প্রথম দিনটা অস্ট্রেলিয়ার হতে দিলেন না মুশফিক-সাব্বির
প্রথম দিন শেষে
বাংলাদেশ ৯০ ওভারে ২৫৩/৬ (সাব্বির ৬৬, মুশফিক ৬২*, সৌম্য ৩৩, মুমিনুল ৩১; লায়ন ৫/৭৭)
লেগ স্টাম্পের পাশ ঘেঁষা বলে দৃশ্যত কোনো বিপদই ছিল না। সাব্বির রহমান গ্লান্স করতে গিয়েই অঘটনটা বাঁধালেন। তাল হারিয়ে চলে এলেন ক্রিজের বাইরে, এক মুহূর্তের ব্যবধানে সুযোগ পেয়েই ম্যাথু ওয়েড ভেঙে দিলেন স্টাম্প। আম্পায়ার বার বার রিপ্লে দেখে শেষ পর্যন্ত আউটের সংকেতই দিলেন। খানিকক্ষণ ক্রিজে অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন সাব্বির রহমান। ওই দৃশ্যটা সরিয়ে নিলে বলা যেত, স্বপ্নের একটা বিকেলই কাটিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশই এগিয়ে, সেটাও বলে দেওয়া যেত বোধ হয়।
অথচ তৃতীয় সেশনটা স্বপ্নের মতোই যাচ্ছিল বাংলাদেশের। আগের দুই সেশন মিলে ১৫৫ রান তুলেছিল বাংলাদেশ, এই সেশনের ৩০ ওভারেই শুধু এসেছে ৯৮ রান। তার মধ্যে সাব্বিরের অবদানটাই বড়, শুরু থেকেই ছিলেন দারুণ ইতিবাচক। লায়নকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছয় মেরে শুরুটা করেছিলেন। এরপর দারুণ ফুটওয়ার্কে অস্ট্রেলিয়ার কোনো স্পিনারকেই থিতু হতে দেননি। মুশফিককে নিয়ে দ্রুত রান তুলেছেন, ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি পেতেও দেরি হয়নি। এই চট্টগ্রামেই গত বছর ইংল্যান্ডের সঙ্গে করেছিলেন ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৬৪, এবার সাব্বির ছাড়িয়ে গেলেন সেটিও।
কিন্তু মুশফিকের সঙ্গে জুটিটা যখন শতরান ছাড়িয়ে আরও বড় কিছুর পথে, তখনই ওই দুর্ভাগ্য। মুশফিক অবশ্য ৬২ রানে অপরাজিত থেকে এখনো আশা হয়ে আছেন, ওপাশে নাসির ১৯ রান করার পথে পার করে ফেলেছেন হাজার রানের মাইলফলক। বাংলাদেশের ইনিংসে যেটি এর আগে অতিক্রম করেছেন আরও ১৩ জন। তৃতীয় দিনে এই দুজন কত রান যোগ করতে পারেন, সেটার ওপরেই নির্ভর করছে অনেক কিছু।
তবে দ্বিতীয় সেশন ভুলে যাওয়ার মতোই হয়েছে বাংলাদেশের। লাঞ্চের পর রানের গতিটা একটু বাড়তে না বাড়তেই হোঁচট। মুমিনুল হক খেলছিলেন দারুণ, অনেক নাটকের পর দলে সুযোগ পেয়ে সেটা কাজে লাগিয়ে ফেলবেন বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ৩১ রান করে নাথান লায়নের সোজা একটা ডেলিভারি বুঝতে না পেরেন হয়ে গেলেন এলবিডব্লু। আগের উইকেটগুলোর অ্যাকশন রিপ্লেই যেন হলো। বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম চারটি উইকেটই নিলেন, সবগুলোই এলবিডব্লুতে। টেস্ট ইতিহাসেই কোনো বোলারের প্রতিপক্ষের প্রথম চার উইকেট এলবিডব্লুতে নেওয়ার কীর্তি আর কারও নেই। টেস্ট ক্রিকেটে ৪১ ইনিংসে ৩০ রানের ঘরে মাত্র তিন বারই আউট হয়েছেন মুমিনুল। ফিফটি না পাওয়ার জন্য তাঁর অন্তত আফসোস না থেকে পারে না।
