• বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া
  • " />

     

    বাংলাদেশকে হতাশ করে গেলেন ওয়ার্নার-স্মিথ

    বাংলাদেশকে হতাশ করে গেলেন ওয়ার্নার-স্মিথ    

    তৃতীয় দিন, স্টাম্প

    বাংলাদেশ ২৬০ এবং ২২১, ৭৯.৩ ওভারে (তামিম ৭৮, মুশফিক ৪১; লায়ন ৬/৮২)

    অস্ট্রেলিয়া ২১৩ এবং ১০৯/২ , ৩০ ওভারে (ওয়ার্নার ৭৫*, স্মিথ ২৫*)


    এশিয়ায় ২০০ রানের বেশি তাড়া করে জেতার কীর্তি মাত্র একবারই আছে অস্ট্রেলিয়ার। কাকতালীয়ভাবে ১১ বছর আগে ফতুল্লায় সেই কীর্তি বাংলাদেশের বিপক্ষেই। ২৬৫ রানের লক্ষ্যটা তাই অস্ট্রেলিয়ার জন্য কঠিনের চেয়েও বেশি কিছু মনে হওয়া উচিত। তবে তৃতীয় দিন শেষে সেটি খুবই সম্ভব মনে করাচ্ছিলেন ওয়ার্নার-স্মিথ। মিরপুর টেস্টে ড্রাইভিং সিটে যে অস্ট্রেলিয়াকে বসিয়ে দিয়েছেন এই দুজনেই। ২৬৫ রান তাড়া করে তৃতীয় দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য দরকার আরও ১৫৬ রান, হাতে আছে আট উইকেট। ২৮ রানে ২ উইকেট পড়ার পর ওয়ার্নার-স্মিথ যোগ করে ফেলেছেন মহামূল্যবান ৮১ রান।


    অথচ গল্পটা হতে পারত অন্যরকম। সাকিবের বলে স্লিপে যখন ওয়ার্নারের সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন সৌম্য, অস্ট্রেলিয়ার সহ অধিনায়কের রান তখন ১৪। সুযোগটা এর চেয়ে আর ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারতেন না। প্রথম ইনিংসে অল্প রানেই আউট হয়ে গেছেন, উপমহাদেশের তাঁর সামর্থ্য নিয়েও ছিল প্রশ্ন। খুব সম্ভবত উপমহাদেশে নিজের সেরা ইনিংস খেলার পথেই রয়েছেন ওয়ার্নার, অন্য পাশে স্মিথও আভাস দিচ্ছেন বড় কিছুর। 


    অথচ সেই স্মিথও ফিরে যেতে পারতেন শুন্য রানেই। মিরাজের বলেই স্টাম্পিংয়ের আবেদনের পর স্মিথ ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটাই দিয়েছিলেন। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেছে, বুটের সামান্য একটু অংশ লাইনের ভেতর ছিল। তিন রানের মাথায় ইমরুলকে শর্ট লেগে দিয়েছিলেন কঠিন একটা ম্যাচ। এমন একটা ম্যাচে সেই সুযোগটাও নিতে পারেনি বাংলাদেশ। 


    তার আগে প্রথম উদযাপনের উপলক্ষ এনে দিয়েছিলেন মিরাজই। রেনশকে এলবিডব্লু করে ফেরত পাঠানোর পর আঘাত হেনেছেন সাকিব। অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা সুইপ করতে গিয়ে আকাশে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন খাওয়াজা। তারপরের গল্পটা শুধুই ওয়ার্নার আর স্মিথের। 

     

     

    তার আগে বাংলাদেশের ইনিংসও শেষ হয়েছে অনেক আক্ষেপ নিয়ে। কেন রিভিউটা নিলেন না সাব্বির রহমান? মুশফিকুর রহিম কেন চেয়ে চেয়ে নিজের আউট হওয়া দেখলেন? অথচ ঠিকঠাকই চলছিল সব। মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমান মিলে ৪৩ রানের জুটিও গড়ে ফেলেছিলেন। ১৮৬ রানে ৫ উইকেট ছিল বাংলাদেশের, সেখান থেকে ৩০০ রানের লিড মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব। কিন্তু একটা রান আউটই যেন সবকিছু পণ্ড করে দিল। 


