• বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া
  • " />

     

    'নিখুঁত' দিন শেষে বাংলাদেশের সৌম্য-আক্ষেপ

    'নিখুঁত' দিন শেষে বাংলাদেশের সৌম্য-আক্ষেপ    

    দ্বিতীয় দিন শেষে

    অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ২১৭ , ৭৪.৫ ওভারে ( অ্যাগার ৪১, রেনশ ৪৫, হ্যান্ডসকম্ব ৩৩; সাকিব ৫/৬৮, মিরাজ ৩/৬২)

    বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ২৬০ ও ২২ ওভারে ৪৫/১ (তামিম ৩০*, সৌম্য ১৫; অ্যাগার ১/৯ )\


    শেষে গিয়ে যদি সৌম্য সরকার যদি অমন পাগলামিটা না করতেন! 

    দিনের খেলা শেষের বাকি মাত্র ১১ বল। সারাক্ষণ সংযমের দারুণ পরাকাষ্ঠা দেখানো সৌম্য সরকারের হঠাৎ করেই ধৈর্যচ্যুতি হলো। অ্যাশটন অ্যাগারের বলটা লং অন দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন। উসমান খাওয়াজা সেটি প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু তিন বার ফেলে দেওয়ার পরও চতুর্থবারে সেটি লুফে নিলেন। ৪৩ রানে ভেঙে গেল বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। 

    সেই আউট না হলে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি প্রায় নিখুঁত দিনের চিত্রনাট্যও লেখা হয়ে যেত। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪৩ রানের লিড নেওয়ার পর দুই ওপেনার তামিম ও সৌম্য খেলছিলেন খুব দেখেশুনেই।৪৩ রান করতে তাই ২০ ওভার খেলতে হয়েছে দুজনকে। এখন অবশ্য লিডটা ৮৮ রানের আছে বাংলাদেশের, দ্বিতীয় দিন শেষে মিরপুরের এই পিচে সেটিকে মনে হচ্ছে অনেক। ১১ বছর আগে ফতুল্লায় লিড নিয়েও শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছিল, এবার নিশ্চয় সেরকম কিছু চাইবেন না। 

    তার আগে দিনের প্রায় অনেকটা সময় নিজের করে নিয়েছেন সাকিব। হারাধনের নয়টি ছেলে, বাকি ছিল শুধু একটি। সবকটি টেস্ট দলের বিপক্ষেই এর আগে পাঁচ উইকেটের কীর্তি ছিল, বাকি ছিল শুধু অস্ট্রেলিয়া। সেই অধরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও এবার কীর্তিটা হয়ে গেল, যেটি আছে শুধু মুরালিধরন, হেরাথ ও স্টেইনের। অস্ট্রেলিয়ার শেষের দিকের প্রতিরোধের পর লিডটা অবশ্য খুব বড় হয়নি বাংলাদেশের, প্রথম ইনিংসে এগিয়ে আছে ৪৩ রানে। 

     

    চা বিরতির পর প্রথম ওভারেই সাকিব পেয়েছেন সাফল্য। তাতে অবশ্য কিছুটা ভাগ্যের ছোঁয়া ছিল, সাকিবের বল কামিন্সের ব্যাটে-প্যাডে লাগার পর ভেঙে দিয়েছে স্টাম্প। এরপর দিনের সেরা কয়েকটি শটে অ্যাগার প্রমাণ দিচ্ছিলেন তাঁর ব্যাটিং ক্ষমতার।হ্যাজলউডের সঙ্গে ২৪ রানের জুটিও গড়ে ফেলেছিলেন। আবারও সাকিবই হয়েছেন ত্রাণর্কতা, শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়েছেন হ্যাজলউড। 

    সবকিছুই হচ্ছিল একদম নিখুঁত চিত্রনাট্য মেনে। ম্যাক্সওয়েল, ওয়েড দুজনের কেউই খুব একটা হুমকি হতে পারেননি। একটা সময় বাংলাদেশ যখন ১০০ রানের লিড নেওয়ার স্বপ্ন দেখছে তখনই সেই ঘোর ভেঙে গেল। দুই টেল এন্ডার প্যাট কামিন্স ও অ্যাশটন অ্যাগারের ব্যাটেই আবার প্রতিরোধ গড়ল অস্ট্রেলিয়া।


