চার দিনেই বাংলাদেশকে পরাজয়টা ফিরিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়া
বাংলাদেশ ৩০৫ এবং ১৫৭ ( মুশফিক ৩১, মুমিনুল ২৯, সাব্বির ২৪, ; লায়ন ৬/৬০, কামিন্স ২/২৭)
অস্ট্রেলিয়া ৩৭৭ এবং ১৫.৩ ওভারে ৮১/৩ (ম্যাক্সওয়েল ২৫*, হ্যান্ডসকম্ব ১৬*; মুস্তাফিজ ১/১৬, তাইজুল ১/২৬, সাকিব ১/৩৫)
ফলঃ অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরাঃ নাথান লায়ন
মিরপুর থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব কত? মুশফিকদের কাছে সেটা এখন সুদূরে হারিয়ে যাওয়া কোনো স্মৃতির মতো মনে হতে পারে। আট দিন আগে যে অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশ চার দিনে হারিয়েছিল, চট্টগ্রামে সেই পরাজয়টাই সেই চার দিনেই তাদের ফিরিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়া। জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া আর কোনো দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়টা এখনো অধরাই থাকল বাংলাদেশের, ৭ উইকেটে জিতে সমতা নিয়ে এলো অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের পরেই নিশ্চিত হয়ে যায়, অস্ট্রেলিয়া সমতা ফেরাচ্ছেই। ক্রিকেট ইতিহাসে একবারই এর চেয়ে কম রান তাড়া করে হারের রেকর্ড আছে, ইংল্যান্ডের ৮৫ রান তাড়া করে সাত রানে হেরে যাওয়ার সেই ‘কীর্তিও’ আবার ১৩৫ বছর আগের। ওয়ার্নার, স্মিথ আর রেনশ ফিরে গেছেন দ্রুত রান তুলতে গিয়েই। মুস্তাফিজ, সাকিব আর তাইজুলের তিনটি উইকেট সান্ত্বনা ছাড়া আর কিছুই হতে পারেনি। ৮৬ রানের জন্য আজ দিনে ২০ ওভার পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, ১৬ ওভারেই কাজটা শেষ করে ফেলেছে।
অথচ তৃতীয় দিনের শেষে বাংলাদেশের ড্র এমনকি জয়ের সম্ভাবনাও ছিল ভালোমতোই। চতুর্থ দিনের সকালের সেই স্বপ্নের পালে লাগল আরও জোর হাওয়া। আগের দিনের সঙ্গে কোনো রান যোগ না করেই অলআউট হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
এরপরেই শুরু বাংলাদেশের দুঃস্বপ্নের সেশন। সেই পুরনো দিনের মতোই হঠাৎ করেই উইকেটটা ব্যাটসম্যানদের কাছে হয়ে উঠল দুর্বোধ্য, ব্যাটিং ভুলে গিয়ে সবাই যেন পথ ধরলেন প্যাভিলিয়নের মিছিলে। শুরুটা হয়েছিল সৌম্য সরকারের আউট দিয়ে, প্যাট কামিন্সের গুড লেংথের একটু সুইং করা বল খোঁচা দিয়ে সৌম্য ক্যাচ দিয়েছেন প্রথম স্লিপে। ১১ রানেই প্রথম উইকেট হারাল বাংলাদেশ। দলের ৩২ রানে লায়নের বলে স্টাম্প ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে এসে স্টাম্পড হয়ে গেলেন তামিম। বাংলাদেশের বিপর্যয়ের শুরুটা তখনই।
অন্য সব আউটে যদি কৃতিত্ব বোলারদের হয়, ইমরুল কায়েসের দোষটা পুরোপুরি নিজের কাঁধেই নিতে হবে। লায়নের বলটা ক্যাচ প্র্যাকটিস করার মতো তুলে দিয়েছেন শর্ট কাভারে। বাংলাদেশ তখন ৩৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে।
দুই ওভার পরেই সেটি হয়ে গেল ৩৯ রানে চার উইকেট। এবার ফিরে গেলেন সাকিব, সেই লায়নের বলেই লাইনে গিয়ে খেলতে না পেরে খোঁচা মেরে ক্যাচ দিলেন স্লিপে। সাকিব করলেন মাত্র দুই রান, বাংলাদেশ তখন আরও বিপর্যয়ে।
নাসির হোসেনও এরপর থাকলেন বেশিক্ষণ। লায়নকে ঠেকানোর জন্যই বাঁহাতি কম্বিনেশন ভেঙে নাসিরকে পাঠানো হলো চারে, কিন্তু ফাটকাটা কাজে লাগলো না। ওকিফের বলে টার্নে পরাস্ত হয়েই নাসির ক্যাচ দিলেন স্লিপে, আউট হলেন পাঁচ রান করেই। ৪৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন কাঁপছে।
এরপর সাব্বির আর মুশফিকের জুটিটা আশাই দেখাচ্ছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু অন্তত পাঁচবার জীবন পেয়েও সেটা কাজে লাগাতে পারলেন না সাব্বির। পুরো ইনিংস জুড়েই ছটফট করছিলেন, শেষ পর্যন্ত লায়নকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এলেই হলো সর্বনাশ। ২৪ রানেই ফিরলেন সাব্বির, ওয়েড করলেন ইনিংসে তাঁর দ্বিতীয় স্টাম্পিং। ৫৪ রানেই ভেঙে গেল দুজনের জুটি।
সাব্বির অবশ্য ২ রানের সময়ই ওকিফের বলে এলবিডব্লু হয়ে গিয়েছিলেন। রিভিউতে দেখা গেছে, ইনসাইড এজ হয়েছিল। ওই যাত্রা রিভিউ নিয়ে পার পেয়ে গেছেন। এক বল আবার আপিল ওকিফের, এবার আম্পায়ার আঙুল না তুললেও রিভিউ নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তাতে অবশ্য লাভ হয়নি, সাব্বিরও আউট হননি। তবে আউট হতে পারতেন লায়নের বলেই অন্তত তিন বার। লং অনে, শর্ট মিড উইকেটে, শর্ট লেগে একটুর জন্য তাঁর ক্যাচ হাতে জমাতে পারেনি।
সাব্বিরের আউটের পর আট নম্বরে নেমে মুমিনুল হক শুরু থেকেই ছিলেন স্বচ্ছন্দ। লায়ন-অ্যাগারদের বল খেলতেও খুব একটা সমস্যা হচ্ছিল না। এই উইকেটে যেমন টেকনিকের প্রয়োজন, মুশফিক নিজের সেই সামর্থ্যের সবটুকুই দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু প্যাট কামিন্স বল হাতে নিয়েই করলেন বাজিমাত, অফ স্টাম্পের ঠিক বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে মুশফিক ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে। ভেঙে গেল দুজনের ৩২ রানের জুটি।
তবে মুমিনুল ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু চা বিরতির আগেই হলো ধৈর্যচ্যুতি। যে লায়নকে এতোক্ষণ ভালোভাবেই সামাল দিচ্ছিলেন, তাঁর বলেই সুইপ করতে গিয়ে ২৯ রানে ক্যাচ দিলেন ডিপ স্কোয়ার লেগে। বাংলাদেশের পরাজয়ের কফিনে খুব সম্ভবত শেষ পেরেকটাও ঠোকা হয়ে গেল। এরপর তাইজুল-মুস্তাফিজও ফিরে গেছেন খুব তাড়াতাড়িই, ১৫৭ রানেই অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। দুই ইনিংস মিলে ১৩ উইকেট নিয়ে লায়নই মূল ঘাতক। পরাজয়ের পান্ডুলিপিটাও লেখা হয়ে গেছে তখনই।