মুশফিকের যত 'দ্বিধা'
দলে তাঁর তিনটি ভূমিকা। এক, ব্যাটসম্যান। দুই, উইকেটকিপার। তিন, অধিনায়ক। প্রথম দুই ভূমিকাটা শুধুই নিজের, কিন্তু শেষেরটিতে মুশফিকুর রহিমকে ভাবতে হয় আরও দশজনের কথা। কিন্তু তিন ভূমিকার গ্যাড়াকলে পড়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক নিজেই নিশ্চিত নন, দলে তাঁর ভূমিকা কী! সেজন্য দায়টা চাপিয়ে দিলেন দলের ‘থিঙ্কট্যাঙ্কের’ ওপরেই।
অভিষেক টেস্টে ব্যাট করেছিলেন ছয়ে। এরপর সাত, আট, ছয়, পাঁচ সব পজিশনেই ব্যাট করেছেন অনেকদিন। শেষ পর্যন্ত ২০১২ সাল থেকে ছয় নম্বরে এসে থিতু হয়েছেন। কিন্তু টেকনিক্যালি বাংলাদেশ দলের তর্কাতীতভাবে সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে ওপরে ব্যাট করা উচিত কি না, সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে অনেক। কখনো কখনো সেটাও করেছেন, মিরপুর টেস্টেই যেমন বিরুদ্ধ কন্ডিশনে পাঁচে ব্যাট করেছেন। পরিস্থিতির বিচারে ৪১ রানের গুরুত্বপূর্ণ একটা ইনিংসও খেলেছেন। এই টেস্টেও যখন বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে আরেকটু ওপরে ব্যাট করা উচিত কি না, সেই প্রশ্নও উঠল। ডান-বাম জুটি রাখতে নাসির হোসেনকে না পাঠিয়ে কি অধিনায়ক নিজে নামতে পারতেন না? মুশফিক একটু অনুযোগের সুরেই মনে করিয়ে দিলেন, ‘১২০ ওভার কিপিং করার পর যদি গিয়ে আবার চার নম্বরে ব্যাটিং করতে হয় তাহলে আমি বলবো এটা আমার একার দায়িত্ব নয়। শুধুমাত্র অধিনায়ক হিসেবেই নয়, প্রত্যেকটা প্লেয়ারেরই একটা ক্রাইটেরিয়া থাকে খেলার। টেস্টে এমনটা হতে পারে না যে আপনি আগে ব্যাটিং পেলে চারে খেলবেন কিংবা পরে ব্যাটিং পেলে আপনি ছয়ে খেলবেন। এরকমটা আসলে বিশ্বক্রিকেটে খুব কমই আছে। আমার জন্যও অনেক চ্যালেঞ্জিং। এটা হয়তো প্রত্যেক টেস্টে আমার জন্য হবে না, হয়তো বা একটা-দুইটা টেস্টে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন, সেখানে নাও ক্লিক করতে পারে।’
যুক্তিটা ফেলনা নয় অবশ্যই, কিন্তু মুশফিক নিজেকে আসলে কোন ভূমিকায় দেখেন? উইকেটকিপিং ছেড়ে দিয়ে ব্যাটিংয়ে আরও মনযোগ দেওয়া উচিত কি না, সেই প্রশ্নও অনেক পুরনো। কুমার সাঙ্গাকারা কিপিং ছাড়ার পর কী করেছেন, সেই উদাহরণ তো চোখের সামনেই। এমনকি সর্বশেষ গল টেস্টে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে যখন চারে ব্যাট করেছিলেন,৮৫ ও ৩৪ রানের দুইটি ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিক। মিরপুরের মতো চট্টগ্রামে নিজেকে ওপরে নিয়ে এলে বিপর্যয় ঠেকানো যেতো কি না, সেই তর্কও উঠতে পারে। কিন্তু মুশফিকের কথাটা বিস্ময় জাগাবে, নিজের ভূমিকার ওপর তাঁর হাতই নেই!
‘এটাতো আসলে আমার ইচ্ছাতে হচ্ছে না। আমি যে শ্রীলঙ্কাতে কিপিং করিনি এটাও আমার ইচ্ছাতে ছিল না! আমার কিপিংয়ে কখনোই আপত্তি ছিল না। আমি বার বার বলেছি এখানে আমি একজন খেলোয়াড় হিসেবে ৪০-৫০ বছর খেলব না, হয়তো ৫-৬ বছর খেলবো। আমি চেষ্টা করি আমার দলের জন্য যতটুকু সম্ভব সেরাটা দেওয়ার। সেখানে অধিনায়কত্ব না থাকলেও আমার কোন সমস্যা নেই। আবার ধরেন কিপিং না থাকলেও সমস্যা নেই…। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে অনুভব করি আমি শতভাগ দিতে পারছি কিনা। এখন যদি বলে তোমাকে দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে শতভাগ দিতে হবে তাতেও আমি রাজী। আমার মনে হয় উপরে যারা আছেন (দলের নির্বাচক ও কোচ) তাদেরকে এই প্রশ্নটা করা বেটার। সেক্ষেত্রে আমিও আমার দিক থেকে পরিষ্কার হয়ে যাই।’
কিন্তু প্রশ্ন ওঠেই, দলের অধিনায়ক হিসেবে সেই পরিষ্কার করার দায়িত্বটা কি মুশফিকের নয়? নিজের ভূমিকা নিয়েই তাঁর মধ্যে যে দ্বিধা, সেটাই বা দূর করবে কে?