যেভাবে পিএসজির হতে পারেন নেইমার
নেইমারকে পেতে সবকিছু করতেই প্রস্তুত পিএসজি। দলবদলের বিশ্বরেকর্ড গড়ে ২২২ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে ব্রাজিলিয়ান তারকাকে দলে ভেড়ানো সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছে। বিবিসি, স্কাই স্পোর্টসের সূত্র অন্তত তেমনটাই বলছে।
কাতারি মালিকের অধীনে পিএসজির বদলে যাওয়ার গল্পটা জানেন না এমন ফুটবল ভক্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেখানে নেইমারের সংযোজন যোগ করতে পারে বাড়তি মাত্রা। আগের রেকর্ডের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করে পিএসজিও দলবদলের বাজারের ইতিহাসটাই বদলে দিতে পারে নিমিষেই।
টাকার অঙ্ক চোখ কপালে তুলতে যথেষ্ট। দুই শ' বাইশ মিলিয়ন ইউরো! বাংলাদেশি টাকায় ২ হাজার ৮৭ কোটি ৪৫০ লাখের চেয়েও বেশি! অথচ এতো টাকার দিয়ে যারা একজন খেলোয়াড় কিনতে সেই পিএসজি নেই বিশ্বের ধনী ১০ ক্লাবের ভেতর। শীর্ষে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদের আনুমানিক মূল্য ধরা হয় ৩ বিলিয়ন পাউন্ড! চাইলে হয়ত তারাও বার্সার শর্ত পূরণ করে নেইমারের জন্য প্রস্তাব পাঠাতে পারত। কিন্তু এমন সাহস দেখায়নি শীর্ষে থাকা দুই ক্লাবও! কিন্তু ক্লাবের মোট দামের তিন ভাগের এক ভাগ দিয়েই নেইমারকে কেনার ‘দুঃসাহস’ দেখাচ্ছে পিএসজি!
নেইমারের সম্ভাব্য দলবদলে ঘিরে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে আরও। এমন কিছু তো আগে দেখেনি ফুটবল! সবকিছু পিএসজির মন মতো হলে দলবদলের দিনবদলের সূচনাটা হতে যাচ্ছে তাঁদের হাত ধরেই। কিন্তু এতো টাকা কি একবারেই বার্সাকে পরিশোধ করবে পিএসজি? না কিস্তিতে?ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লের (এফএফপির) চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে এতো বড় দলবদলের চুক্তিই বা কীভাবে সম্পন্ন করবে তারা? চাইলেই কি মালিকপক্ষের টাকার জোরে কিনে ফেলা যায় যে কাউকেই?
প্রশ্নের অন্ত নেই। নেইমার যদি সত্যিই পিএসজিতে যোগ দেন, সেক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা হতে পারে তা নিয়ে শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালের ফুটবল ফিন্যান্স বিশেষজ্ঞ ড.রব উইলসন জানিয়েছেন বিবিসিকে। তাঁর মতে কয়েক কিস্তিতেই বার্সাকে টাকা দেবে পিএসজি।
“ ধরা যাক নেইমারের জন্য পিএসজি ২০০ মিলিয়ন ইউরো দিতে প্রস্তুত। চুক্তি হয়ে গেল ১০ বছরের জন্য। প্রতি বছর ২০ মিলিয়ন ইউরো করে সে অর্থ পরিশোধ করতে পারে পিএসজি। এসব অবশ্য দুই ক্লাবের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ঠিক হয়। যেমন রোনালদোকে রিয়াল মাদ্রিদে আনার সময়, পুরো টাকাটাই একবারে দাবি করেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। রিয়ালকেও একবারেই দিতে হয়েছিল। তবে নেইমারের ক্ষেত্রে যেহেতু আরও বড় ধরনের চুক্তি হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় প্রথম কিস্তিতে ১০০ মিলিয়ন ইউরোর পর বাকিটা নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর পরিশোধের কথা বলতে পারে বার্সা”।
পুরো অর্থটা চাইলে একবারে অথবা কিস্তিতে পরিশোধ করা যায়। এসব অবশ্য নির্ভর করে দুই ক্লাবের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে। টাকা অঙ্কটা এখানে মুখ্য নয়। টাকা যেভাবেই দেয়া হোক না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে পিএসজি খরচ করতে প্রস্তুত। মাঠে আর মাঠের বাইরে- নেইমার তো সবকিছুতেই তারকা! ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্যমতে বিশ্বের ১৮ তম ধনী অ্যাথলেট তিনি। এমন তারকাদ্যুতি কাজে লাগিয়েই নেইমারের খরচ উঠিয়ে আনতে পারে পিএসজি!