    অথচ লাঞ্চের পর বাংলাদেশের শুরুটা কী স্বপ্নের মতোই না হয়েছিল! লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই মিরাজের বলে এলবিডব্লু হয়ে গেলেন ওয়েড। যদিও রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল স্টাম্প মিস করত, রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন ওয়েড। কিন্তু দুইটি রিভিউ থাকার পরেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সেটি নেননি ওয়েড। ম্যাক্সওয়েল হতে পারতেন বড় হুমকি, কিন্তু স্মিথের মতোই ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসে মিস করেছেন বলের ফ্লাইট। স্টাম্পিংটা করতে কোনো কষ্টই করতে হয়নি মুশফিককে। ২৩ রানেই ফিরে গেছেন বিপজ্জনক হয়ে উঠতে থাকা ম্যাক্সওয়েল।

     


    পরে অবশ্য কামিন্স ঠিকই রিভিউ নিয়ে জীবন ফিরে পেয়েছেন। আরও একবার ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আলিম দার, শফিউলের বলে খোঁচা দিয়ে মুশফিকের গ্লাভসে জমাতে তুলে দিয়েছেন আঙুল। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল আসলে ব্যাট না, থাইপ্যাডে লেগেছিল। তখন কামিন্স করে ফেলেছেন ২৪।


    তার আগেই এই শফিউলই জন্ম দিয়েছেন বাংলাদেশের জন্য এই সেশনে সবচেয়ে আক্ষেপের। ৫৫তম ওভারে সাকিবের বলে ছয় মেরে ১২ রানে পৌঁছেছিলেন কামিন্স। ওভারের শেষ বলটা মারতে গিয়ে আবার আকশে তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু কাভারে সহজ ক্যাচটা অবিশ্বাস্যভাব ছেড়ে দিয়েছেন শফিউল।

     


    তার আগে আসল কাজটা অবশ্য সকাল সকালই সেরে ফেলেছে বাংলাদেশ। আগের দিনই সাকিব আল হাসান এসে বলে গিয়েছিলেন, স্টিভেন স্মিথ হবেন সবচেয়ে বড় হুমকি। সেই হুমকিটা সরাতে দিনের মাত্র তৃতীয় ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো বাংলাদেশকে। 


    মিরাজের মুখোমুখি প্রথম বলেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়েছিলেন স্মিথ। কিন্তু মিরাজের পরের ওভারেই সেটা করতে গিয়ে হলো সর্বনাশ। বলের ফ্লাইট মিস করলেন স্মিথ, ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে সেটি ভেঙে দিল লেগস্টাম্প। স্মিথ ফিরে গেলেন মাত্র ৮ রানেই। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ব্যাট করছিলেন রেনশ ও হ্যান্ডসকম্ব, ৪৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কাঁপছিল অস্ট্রেলিয়া। হ্যান্ডসকম্ব অবশ্য ফিরে যেতে পারতেন, আলিম দার তাঁকে এলবিডব্লুও দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আগের দিনের দুবারের মতোই ভুল প্রমাণিত হয়েছে তাঁর সিদ্ধান্ত, রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেছেন হ্যান্ডসকম্ব। 

     


    এরপর আরও কয়েক বার শর্ট লেগে ক্যাচ দিতে দিতেও বেঁচে গেছেন। একবার সাকিব রিভিউও নিয়েছিলেন, কিন্তু লাভ হয়নি। ম্যাট রেনশর সঙ্গে জুটিটা জমে উঠেছিল বেশ, দুজন পঞ্চম উইকেটে ৬৯ রানও যোগ করে ফেলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত দাওটা মারলেন তাইজুল। ভেতরের দিকে ঢোকা বলটা হ্যান্ডসকম্বের প্যাডে লাগলে আঙ্গুল তুলে দেন আম্পায়ার নাইজেল লং। রিভিউ নেননি হ্যান্ডসকম্ব, রিপ্লে দেখে বোঝা গেছে নিলেও লাভ হতো না। ৩৩ রান করেই ফিরে গেছেন টেস্ট ক্রিকেটে তাইজুলের ৪৮তম শিকার হয়ে।


    লাঞ্চের আগে অস্ট্রেলিয়ার ছোট্ট ধসের সেটি ছিল শুরু। অন্য পাশে রেনশ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ফিফটি পেয়ে যাবেন বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু দিনে নিজের দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম বলেই বাজিমাত করলেন সাকিব। অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা খোঁচা দিলেন রেনশ। ক্যাচটা ফেলে দিতে দিতেও হাতে জমিয়ে ফেললেন সৌম্য,  হাজার খানেক দর্শকের 'সাকিব, সাকিব' কোরাসে তখন মুখর স্টেডিয়াম।

    দিন শেষে সেই সাকিবের জন্যই বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ!