২২ গজের সেলুলয়েড : সৌম্যর 'দ্বিগুণ' ক্যাচ, সাকিবের নাচ
তিন দুগুণে ছয়টি ক্যাচ!
প্রথম ইনিংসে ম্যাট রেনশর ক্যাচটা ধরেছিলেন দুইবারের চেষ্টায়। প্রথমবার হাত থেকে বেরিয়ে উপরে উঠেছিল বল, দ্বিতীয়বার ধরেছিলেন সেটা। সৌম্য সরকার দ্বিতীয় ইনিংসে দুইবারের চেষ্টায় ক্যাচ নিলেন দুইবার। তবে দুইটি ক্যাচই যেন দুইবারে ধরার মতোই ছিল! পিটার হ্যান্ডসকম্ব জোরের ওপর কাট করতে গিয়েছিলেন, সৌম্য প্রথম স্লিপে দেখালেন অসাধারণ ‘রিফ্লেক্স’। হাত দিয়ে থামিয়ে দিলেন যেন বল, হাত থেকে বেরিয়ে বল গেল পেছনের দিকে। ঝাঁপিয়ে পড়লেন, বলকে বাগে আনলেন। ন্যাথান লায়ন সুইপ করতে গিয়েছিলেন, গ্লাভসে লেগে উঠে গেল বল। সৌম্য তাকে অনুসরণ করলেন, বলের কাছে গিয়ে ধরলেন। না, একবারের চেষ্টায় না, দুইবারেই!
‘ড্যান্স, সাকিব, ড্যান্স!’
কখনও আঙুল উঁচিয়ে ধরেন, কখনও দৌড় দেন, পাখির মতো ওড়ার ভঙ্গি করেন। সাকিব আল হাসানের বোলিংয়ের মতো তার উদযাপনও হয় দেখার মতো। তবে ম্যাথু ওয়েডের উইকেটের উদযাপনটা ছাড়িয়ে গেল সবকিছুকে! আবেদন করলেন, আলিম দার আউট দিলেন, এরপর সাকিব শুরু করলেন নাচ। কোমর দুলিয়ে, শরীর হেলিয়ে নাচ! সাকিব জয়ের ব্যাপার আত্মবিশ্বাস রেখেছিলেন, এ নাচ যেন তখন ইঙ্গিত দিয়েছিল সেটারই!
সাকিব-সেরা
এ নিয়ে ছয়বার টেস্টে ম্যাচসেরা হলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের হয়ে এটিই সর্বোচ্চ, এরপরই তিনবার করে ম্যাচসেরা হয়ে তালিকায় আছেন মোহাম্মদ আশরাফুল, মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল। তবে সাকিব সবচেয়ে কম রান করলেন এবারই। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ২০০৯ সালে সেন্ট জর্জে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১১২ রানের সঙ্গে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। উইকেটের দিক দিয়ে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এ টেস্টই সাকিবের যুগ্ম সেরা, ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার নিলেন ১০ উইকেট। ব্যাটিংয়ে করলেন দুই ইনিংসে ৮৯ রান, তবে প্রথম ইনিংসের ৮৪ রান তো ম্যাচের প্রেক্ষিতে কম গুরুত্বপূর্ণ না!
শেষের সাক্ষী
ব্যাট করতে নামলেন, কিন্তু হ্যাজলউড জানেন সিরিজ শেষ হয়ে গেছে তার, দলে ডাকা হয়েছে স্টিভ ও’কিফকে। দ্বিতীয় ইনিংসে চোট পেয়ে উঠে গিয়েছিলেন, আর বোলিং-ও করেননি। দরকার পড়লেই শুধু ব্যাটিং করতে নামবেন, কথা ছিল এমনই। তা অস্ট্রেলিয়ার দরকার পড়লো। ১৬ বল টিকে রইলেন, শেষ রক্ষাটা অবশ্য হলো না। তাইজুলের বলে এলবিডাব্লিউ হলেন, সিরিজ শেষ হয়ে ক্রিকেটারটি থাকলেন বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টেস্ট পরাজয়ের শেষেও।
শেষের মিল
কুমার ধর্মসেনা আউট দিয়েছিলেন স্টিভেন ফিনকে। মিরপুর, ২০১৬। মেহেদি হাসানের বলে ফিন হয়েছিলেন এলবিডাব্লিউ, ফিন চাইলেন রিভিউ। কিন্তু ততক্ষণে ইংল্যান্ডের রিভিউ শেষ! ফিন চাইছেন, আম্পায়ার না বলছেন, ক্ষণিকের জন্য যেন থেমে গিয়েছিলেন মুশফিক। স্টাম্প তুলেছিলেন একটু পরে। এবার রিভিউ চাইলেন জশ হ্যাজলউড, তাইজুলের বলে তাকে এলবিডাব্লিউ দিলেন নাইজেল লং। হ্যাজলউডও রিভিউ চাইলেন, লং বলে দিলেন, রিভিউ শেষ অস্ট্রেলিয়ার। তবে এবার আর অপেক্ষা করেননি মুশফিক, আউটের সঙ্কেত দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তুলে ফেলেছেন স্টাম্প!
এবং প্রধানমন্ত্রী
তার ক্রিকেটপ্রেম নতুন নয়। গতকালই আসতে চেয়েছিলেন খেলা দেখতে, তবে সময় করে উঠতে পারেননি। আজ খেলার শেষভাগে ঠিকই চলে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় মাঠে বসে দেখলেন, পতাকা ওড়ালেন। পরে দেখা করলেন সাকিব-তামিম-মুশফিকদের সঙ্গেও। সাকিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, এ ছবিটা এখনও না দেখে থাকলে ইন্টারনেটে আপনার বিচরণ কম বলে ধরে নেয়া যায়!