• বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া
  • " />

     

    হ্যান্ডসকম্ব-ওয়ার্নারের দিনে বাংলাদেশের আক্ষেপ

    হ্যান্ডসকম্ব-ওয়ার্নারের দিনে বাংলাদেশের আক্ষেপ    

    দ্বিতীয় দিন শেষে

    অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ৬৪ ওভারে ২২৫/২ (ওয়ার্নার ৮৮*, হ্যান্ডসকম্ব ৬৯*, স্মিথ ৫৮, মুস্তাফিজুর ১/৪৫, তাইজুল ১/৫০)

    বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৩০৫ (মুশফিক ৬৮, সাব্বির ৬৬; লায়ন ৭/৯৪)


    দৃশ্য ১: ৩৯তম ওভারের শেষ বল। তাইজুল ইসলামের বলটা একটু বেশিই বাউন্স করল। রক্ষণ করতে গিয়েই ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাট প্যাড হয়ে ক্যাচ উঠে গেল শর্ট লেগে। ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা মুমিনুল হক বলটা ধরতে ধরতেও ফেলে দিলেন। ৫২ রানে জীবন পেলেন ওয়ার্নার।

     

    দৃশ্য ২:  ৫৭তম ওভারের প্রথম বল। ওয়ার্নারের রান ৭৩। ইনিংসের শুরুতে খুব বেশি ক্রিজ ছেড়ে না এলেও পরের দিকে পা ব্যবহার করেছেন দারুণভাবেই। এবারও ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসেই বাঁধালেন গড়বড়। বলের লাইন মিস করলেন, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে বলটা ওয়ার্নারের প্যাডে লিগে আরও নিচু হয়ে গেল। মুশফিকুর রহিম বুঝে ওঠার আগে বলটা গিয়ে তাঁর প্যাডে। ওয়ার্নার ততক্ষণে চলে এসেছেন ক্রিজে। মিস হলো আরেকটি স্টাম্পিংয়ের সুযোগ।

    দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনটা বাংলাদেশের জন্য কতটা আক্ষেপের হয়ে ছিল, তার প্রতীকী ছবি হয়ে থাকতে পারে এই দুইটি দৃশ্য। চট্টগ্রামের উইকেটে এখনও স্পিন সেভাবে ধরেনি। বাংলাদেশের বোলাররাও চেপে ধরতে পারেনি প্রতিপক্ষকে। সেই সঙ্গে রক্ষণাত্মক অধিনায়কত্বের সুযোগ নিয়ে ওয়ার্নার-হ্যান্ডসকম্বরা সেটি ষোলআনাই কাজে লাগিয়েছেন। দ্বিতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়া পিছিয়ে মাত্র ৮০ রানে, হাতে আছে আরও আট উইকেট। ম্যাচের ভারসাম্য এখন নিশ্চিতভাবেই অস্ট্রেলিয়ার দিকেই হেলে আছে। ওয়ার্নার- হ্যান্ডসকম্বের অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় জুটিতে তুলে ফেলেছেন ১২৭ রান। ওয়ার্নার তাও একটু সুযোগ দিয়েছেন, হিটস্ট্রোকের জন্য একটু ক্লান্ত হয়ে পড়া ছাড়া হ্যান্ডসকম্বকে কখনোই নড়বড়ে মনে হয়নি। ওয়ার্নার এশিয়ায় টানা সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১২ রান দূরে আছেন, হ্যান্ডসকম্ব পেয়েছেন নিজের চতুর্থ টেস্ট ফিফটি।  

     তার আগে লাঞ্চে বাংলাদেশের একমাত্র আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছিলেন তাইজুল। বল হাতে এসেই তাঁর ভেতরের দিকে ঢোকা বলটা যেন বিশাল রহস্য হয়ে দেখা দিল স্মিথের কাছে, ব্যাট-প্যাডের মাঝে ‘ইয়া বড়’ এক ফাঁক রেখে হলেন বোল্ড। সিরিজে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটিটা ভাঙলো, আরেকবার স্পিনারের হাত ধরে এলো সাফল্য। আউট হওয়ার আগে স্মিথ করেছেন সিরিজে প্রথম ফিফটি। এ সেশনে বাংলাদেশের সাফল্য ওই একটিই, ‘উহু আহা’ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ানরা আর কিছু দেননি সাকিবদের। 
     

