মাশরাফি সেটা জেনেছেন। বিসিবি প্রধানের কথার পর জানবেন আরও অনেকেই!