'দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে খেলার এটাই সবচেয়ে ভালো সময়'
না থেকেও সংবাদ সম্মেলনে যেন ছায়া হয়ে ছিলেন সাকিব আল হাসান। তিন বছর পর বাংলাদেশের কোনো টেস্টে নেই সাকিব, তবে প্রথমবারের মতো এবার নিজের ইচ্ছায়। পচেফস্ট্রুমে প্রথম টেস্টের আগের দিন বার বার ঘুরে এলো তাঁর নাম। সাকিবের বিকল্প হিসেবে শেষ পর্যন্ত কে খেলবেন, সেই ‘রহস্য’ টসের আগ পর্যন্তই রেখে দিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তবে এর মধ্যেও হাথুরুসিংহে মনে করিয়ে দিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে খেলার জন্য এটাই আদর্শ সময়।
কোচের কথায় একটু ভুরু কুঁচকে যেতেই পারে। এই মুহূর্তে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বের দুই নম্বর দল, নিজেদের মাটিতে সর্বশেষ পাঁচটি সিরিজের মাত্র একটিতে হেরেছে। সেটিও উপমহাদেশের কোনো দলের সঙ্গে নয়। তবে চোটের জন্য এই দলটা যতটা বিধ্বংসী দেখাতে পারত, ততটা দেখাচ্ছে না। ডেল স্টেইন, ভারনন ফিল্যান্ডার, ক্রিস মরিসদের তাই প্রথম টেস্ট দেখতে হচ্ছে দর্শক হয়েই। কোচ ওটিস গিবসন দায়িত্ব নিয়েছেন মাত্রই। হাথুরুসিংহে মনে করিয়ে দিলেন, ‘আমার তো মনে হয় দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে খেলার এটাই সবচেয়ে ভালো সময়। ওদের কোচ এখন নতুন, বেশ কয়েকজন পেসারও নেই চোটে। আমার তো মনে হয় এটা আমাদের জন্য ভালো একটা সুযোগ।’
সেই সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তুরুপের তাস যাঁর হওয়ার কথা ছিল, সেই সাকিবই তো নেই। মুশফিক যেমন স্বীকার করে নিলেন, ‘অবশ্যই, ওর মতো খেলোয়াড়কে তো সবাই মিস করবে। ওর বিকল্প পাওয়া তো অনেক কঠিন।’ তবে প্ল্যান বি এর ছকটা যে ভালোমতোই আঁটা হয়েছে, সেটাও অনুচ্চারে জানিয়ে দিলেন হাথুরুসিংহে, ‘সাকিবের বিকল্প পাওয়া যে কোনো দলের জন্যই তো কঠিন। বিশেষ করে ট্যাকটিক্যালি এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আআমাদের একটা পরিকল্পনা তো আছেই, আমরা বেশ আত্মবিশ্বাসী।’
সেই পরিকল্পনাটা কী? একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান নিয়েই খেলতে নামবে বাংলাদেশ? নাকি যোগ হবেন একজন বাড়তি বোলার? হাথুরুসিংহে শুরুতেই পরিষ্কার করে দিলেন, ‘আমরা তো ১১ জনই খেলাতে পারি, ১২ জন নিয়ে তো আর মাঠে নামতে পারব না। হয় আমাদের একজন বোলার বা একজন ব্যাটসম্যান দিয়ে জায়গাটা পূরণ করতে হবে। কালই বোঝা যাবে আমরা কী দল নামাব।’
তবে কোচ যা বললেন না, সেটার একটু আভাস দিলেন অধিনায়ক মুশফিক। পচেফস্ট্রুম বাংলাদেশের জন্য যতটা অচেনা, ততটা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্যও। এই ২০০২ সালে এখানে একমাত্র টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দলই। তবে গত মাসে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে এই পিচ বরং কিছুটা স্লথই ছিল, স্পিনও ধরেছে খানিকটা। উইকেট দেখে মুশফিকেরও সেরকম মনে হয়েছে, ‘উইকেট তো মনে হলো বেশ শুকনো। আমার মনে হয় ভালো একটা ব্যাটিং উইকেট হবে। আর দুই তিন পর স্পিনও ধরতে পারে।’
সেই হিসেবে অন্তত একজন স্পিনার খেলছেন কাল। বাংলাদেশ যে তিন পেসার নিয়ে খেলতে নামছে, সেটাও নিশ্চিত করে দিলেন অধিনায়ক, ‘এখানে পাঁচজন নিয়ে এসেছি, তাদের মধ্যে যে সেরা তিন জনকে নিয়ে খেলব, তারাও সবাই প্রস্তুত। তারা জানে তারা ভালো না করলে বিকল্পও আছে, ওদের মধ্যে ওই তাগিদও আছে। এখানে আসার পর আমাদের সবার বেশ ভালো প্রস্তুতি হয়েছে। আর দেশের বাইরে তো পেসারদের ভালো করতেই হবে, এটা ওদের জন্যও অনেক বড় একটা সুযোগ।’
মুশফিক, হাথুরুসিংহে অবশ্য বার বারই মনে করিয়ে দিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাঠে হারানো অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ যে আন্ডারডগ, সেটা মুশফিক নিজ থেকেই স্বীকার করে নিলেন। তবে হাথুরুসিংহে ঠিকই মনে করিয়ে দিলেন, বাংলাদেশ খেলবে জয়ের জন্যই।
জয় না হোক, পচেফস্ট্রুমে লড়াই করতে পারলে সেটাই হবে সাকিবহীন বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় কিছু।