    দ্বিতীয় সেশন শুরুর আগে অবশ্য আরও বেশি কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল বাংলাদেশ। সিরিজে প্রথমবার কোনও বাংলাদেশী পেসার নিলেন উইকেট। কোনো পেসারের প্রথম উইকেট এ টেস্টেও। তবে ম্যাট রেনশর সে উইকেটে মুস্তাফিজের সঙ্গে সমান অবদান মুশফিকুর রহিমেরও। লেগসাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন রেনশ, ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়েছেন মুশফিক। উইকেট মুস্তাফিজ নিলেও সকাল থেকেই লোভাতুর দৃষ্টিতে উইকেটের দিকে তাকিয়ে থাকার কথা ছি বাংলাদেশী স্পিনারদেরও। বাংলাদেশের বাকি থাকা ৪ উইকেটও গেছে অস্ট্রেলিয়ান স্পিনারদের ঝুলিতেই। 
     

    সকালের সেশনে কামিন্স-ওকিফের বলে প্রথম আধঘন্টা নিরাপদেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম ও নাসির হোসেন। কিন্তু বোলিংয়ে এসেই সর্বনাশটা করলেন নাথান লায়ন, প্রথম বলেই তুলে নিলেন মুশফিককে। সেটাই যেন ভেঙে দিল বাংলাদেশের প্রতিরোধ, আগের দিনের সঙ্গে ৫২ রান যোগ করেই ৩০৫ রানে অলআউট হয়ে গেল বাংলাদেশ। সাত উইকেট নিয়ে লায়ন ছিলেন মূল হন্তারক। 
     

    আগের দিনই লায়ন জানিয়েছিলেন, উইকেটে খুব একটা স্পিন ধরছে না। আজ মুশফিককে করা দ্বিতীয় বলটা টার্ন করল একটু বেশিই।  বল বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাটের কানায় লেগে ভেঙ্গে দিয়েছে অফ স্টাম্প। আগের দিনের সঙ্গে মাত্র ছয় রান যোগ করেই আউট হয়ে গেছেন মুশফিক।
     

    কিন্তু নাসির অন্যদিকে ছিলেন বেশ স্বচ্ছন্দ। ওকিফকে এক ওভারে পর পর দুই চার মেরে চল্লিশের ঘরেও পৌঁছালেন। কিন্তু অ্যাশটন অ্যাগারের বলেই হলো সর্বনাশ, কাট করতে গিয়ে ম্যাথু ওয়েডের হাতে ক্যাচ তুলে দিলেন। সিরিজে এ  নিয়ে তিন বারই অ্যাগারের শিকার হলেন নাসির, পাঁচ রানের জন্য পাওয়া হলো না ফিফটি। মিরাজ তাইজুলকে নিয়ে ৩০০ রানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু একটা রান নিতে গিয়েই লাগল ভজকট, এবারও লায়নের বলেই। ওয়ার্নারের থ্রো যখন স্টাম্প ভেঙে দিয়েছে, মেহেদী ক্রিজ থেকে অনেকটা দূরে।


    শেষ পর্যন্ত লায়নকে ছয় মেরেই বাংলাদেশকে ৩০০ পার করলেন তাইজুল। সেই ছয় মারতে গিয়েই হলো বিপদ, ক্যাচ তুলে দিলেন স্লিপে। সর্বশেষ ১৩ ইনিংসে এই প্রথম বাংলাদেশে কোনো দল ৩০০ ছাড়াতে পারলো, ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ৩২৫ রান করার পর আর কেউ ৩০০ ছাড়াতে পারেনি আজকের আগে।

      কে জানত, সেই রান দিন শেষে এমন কম মনে করাবেন ওয়ার্নাররা!