বৃষ্টির সঙ্গে আছে সন্তুষ্টিও
সবকিছুই চলছিল ঠিকঠাক। ঢাকার একাডেমীর গন্ডি থেকে চট্টগ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনুশীলন বাংলাদেশ দলের জন্য হয়ে এসেছিল মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার একটা উপলক্ষ। প্রথম তিন দিন অনুশীলন হয়েছে পুরোদমে, এক দিন বিশ্রামের পর তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার উপলক্ষ। শেষ দিনের বৃষ্টিতেই যা একটু ছন্দপতন হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম থেকে সন্তুষ্টি নিয়েই ফিরবে বাংলাদেশ দল। সাব্বির রহমান যেমন বলছেন, চট্টগ্রামে বাংলাদেশের ৮০ ভাগ কাজই ঠিকঠাক হয়েছে। বৃষ্টি না হলে যেটি হতে পারত শতভাগ।
অস্ট্রেলিয়া সঙ্গে সিরিজের আগে আর একটাই প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। টেস্টের জন্য প্রথম একাদশ বেছে নেওয়ার জন্য সেই ম্যাচটাই শেষ সুযোগ নির্বাচকদের। তবে চট্টগ্রামে দুই দিনে যে খেলা হয়েছে, তাতে কয়েকজন নিজেদের দাবিটা ভালোমতোই জানান দিয়ে রেখেছেন। এই মুহুর্তে দলে ছয়-সাতজন অটোমেটিক চয়েস বাদ দিলে বাকি কয়েকটি জায়গায় ভালোই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার কথা।
সবার আগে সেই দৌড়ে এগিয়ে থাকার কথা শফিউল ইসলামের। প্রথম দিন মাত্র সাত ওভার বল করেছেন, কিন্ত পাঁচ উইকেট নিয়ে মুস্তাফিজের সঙ্গী হিসেবে নিজের দাবিটা জানান দিয়ে রেখেছেন ভালোমতোই। সর্বশেষ কলম্বো টেস্টে মুস্তাফিজের সঙ্গী হয়েছিলেন শুভাশীষ রায়, তবে চট্টগ্রামে ৭ ওভারের স্পেলে খুব মনে রাখার মতো কিছু করতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম টেস্টে মূল একাদশে থাকতে হলে পরের প্রস্তুতি ম্যাচে তাঁকে দুর্দান্ত কিছুই করতে হবে।
শফিউলের মতো অতোটা জোরেশোরে না হলেও দাবি জানান দিয়ে রেখেছেন রুবেল হোসেনও। তিন উইকেট নিয়েছেন বলেই শুধু নয়, দুই দিন মিলে মোট বল করেছেন ১৭ ওভার। যেখানে তাঁর দলের অন্য দুই পেসার আল আমিন ও শুভাশীষ মিলে বল করেছেন তারও কম। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের কথাও আশা দেখাতে পারে তাঁকে, 'একজন খেলোয়াড়ের ফিটনেস বোঝা যায় বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে। সেই হিসেবে রুবেল যথেষ্ট ভালো ছন্দে আছে। ওয়ানডেতে তো ভালো করেছেই, টেস্টেও ওকে ভালো করতে হবে।’
আশার আলো দেখতে পারেন মুমিনুল হকও। লম্বা সময় ধরে টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভরসা শ্রীলঙ্কা সফরে হঠাৎ করে হয়ে পড়লেন ব্রাত্য। প্রস্তুতি ম্যাচে ৭৩ রানের ইনিংস হারিয়ে যাওয়া আস্থা কততুকু ফিরিয়ে আনবে বলা মুশকিল, তবে খেলার ধরন জানিয়ে দিচ্ছে মুমিনুল নিজেকে আরও শাণিত করার জন্য কাজ করছেন ভালোমতোই। নাসির, শান্ত ও তানবীর হায়দার রান পেলেও এই মুহূর্তে টেস্ট দলে তাঁদের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণই। মিনহাজুল যেমন আজ সরাসরিই জানিয়ে দিলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য আমরা অভিজ্ঞতাই প্রাধান্য দেব, এখানে পরীক্ষা নিরীক্ষার কোনো সুযোগ নেই। গত এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে যারা টেস্ট দলে খেলছে বা পারফর্ম করছে সেটা হিসেব করেই সম্ভাব্য সেরা একাদশ বেছে নেব।’
তবে শফিউল, রুবেল, মুমিনুলরা চট্টগ্রাম টেস্টের রিপোর্ট কার্ডে পাশ মার্ক পেয়ে উতরে গেলেও অনেকের নামের পাশে আপাতত লাল কালিই জুটছে। ম্যাচটা টেস্টে নিজেকে প্রমাণের আরেকটা বড় মঞ্চ হতে পারত মাহমুদউল্লাহর জন্য, কিন্তু প্রথম ইনিংসে কোনো রান না করেই আউট হয়ে গেছেন। দলে জায়গা পেতে লড়াই করা ইমরুল কায়েস বা সাব্বির রহমানও পারেননি সুযোগটা কাজে লাগাতে। পেসারদের মধ্যে যেমন বাকিদের চেয়ে দৌড়ে একটু পিছিয়ে পড়লেন তাসকিন, শুভাশীষ, আল আমিনরা।
তবে যাদের জায়গা নিয়ে সংশয় নেই, তারাও এই ম্যাচটা শুধু নিজেদের ঝালাই করার চেয়ে একটু বাড়তি গুরুত্ব নিয়েই দেখেছেন। তামিম ইকবাল যেমন রান আউটের হতাশায় ড্রেসিংরুমে এসে কাচই ভেঙে ফেললেন। নাসির হোসেন যতই বলুন উপভোগের জন্যই খেলছেন, এই ম্যাচটা সবাই চূড়ান্ত মঞ্চের আগে নিজেদের জন্য সুযোগ হিসেবেই দেখছেন। চট্টগ্রাম পর্ব থেকে আপাতত এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বাংলাদেশের জন্য। বাকিটুকু না হয় সামনের মাসের শুরুর জন্যই তোলা রইল।