মুমিনুলই কেন 'বলির পাঁঠা', ব্যাখ্যা করলেন মুশফিক
দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগেই মুশফিকুর রহিম বলেছিলেন, বাংলাদেশ ড্র নয়, জয়ের জন্যই খেলবে। তবে একজন বোলার কমিয়ে বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান খেলানোটা শুরু থেকেই উলটো বার্তাই দিয়েছিল। সেই অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান মুমিনুল হককেও যখন দুই ইনিংসে দুই পজিশনে খেলানো হলো, তখন সিদ্ধান্তটির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠল। মুশফিক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাকফুটেই খেললেন, স্বীকার করলেন আট নম্বরে ব্যাট করা যে কারও জন্যই কঠিন। তবে ট্যাকটিক্যাল কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, সেটাও স্পষ্ট করে জানালেন।
ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রথম ১৭ ইনিংস মুমিনুল হক খেলেছেন চার নম্বরে। ৬০.৫৩ গড় বলছে সেখানে এই বাহাতি ব্যাটসম্যান থিতুও হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৫ সালের খুলনা টেস্ট থেকে মুমিনুলকে সরিয়ে আনা হয়েছে তিনে, সেখান থেকেই তাঁর ফর্মের নিম্নমুখী গ্রাফের শুরু। এই টেস্টে আবার সেই পুরনো পজিশন চারে ফিরিয়ে আনা হলো, প্রথম ইনিংসে সেখানে শুরুটা ভালো করেও আউট হয়ে যান ৩৩ রানে। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে নামতে হয়েছে আটে, এমনকি সাব্বির-নাসিরেরও পরে। চারে নাসিরকে নামিয়ে দেওয়ার ফাটকাও কাজে আসেনি। মুশফিক স্বীকার করলেন, যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই কাজটা কঠিন, ‘আট নম্বরে খেলাটা অবশ্যই আমার জন্যও কঠিন। যেকোনো ব্যাটসম্যানকে খেলাটা জাস্টিফাইড না। এটা ট্যাকটিক্যাল ম্যুভ ছিল। রাইট লেফট কম্বিনেশনের জন্যই করা হয়েছে।’
কিন্তু ডান হাতি বাহাতি কম্বিনেশনের জন্যই যদি হয়, তাহলে মুমিনুলকে বেছে নেওয়া কেন? ইমরুল বা সাকিবের ব্যাটিং অর্ডারও তো পরিবর্তন হতে পারত? মুশফিকের ব্যাখ্যা, ‘নাম্বার ফোরে আমরা কিন্তু লাস্ট কয়েকটা টেস্টে কিন্তু সেভাবে বিশেষজ্ঞ কাউকে পাইনি। সাব্বিরও যে কয়েকটা টেস্ট খেলেছে, ওর কাছ থেকে ওই পজিশনে আমরা যতটুকু আশা করেছিলাম সেটাও পাচ্ছিলাম না। আর নাম্বার সেভেনে খেলে ও শেষ ইনিংস ভালো রান পেয়েছে, তাই ওকে ওখান থেকে সরাতে চাইনি। আর সাকিব তো পাঁচে খেলেই। আর তিন নম্বরে মুমিনুল ওই জায়গায় খেলেছে অবশ্যই। কিন্তু যেহেতু এই টেস্টে আমরা তিন জন ওপেনার নিয়ে খেলেছি ও জায়গাটা চেঞ্জ করাটা কঠিন হয়ে যায়। আমরা চিন্তা করেছিলাম মাঝে কোথাও একটা ডান হাতি ব্যাটসম্যান যায় তাহলে ওদের রিদমের একটা সমস্যা হতে পারে।’ প্রথম ইনিংসে সাব্বির সাতে ভালো করায় তাঁকে চারে পাঠানো হয়নি, সেটাও জানালেন মুশফিক, ‘ও ফার্স্ট ইনিংসে খুব ভালো ব্যাট করেছে, সেটা সাত নম্বর থেকেই। এটাই ওর খেলা। তো আমরা চেষ্টা করি ওভাবেই গেম প্ল্যান করার।’
তাহলে প্রথম ইনিংসেই কেন টানা চারজন বাহাতিকে খেলানো হলো? মুশফিকের কাছে সেটার ব্যাখ্যাও আছে, ‘আমরা মনে করছিলাম উইকেটটা আসলে বাহাতিদের জন্য কঠিন কিছু ছিল না। আপনি একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখেন প্রথম ইনিংসে বাহাতিরা কিন্তু কোনো আউটসাইড এজ বা আপিশ শট খেলেনি। সব স্টাম্পের বল মিস করেছি।’
মুশফিকের দাবি, দলের ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ‘এটা আসলে রেজাল্ট দেখে চিন্তা করি না। আমরা চেষ্টা করি, দলের বেনিফিট যাতে হয়। সত্যি বলতে, আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। যেহেতু হয়নি, তাই এই ব্যাপারটা আমাদের পরের বার থেকে মাথায় থাকবে। সেটা কাজে লাগাতে পারলে অন্যরকম কিছু হতে পারত।’
কিন্তু বার বার এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে কি মুমিনুলের আত্মবিশ্বাসটা নড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না? মুশফিক অবশ্য সতীর্থের জন্য একটা ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছেন, ‘অনেকেই হয়তো বলত ও অফস্পিন খেলতে পারে না। কিন্তু বিশ্বের সেরা অফ স্পিনারদের একজনকে ও খুব খারাপ খেলেছে বলে মনে হয় না। ভবিষ্যতে আমরা এই আউটকামগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।’
সেটা করতে পারলে মুমিনুলের জন্য তো বটেই, দলের জন্যও ভালো।