রিভিউ যখন 'ধাঁধাঁ'
একসময় ডিআরএসের অভাব প্রচন্ড ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। ‘ডিআরএস থাকলে এটা হতো’, ‘ডিআরএস থাকলে ওটা হতো না’, কতো আফসোসের ফিসফিসানিই তো শোনা গেছে! এখন হোম-সিরিজেও এ পদ্ধতি পাওয়া যায়, রীতিমতো প্রয়োজনীয় সব প্রযুক্তি সহই। তবুও, ডিআরএসের প্রাপ্তিতা-অপ্রাপ্তিতা নিয়ে হাহাকার ওঠে এখনও! এই ‘সুবিধা’ নেয়ার যে একটা ‘কোটা’ আছে, ঠিকঠাক ব্যবহার করতে না পারলেই বিফলে যেতে পারে সেটাই!
মিরপুরে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনেও হলো এমন। মুশফিকুর রহিম যে রিভিউটা নিলেন, সেটা না নিলেও পারতেন, সাব্বির রহমানের রিভিউ নিয়ে প্রশ্নটা আরও বড়। এ দুজনের কারণে ভুগেছেন মেহেদি হাসান। ভাল ব্যাটিং করছিলেন, জুটিটা জমছিল নাসির হোসেনের সঙ্গে। আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হলেন, চাইলেও পারলেন না রিভিউ নিতে! ‘ডিআরএস’-এর সবচেয়ে বড় যে ভূমিকা, আম্পায়ারের এসব ভুল কমিয়ে আনা, সেটার সুফলই নিতে পারলেন না সতীর্থরা আগেই তা শেষ করে যাওয়াতে।
‘আমার মনে হয় এটা (রিভিউয়ের ব্যবহার) এখন ভালোই গুরুত্বপূর্ণ। মিরাজেরটা আউট ছিলো না। ওর সময় রিভিউ থাকলে সেটা নেয়া যেতো। তার ও নাসিরের জুটিটা ভালো হচ্ছিলো। ওরা ৪২ রান করে ফেলেছিলো। রিভিউ থাকলে (আউট হতো না) আরো ভালো করতে পারতো’, সাকিব আল হাসানেরও মনে হচ্ছে রিভিউয়ের ব্যবহারটা আরেকটু ভালভাবে করতে হবে তাদের।
রিভিউ ঘনঘটার শুরু সাব্বিরকে দিয়ে। প্যাট কামিন্সের ফুললেংথের বল ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন, বল ব্যাটে লেগে গেল ম্যাথু ওয়েডের কাছে। আলিম দার আউট দিলেন, সাব্বির তামিমের দিকে একটু এগিয়ে এসে নিলেন রিভিউ। ব্যাট মাটিতে লেগেছে, বল নাও লাগতে পারে বলে সন্দেহ থাকতে পারে সাব্বিরের, তবে ওই অল্প ব্যবধানটাও একজন ব্যাটসম্যানের জন্য যথেষ্টই হওয়ার কথা! ব্যাটের চেয়ে আপন আর কিছু তো নেই ব্যাটসম্যানের কাছে, সেই ব্যাটে কী লাগলো বা লাগলো না, সেটাও তো জানবেন তিনিই সবচেয়ে ভাল।
সাকিব অবশ্য এটা নিয়ে জানেন না, ওখানে কী হয়েছিল, ‘ওটা তামিম বলতে পারবে। ও তখন উইকেটে ছিলো। এরপর আর কোনো কথা হয়নি।’
এক্ষেত্রে অবশ্য মুশফিকের রিভিউটা একটু বেশি যৌক্তিক। মেহেদী ছাড়া এরপর বলার মতো ব্যাটসম্যান ছিলেন না কেউ, হয়তো ‘বাজি’টা খেলেছিলেন সে কারণেই। কিন্তু বিফলে গেল সেটা। তবে অস্ট্রেলিয়ানদের রিভিউয়ের ব্যবহারের পর অবশ্য প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে মুশফিকেরটাও। নাসিরের বিপক্ষে একটা রিভিউ নিয়েই সফল স্টিভ স্মিথ, বাংলাদেশ ইনিংসে তাদের রিভিউ ওই একটিই।
ব্যাটিংয়ে নেমে ব্যাটে লেগেছে নিশ্চিত জেনেই রিভিউ নিয়েছিলেন ওয়ার্নার, বেঁচেও গেছেন সে যাত্রায়। পরের বলেই আবার এলবিডাব্লিউ হলেন, এবার নিলেন না। অথচ বল-ট্র্যাকিং দেখাচ্ছিল, স্টাম্পে ‘হিট’ নয়, করতো শুধু ‘ক্লিপ’। তাও লেগস্টাম্পে। ক্লিপ করতো ন্যাথান লায়নেরটাও। ওই লেগস্টাম্পেই। তিনিও নেননি। মানে, খচখচানি ছিল, কিন্তু সুযোগ কম বলেই নেননি।
বাংলাদেশ করেছে যেটার উলটো। খচখচানির সুযোগ কম ছিল যেসব জায়গায়, সেখানেই রিভিউ নিয়েছেন বেশি!