না। জার্সি বিক্রি করে নয়। ড.রব বলছেন জার্সি বিক্রির এই ধারণাটি অনেকটা রূপকথার মতো। বাস্তবে জার্সি বিক্রির অর্থ পায় স্পন্সর প্রতিষ্ঠান। পিএসজির ক্ষেত্রে সেটা নাইকি। ক্লাবের তাই চুক্তির বাইরে অর্থ পাবার সুযোগ নেই। “আমার মনে হয় পিএসজি নেইমারের ইমেজ স্বত্বও কাজে লাগিয়েই শেষ পর্যন্ত ব্যবসা সফল হবে। আর নেইমারের মতো বড় মাপের খেলোয়াড় দলে ভেড়াতে পারলে তো পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের অভাব হবে না”। নেইমারের বিশ্বজোড়া তারকাদ্যুতিই পিএসজিকে বিশ্বরেকর্ড গড়ার সাহস যোগাচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।
কার্যত তাই নেইমারের পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হলেও, দিনশেষে মালিকপক্ষের কাছে ব্যবসায়িক সাফল্যটাই আসল। আর ফুটবল ফিন্যান্স এই বিশেষজ্ঞও দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছেন পিএসজির সফলতা! খেলার মাঠে না হলেও, ব্যবসায়িক সাফল্যের নিশ্চয়তা তো তিনি দিতেই পারেন!
ম্যানচেস্টার সিটির পর, মালাগা, পিএসজির এমন হঠাত উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে এফএফপি নামে একটি ধারাও খোলা হয়েছিল ইউয়েফার পক্ষ থেকে। লক্ষ্য ছিল ফুটবলের গুণগত মান ঠিক রেখে ক্রমশ বাণিজ্যিকীকরণের দিকে ঝুঁকতে থাকা ক্লাবগুলোর লাগাম টেনে ধরা। ফুটবল ক্লাবের আয়-ব্যয়ের মাঝে একটা সমন্বয় ধরে রেখে আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তিও দেয়া হয়েছে গত ৩ বছরে। এর মধ্যে বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদসহ পিএসজিকেও পেতে হয়েছিল শাস্তি। প্যারিসের ক্লাবটিকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছিল এফএফপি চালু হওয়ার পর প্রথম বছরেই।
কাতার টুরিজম কোম্পানির সাথে ১৯০ মিলিয়ন ইউরোর ব্যবসায়িক চুক্তিটি এফএফপির নিয়ম বহির্ভুত হওয়ায় সেবার ২২ মিলিয়ন অর্থদন্ড দিতে হয়েছিল পিএসজিকে। এখানেই শেষ নয়। চ্যাম্পিয়নস লিগে ওই মৌসুমে ২৫ জনের জায়গায় ২১ জনের দল নিয়েও খেলতে হয়েছিল তাঁদের। এফএফপির আইন মেনেই তাই এবার এগুতে হবে পিএসজিকে। আয়-ব্যয়ের হিসেব ঠিক রাখতে দল খালি করার বিকল্প নেই তাঁদের। সহজ ভাষায়, খেলোয়াড় বিক্রি করে টাকার সমন্বয়টা রাখতে হবে এফএফপির আইন অনুযায়ী।
এফএফপির নিয়মে কাটা পড়ে বলে কাতারের মালিকপক্ষের অর্থ সরাসরি ব্যবহার করা যাবে না নেইমারের দলবদলে। তবে ক্লাবের মূল আয়ের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ অর্থ অতিরিক্ত যোগ করতে পারবে মালিকপক্ষ। নেইমারকে কেনার জন্য যা যথেষ্ট নয়।
সব আইন মেনে নেইমারকে কিনতে হলে তাই পিএসজির জন্য খালি থাকছে দু’টি পথ। দলের খেলোয়াড় বিক্রি করে নেইমারের জন্য ফান্ড বাড়ানো। অর্থাৎ দলবদলের মৌসুম শেষের আগেই আয়-ব্যয়ের হিসেবের সমন্বয় রক্ষা করা। অথবা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ব্রাজিলিয়ান তারকাকে দলে ভেড়ানো। আজ নেইমারের সাথে আলেক্সিস সানচেজকে ঘিরেও শুরু হয়েছে গুঞ্জন। প্যারিসের ক্লাব চাইছে এই চিলিয়ান উইঙ্গারকেও। তাই নেইমারের চুক্তিটা যদি শেষ পর্যন্ত হয়েই যায়, সেটা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমেই হওয়ার কথা।
আরও পড়ুনঃ দলবদলের সর্বশেষ