    লায়নের বলটা সজোরে ড্রাইভ করেছিলেন সাব্বির। বলটা লায়নের হাতে লেগেই ভেঙে দেয় স্টাম্প। মুশফিক ক্রিজে ফেরার চেষ্টা কী করবেন, কিছু বুঝতেই পারেননি। ব্যাট দুরে থাক,  ক্রিজের ভেতর ছিল না তাঁর পাও। এর আগে তাঁকে রিভিউ নিয়েও আউট করতে পারেননি। এবার মুশফিক নিজেই যেন উইকেট উপহার দিয়ে এলেন। 


    কিন্তু সাব্বিরের আউটটা তাহলে কী বলবেন? লায়নের বলটা ব্যাট-প্যাডের আপিল হওয়া আঙুল তুলে দিলেন আম্পায়ার। সাব্বির রিভিউ না নিয়েই হাঁটা ধরলেন। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেছে বল ব্যাটে লাগেনি, এলবিডব্লুও হয়নি। প্রথম ইনিংসে বাজে একটা রিভিউ নিয়ে কম কথা হয়নি। সাব্বির কি সেজন্যই রিভিউটা নিলেন না ? 

     


    ওই ১৮৬ রানেই হয়ে গেছে আরেকটা আউট, মুশফিক ও সাব্বিরের মধ্যে। অ্যাগারের বলটা কাট করতে গিয়ে নাসির ক্যাচ দিলেন ওয়েডকে। প্রথম ইনিংসে ২৩ রানে পর দ্বিতীয় ইনিংসে শুন্য, নাসির দুই বছর পর টেস্ট দলে ফেরাটা মনে রাখার মতো করতে পারলেন না। 


    তবে লাঞ্চের পর অস্ট্রেলিয়া আসলে ফিরে এসেছে তামিমের আউটেই। কামিন্সের প্রায় আনপ্লেয়েবল বলটা লাফিয়ে উঠে চুমু খেল তামিমের গ্লাভসে। দারুণ এক রিভিউ নিয়ে স্মিথ ম্যাচে ফেরালেন অস্ট্রেলিয়াকে। বাংলাদেশের রান তখন ৪ উইকেটে ১৩৫। 


    এরপর সাকিব আল হাসান যা করলেন, সেটা তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। যখন অমন শট খেলার দরকারই নেই, লায়নের বল মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন একস্ট্রা কাভারে। তখন মনে হচ্ছিল, মুশফিক-সাব্বির সেই ধাক্কাটা পুষিয়ে দেবেন। কিন্তু ১৮৬ রানের ওই ধসে যেন বদলে গেল সবকিছু।

    অথচ প্রভাত দেখে মনে হচ্ছিল দিনটা হবে অন্যরকম। প্যাট কামিন্সের করা দিনের প্রথম বলটাই তামিম ইকবাল শুরু করেছিলেন চার মেরে, যদিও সেটি হতে পারত ক্যাচও। কামিন্সের পরের ১০ বলের মধ্যে আরও তিনটি চার তামিমের, তাইজুলের সঙ্গে জুটিটা খুব দ্রুতই তুলে ফেলল ১৮ রান।

     
    কিন্তু  নাইটওয়াচম্যান তাইজুল এরপরেই ফিরে গেলেন নাথান লায়নের নিচু হয়ে আসা বলে এলবিডব্লু হয়ে। ক্রিজে এলেন ইমরুল কায়েস, কিন্তু সুযোগটা আরও একবার কাজে লাগাতে পারলেন না। মাত্র দুই রান করেই সেই লায়নেরই শিকার। বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে কায়েসেরও অবশ্য খুব বেশি কিছু করার ছিল না। ৬৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ হঠাৎ করে একটু বিপদেই পড়ল।

     
    তামিম অবশ্য ফিফটি পেয়ে গেছেন একটু পরেই। ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবারের মতো দুই ইনিংসে ফিফটি পেলেন । বাংলাদেশের হয়ে ছয়বার এই কীর্তি গড়তে পেরেছেন শুধু হাবিবুল বাশারই। আর  ৫০তম টেস্টে দুই ইনিংসেই ফিফটি আছে শুধু পাঁচজনের। অ্যালান বোর্ডার, ইমরান খান, তিলকরত্নে দিলশান ও ব্র্যাড হাডিনের। এর মধ্যে দিলশানের আবার জোড়া সেঞ্চুরি, সেটিও আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে। ২৪তম ফিফটি তামিমের, এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয় বার ফিফটি পেয়েছেন টানা তিন ইনিংসে।