মুশফিকের 'ফিফটি-ফিফটি' এবং ব্যাকফুটে স্মিথ
১১ বছর আগের ওই স্মৃতিটা এখন বিভ্রমের মতো মনে হতে পারে। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে ঢাকায় পা রেখেছিল রিকি পন্টিংয়ের দিগ্বিজয়ী অস্ট্রেলিয়া। সম্ভব হলে ম্যাচটা চার পাঁচ দিনে নিয়ে যেতে চান- বাংলাদেশের ওই সময়ের কোচ ডেভ হোয়াটমোর কথাটা খুব জোর দিয়েও বলতে পারেননি। তার পর আর দুই দলের টেস্ট খেলা হয়নি, সেই সিরিজের কেউই এখন এই দুই দলে নেই। কী আশ্চর্য, দুই দলের খোলনলচেও বদলে গেছে অনেকটাই। মুশফিকুর রহিম যখন বলছেন, সিরিজটা 'ফিফটি-ফিফটি' হবে, অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ বলছেন, তাদের জন্য এই সিরিজটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেই শুরুটা করেছিলেন। এই মাসেই মিরপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়। কদিন আগে সাকিব আল হাসান আরও স্পষ্টবাদী, সরাসরিই জানিয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়াকে দুই টেস্টকে হারানো খুব সম্ভব বলেই মনে করছেন। কাল সংবাদ সম্মেলনে নাথান লায়নও এই 'বার্তা' পেয়ে একটু চমকে গেলেন। একটু ব্যাকফুটে গিয়েই বললেন, কোন দল এগিয়ে সেটা মাঠেই জানা যাবে।
মুশফিকুর রহিম অবশ্য কোচ বা সতীর্থের মতো অতটা স্পষ্টবাদী নন। ২-০ ব্যবধানেই সিরিজ জিততে হবে, এমন দিব্যি দেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে দুই দলেরই জেতার সম্ভাবনা সমান, মুশফিকের এমন কথাও কিন্তু বড় একটা বার্তা দিচ্ছে, 'যদিও আমাদের হোম কন্ডিশন, ওদের চেয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা (এখানে) বেশি। হতে পারে ওরা এই কন্ডিশনে কম ম্যাচ খেলেছে কিন্তু এখানে কিভাবে খেলতে হবে সেটা ওরা জানে। ভারতে সিরিজ হেরে গেলেও ওরা কিন্তু প্রথম টেস্ট জিতেছিল। আমাদের সব কিছুই বিবেচনায় আছে। ওরা কতটুকু ভালো করতে পারে কিংবা আমরা কতটা ভালো খেললে ওদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারবো। আমার মনে হয়, এটা দুই দলের জন্য পঞ্চাশ-পঞ্চাশ থাকবে।'
সেই কারণটা ব্যাখ্যা করলেন মুশফিক, 'এখানে দেখতে হবে আমাদের বোলিং লাইনআপ অনভিজ্ঞ। ওদের অভিজ্ঞ কিছু বোলার আছে, খুব ভালো খেলেছে এমন কিছু ব্যাটসম্যানও ওদের আছে। সেদিক থেকে বলবো- ভারসাম্য দুই দলেই আছে। আমার মনে হয়, মাঠে যারা ভালোভাবে প্রয়োগ করতে পারবে ওরাই এগিয়ে থাকবে।' এমনকি এও বললেন, 'আমরা তো কোনো অ্যালিয়েনদের বিপক্ষে খেলছি না। আমাদের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় আছে যারা যে কোনো সময় ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।'
প্রশ্নটা মনে করিয়ে দেওয়া হলো স্মিথকেও। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক নিজেদের 'ফেবারিট' দূর থাক, 'ফিফটি-ফিফটি' পর্যন্তও গেলেন না, 'আমি মনে করি এটা একটা দারুণ সিরিজ হব, আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জ। ভারতের মতোই এখানে একই রকম উইকেট হবে, আশা করি ওখান থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারব। রোমাঞ্চকর একটা সিরিজের অপেক্ষায় আছি।' কিন্তু বাংলাদেশ যে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে, কথাটা কি একটু বিস্ময়কর নয়? এবার স্মিথ এড়িয়ে যেতে যেতেও স্বীকার করে নিলেন, 'অবশ্যই এটা তো খুব আত্মবিশ্বাসের পরিচায়ক। তারা দেশের মাটিতে ভালো খেলছে। হ্যাঁ, একটু হলেও তো মন্তব্যটা বিস্ময়কর।'
অথচ ধারে ভারে দুই দলের কারোরই তুলনা হয় না। ফতুল্লার সেই অনন্ত আক্ষেপ বাদ দিলে বাংলাদেশের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তিন টেস্টই হয়ে আছে একটা দুঃস্বপ্নের মতো। বিশেষ করে গিলেস্পির ওই ডাবল সেঞ্চুরির ভূত অনেকদিনই তাড়া করে বেরিয়েছে। এরপর অনেক দূর জল গড়িয়েছে, ২০১১ সালের পর এশিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার সফর মানেই বিভীষিকা। আর বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বার্তা দিয়ে রেখেছে, নিজেদের মাঠে হতে পারে যে কোনো কিছুই।
এই সিরিজে তাই বাংলাদেশ যেমন অচেনা, তেমনি অচেনা অস্ট্রেলিয়াও তো!