• বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া
  • " />

     

    নাসির-মুমিনুল কি পেরেছেন?

    নাসির-মুমিনুল কি পেরেছেন?    

    হুট করে ঘনিয়ে আসা বৃষ্টিতে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে একটু আগেভাগেই ছুটি পেয়ে গেলেন সবাই।  কিটব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় হাসতে হাসতে মুমিনুল হক বলছিলেন, ‘রান তো আমিই বেশি করলাম, আপনাদের সাথে কথা তো আমার বলার কথা!’ কথাটা যাকে ইঙ্গিত করে, নাসির হোসেন অবশ্য তাতে খুব একটা মন খারাপ করতেন না। অন্তত ‘ইশ, যদি’ নিয়ে তো আর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে হতো না! তবে সেই আফসোস যে মুমিনুলকেও ছুঁয়ে যায়নি, সেটা দিব্যি দিয়ে বলা যায় না।

    প্রস্তুতি ম্যাচে দ্বিতীয় দিনে দুজনের ব্যাটই আজ আলো ছড়িয়েছে। সকালে সাব্বির আউট হওয়ার পর তৃতীয় উইকেটে জুটি বেঁধেছেন দুজন। মুমিনুলের ফিফটিও হয়ে গেছে এর মধ্যেই, নাসির তখনো খোলস ছেড়ে খুব একটা বের হতে পারেননি। তবে ৬০ রানের জুটির সময় দুজনেই আভাস দিচ্ছিলেন বড় কিছুর। কিন্তু ভালো খেলতে খেলতেই  দুজনেই আউট হয়ে গেছেন অনেকটা একইভাবে। সাকলাইন সজীবের বলে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে আউট মুমিনুল, আর নাঈম হাসানের বলে সেই শর্ট লেগেই ক্যাচ দিয়েছেন নাসির। অথচ দুজনেই স্পিনটা খেলছিলেন দারুণ।

    তবে জাতীয় দলের দুয়ারটা দুজনের জন্য ঠিক একরকম খোলা নয়। সাদা পোশাকে মুমিনুল গত মার্চ পর্যন্তও ছুলেন অটোমেটিক চয়েসদের একজন। কিন্তু শ্রীলঙ্কা সফরে হঠাৎ করেই যেন হারিয়ে ফেললেন টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা, শততম টেস্টে তাই দলের বাইরেই থাকতে হলো। সেই প্রশ্নের দুর্দান্ত একটা জবাব হতে পারত আজই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত উত্তরপত্রটা একটু অসম্পূর্ণ রেখেই পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে আসতে হলো। ৭৩ রানের ইনিংসটা প্রস্তুতি ম্যাচ হিসেবে অতো বড়ও হয়তো নয়, তবে সেঞ্চুরি করলে মুমিনুল নিজের দাবিটা আরও অনেক জোরালোভাবেই দাবিটা জানান দিতে পারতেন। তারপরও যেটুকু উত্তর দিয়েছেন, তাতে হয়তো তাঁর আরেকটা সুযোগ প্রাপ্যই। সেই কলম্বো টেস্টে মুমিনুলের জায়গা নিয়েছিলেন ইমরুল কায়েস, তিনি অবশ্য দুই ইনিংসেই ব্যর্থ। মুমিনুল আশায় বুক বাঁধতেই পারেন।

    নাসিরের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা আরেকটু অন্যরকম। সাদা পোশাকে সর্বশেষ খেলেছেন দুই বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায়, এবারও ১৫ জনের দলে ডাক পেলে সেটা অভাবিত কিছুই হবে। নাসির বোধ হয় সেটি মেনে নিয়েই লাল বলে অনুশীলন করতে পারাটাই বড় করে দেখছেন, ‘অনেক দিন ধরে কোনো টেস্ট বা চার দিনের ম্যাচ খেলি না। আজকের ইনিংসটা বড় করতে পারতাম, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা হয়নি। আর এখানে ভালো করে জাতীয় দলে ফিরতেই হবে, এরকম কোনো কিছু মাথায় নেই। আমি শুধু উপভোগ করার চেষ্টা করেছি।’

    নাসিরের জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক বেড়ে যাওয়াও হয়তো এমন রক্ষণাত্মক স্টান্সের আরেকটা কারণ। ছয়-সাত পজিশনে সাব্বির, মোসাদ্দেকরা এখন নিয়মিত, মাহমুদউল্লাহই সুযোগ পাচ্ছেন না। তবে নাসির ব্যাপারটা দেখছেন একটু অন্যভাবে, ‘কম্পিটিশন থাকা ভালো, তার মানে আমার কোথাও একটা খামতি আছে, বা আমাকে আরও অনেক উন্নতি করতে হবে। তবে আমি মানসিকভাবে অনেক শক্ত আছি। আমি জানি ভালো খেললে আগের জায়গায় চলে আসব।’

    তবে দুজন আরেকটা দিক দিয়েও হতাশ হতে পারেন। কালকের চেয়ে আজ উইকেটটা অনেক স্লথ ছিল, বোলারদের সুইং বা স্পিন আদায় করতেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে। নাসির তো জাতীয় লিগের ডাবল সেঞ্চুরিকেও আজকের ইনিংসের চেয়ে অনেক এগিয়ে রাখলেন। তবে তিন অঙ্কে নিতে পারলে হয়তো সেটা বলতেন না। দলের নির্বাচক বা কোচদের সামনে নিজের সামর্থ্য দেখানোর সুযোগ তো সব সময় আসবে না। সেটা মুমিনুল বা নাসির কতটা দেখাতে পেরেছেন, সময় হলেই জানা যাবে।