চট্টগ্রামের 'ল্যাবরেটরিতে' মুশফিকদের হাওয়াবদল
একদিকে বোলিং মেশিনে অনুশীলন করে যাচ্ছিলেন তাসকিন আহমেদ। ব্যাটিংয়ে এখনও খুব একটা সড়গড় হতে পারেননি বাংলাদেশ দলের এই পেসার। ঢাকাতেও নতুন ব্যাটিং পরামর্শক মার্ক ও নিল বেশ কিছুটা সময় আলাদা করে কথা বলেছিলেন তাঁর সঙ্গে। চট্টগ্রামেও বোলিং মেশিনে অনুশীলন শেষে তাসকিনকে কী যেন বোঝালেন ও নিল। মধ্যে সেন্টার উইকেটের দুই পাশে নেটে চলছে তামিম-সাব্বিরের অনুশীলন, ফুল রান আপে সেখানে ঘাম ঝরাচ্ছেন আল আমিন-শুভাগত-রুবেলরা। একদিকে মুস্তাফিজুর রহমান স্পট রান আপে বল করছেন নেটে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ক্যাম্পটাই যেন ২২ গজের ছোটখাট একটা ল্যাবরেটরি।
প্রায় মাসখানেক ধরে শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগের প্রস্তুতি ক্যাম্প। প্রথম তিন সপ্তাহ মূলত জিম আর ফিটনেস ট্রেনিংই হয়েছে, ফাঁকে ফাঁকে নেটে চলছে অনুশীলন। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে গত মাসের শেষে যোগ দেওয়ার পর পুরোদমে শুরু হয়েছে ব্যাটে-বলের অনুশীলন। এর মধ্যে মার্ক ও নিলও অস্ট্রেলিয়া থেকে এসে যোগ দিয়েছেন, দম ফেলার আগেই শুরু হয়ে গেছে তাঁর কাজ। তবে মিরপুরে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ঠিক যেন মনমতো হচ্ছিল না সবকিছু। শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ চলছে অনেক দিন থেকেই। সেখানে তাই চাইলেও নেট অনুশীলনের জো নেই। অ্যাকাডেমি মাঠ বা ইনডোরে সেই সুযোগ কিছুটা আছে বটে, কিন্তু পুরো দলের সেখানে আয়োজন করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনুশীলনের সুযোগ সীমিত। চট্টগ্রামের ক্যাম্পটা সেই অর্থে মনমতো অনুশীলনের দারুণ একটা উপলক্ষও এনে দিয়েছে।
মুশফিকুর রহিমকে সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিতেই বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কের কন্ঠে বেশ একটা সন্তষ্টির ছাপ, ‘যে মাঠে টেস্ট খেলব, সে মাঠের সেন্টার উইকেটে অনুশীলন করা অনেক বড় সুযোগ আমাদের জন্য। ঢাকায় সারাদিন এভাবে অনুশীলনের সুযোগ হয় না। আর ওখানে আমরা সাইড উইকেটে নেট করেছি, এখানে সেন্টার উইকেটে। যে উইকেটে হয়ত টেস্ট খেলব, সেই উইকেটেই প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলব। এটাও বড় সুযোগ। দুই মাঠের মাটিও আলাদা। অনুশীলন করায় আমাদের স্পিনাররা জানতে পারবে কোন লেংথে বল করতে হবে।’
তবে শুধু তো পুরো মাঠজুড়ে অনুশীলন নয়, চট্টগ্রামের সাত দিনের ক্যাম্প আরেকটা দিক দিয়েও গুরুত্বপূর্ণ। টেস্ট সিরিজের আগে এত নিবিড়ভাবে অনুশীলনের সুযোগ খুব একটা হয়না দলের। আর চট্টগ্রামে সেই সুযোগ তো আরও সীমিত। এবার শুধু তিন দিনের অনুশীলন নয়, তিন দিনের একটা প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে বাংলাদেশ। মুশফিক তাই চট্টগ্রামের অনুশীলনকে এদিক দিয়েও গুরুত্বপূর্ণ মানছেন, ‘চট্টগ্রামে তো আমরা কমই খেলি। ঘরের মাটিতে খেলা হলে সাধারণত মিরপুরেই অনুশীলন করি। এই তিনদিনে আমি অনেক খুশি। যে প্রস্তুতি ম্যাচটা আছে, আশা করি সবাই অনেক গুরুত্ব দিয়ে নেবে। আশা করি সেই ম্যাচ দিয়েই টেস্ট দল কেমন হবে সেটার একটা ধারণা পাব।’
তবে অনুশীলন বা প্রস্তুতির বাইরেও আরও কিছু ব্যাপার থাকে। ঢাকার বাইরে এত লম্বা সময়ের জন্য ক্যাম্পও সচরাচর করা হয় না। আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার তো আছেই, নতুন জায়গায় অনুশীলন একটা টনিকের মতো কাজ করে বলেও মনে করিয়ে দিলেন মুশফিক, ‘এখানকার গরমটা ঢাকার চেয়ে আলাদা, সেটায় খাপ খাইয়ে নেওয়ার একটা ব্যাপার তো আছেই। তাছাড়া এক জায়গায় অনুশীলন করায় একটা একঘেয়েমি কাজ করে। এখানে তাই একটু তরতাজা থাকা যাবে।’
এমনিতে চট্টগ্রাম বাংলাদেশের পয়া ভেন্যু হিসেবেই বলা হয়। তবে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সর্বশেষ সফরে টেস্টে তীরে গিয়েও ভেড়ানো হয়নি তরী। চট্টগ্রামের হাওয়াবদলে এবার সেই আক্ষেপ কি ঘুঁচবে?