তবে সাকিব অন্য প্রান্তে ছিলেন বেশ স্বচ্ছন্দ। মুমিনুলের সঙ্গে তাঁর ৪৯ রানের জুটি ভেঙে যাওয়ার পর মুশফিককে নিয়ে খেলছিলেন ভালোই। তবে মুমিনুল যেমন লায়নকে চার মারার ঠিক পরেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন, সাকিবও অ্যাগারের শিকার হলেন চার মারার পরের বলেই। অফ স্টাম্পের কাছ ঘেঁষে আসা বলটা কাট করতে গিয়েই ক্যাচ তুলে দেন ম্যাথু ওয়েডের হাতে। ২৪ রানের ইনিংসটা বড় করতে না পারার হতাশা নিয়ে মাথা নাড়তে নাড়তেই ছেড়েছেন মাঠ। টেস্ট ক্রিকেটে মাত্র ষষ্ঠবারের মতো বিশের ঘরে আউট হলেন। ১১৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন কাঁপছে।
অথচ টসভাগ্যটা ছিল বাংলাদেশের পক্ষেই। শুকনো উইকেট, মাথার ওপরে সূর্যের আনাগোণাও সরব, টসে জিতে ব্যাটিং নিতে ভুল করেননি মুশফিকুর রহিম। স্টিভ স্মিথও তাই নিতেন। ১৯৩৮ সালের পর প্রথমবার টেস্ট শুরু করলেন অস্ট্রেলিয়ান কোনো স্পিনার, লায়ন পেলেন তার পুরষ্কারও।
কামিন্স শুরু থেকেই আঁটসাঁট বোলিং করছিলেন, ৭ম ওভারে তামিম স্লিপে ক্যাচও দিয়েছিলেন। কোমরের একটু ওপরে সেটা মিস করেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, তবে তাকে একরাশ স্বস্তি দিয়েছেন তামিম নিজেই, ঠিক ৩ ওভার পর। লায়নের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে প্যাডের আগে ব্যাটই নিয়ে গিয়ে আড়াআড়ি খেলতে গিয়েছিলেন তামিম, তবে ব্যাটটা চলতি পথে ঘষা খেয়ে গেল প্যাডে। ব্যাটে যেতে হলো দেরি, ততক্ষণে নাইজেল লংয়ের আঙ্গুল উঠে গেছে। আগের টেস্টে দুই ইনিংসেই ফিফটি করা তামিম ব্যর্থ দুই অঙ্কেই পৌঁছাতে।
তিন নম্বরে ইমরুলের অস্বস্তি বোঝা গেছে আরেকবার। লায়নকে সুইপ করতে গিয়েছিলেন, ব্যাট পায়নি বলের নাগাল। লং প্রথমে আউট দিলেন না, লায়নও প্রথমে রিভিউ নিতে আগ্রহী ছিলেন না। স্মিথ রিভিউ নিলেন, ২১ রানেই ২য় উইকেট নেই হয়ে গেল বাংলাদেশের। সর্বশেষ ১৩ ইনিংসে ইমরুলের মাত্র একটি ফিফটি, চাপ বাড়ল আরেকটু।
চার নম্বরে এলেন আলোচিত মুমিনুল, ড্রাইভ খেললেন ধীরে-সুস্থে। নড়বড়ে মনে হলেও সৌম্যও থিতু হচ্ছেন ধীরে ধীরে। ১৬তম ওভারে লায়নকে কাভার ড্রাইভে চার ও ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে ছয় মেরে নিলেন ১০ রান। এদিক-ওদিক গেছে এরপর বল, ক্লোজ-ইন বা অন্যান্য ফিল্ডারদের সামনে পড়েছে, ‘উহু আহা এহে’ করেছেন অস্ট্রেলিয়ানরা। শেষের আগের ওভারেও ফ্লিক করতে গিয়ে মুমিনুল অস্ট্রেলিয়ানদের আবেদনের কবলে পড়েছিলেন, স্মিথ রিভিউ নেননি এবার। সেটার জন্য অবশ্য স্মিথকে খুব বেশি আফসোস করতে হয়নি। কিন্তু দিন শেষে স্কোর দেখে স্মিথের আফসোস না জেগে পারেই না!