• বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা
  • " />

     

    ধ্বংসস্তুপে দাঁড়াতে পারলেন শুধু লিটনই

    ধ্বংসস্তুপে দাঁড়াতে পারলেন শুধু লিটনই    

    স্কোর 

    দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস . ১২০ ওভারে ৫৭৩/৪ডিক্লে ( ডু প্লেসি ১৩৫*, আমলা ১৩২; শুভাশীষ ৩/১১৮)

    বাংলাদেশ ৪২.৫ ওভারে ১৪৭ (লিটন ৭০, ইমরুল ২৬ ; রাবাদা ৫/৩৩) এবং ৭/০


     

    পচেফস্ট্রুমে যেখান থেকে শেষ, ব্লুমফন্টেইনে সেখান থেকে শুরু। সেই ইনিংসের মতো এবার বাংলাদেশের শুরু থেকেই মড়ক। সেবার বাংলাদেশ ১০০ও ছুঁতে পারেনি, লিটন দাসের ব্যাটে পাল্টা আক্রমণ না হলে এবারও তেমন কিছু হতে পারত বাংলাদেশ। লিটনের জন্যই দ্বিতীয় দিন শেষেই বাংলাদেশকে ১০ উইকেটের বেশি হারাতে হয়নি। তবে এখনো দক্ষিণ আফ্রিকাকে আরেক বার ব্যাট করাতে করতে হবে ৪১৯ রান।  অলৌকিক কিছু না হলে এই টেস্ট যে ইনিংস ব্যবধানে হারছে, সেটা বলেই দেওয়া যায়।

     

    শুরুটা হয়েছিল সৌম্য সরকারকে দিয়ে। প্রথম থেকেই শরীর বরাবর শর্ট বলটাই রাবাদাদের মূল অস্ত্র ছিল। সৌম্যও অন্তত দুবার বাউন্সারেই ক্যাচ হতে হতেও হননি। তবে আউট হয়েছেন লেগ স্টাম্পের ওপর আসা বলেই, ক্রিজে নিজের জায়গাটাও ঠিকঠাক বুঝতে পারেননি সৌম্য। রাবাদার বল ভেঙে দিয়েছে তাঁর লেগ স্টাম্প, বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারিয়েছে ১৩ রানেই।

    মুমিনুলের জন্য কাজ হলো ওই শর্ট বলেই। অলিভিয়ের শরীর বরাবর বাউন্সারটা এড়াতে না পেরে খোঁচা দিলেন গ্লাভসে, ডি কক নিলেন সহজ  একটা ক্যাচ। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান ফিরলেন চার রান করেই।

    মুশফিকের আউটটাও শর্ট বলেই, তবে এবার অলিভিয়েরের চেয়ে অনেক বেশি কৃতিত্ব বাভুমার। অফ স্টাম্পের বলে বাউন্সারটা মুশফিক ঠেলে দিয়েছিলেন গালির দিকে। এক হাতেই লাফিয়ে হাত বাড়ালেন বাভুমা, বলটা নিজের হাতে আবিষ্কার করে নিজেই যেন কিছুটা বিস্মিত। অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে ৭ রানেই ফিরলেন মুশফিক, ৩৬ রানে বাংলাদেশ হারাল ৩ উইকেট।

    তবে মাহমুদউল্লাহর অমন আউটের কী ব্যাখ্যা, সেটি নিজে দিতে পারবেন। পারনেলের প্রথম বলটা দারুণ এক চার মারলেন, পরের বলটা অফ স্টাম্পের বাইরে, ছেড়েই দিতে পারতেন। কিন্তু খোঁচা দিয়ে সহজ একটা ক্যাচ দিলেন ডি কককে। ৪৯ রানে গেল চতুর্থ উইকেট।

    সেটি একটু পরেই হতে পারত পাঁচ, এবার পারনেলের বলটা তাড়া করতে গিয়ে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন লিটন। কিন্তু আরও একবার ক্যাচটা ধরতে পারেননি এলগার।

    শূন্য রানে পাওয়া জীবনটা এরপর ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন লিটন। তাইজুলের সঙ্গে গড়েছেন ৫০ রানের জুটি, বাংলাদেশ ১০০ পার করেছে । অলিভিয়েরের বলে তাইজুল বোল্ড হওয়ার ঠিক আগেই পেয়েছেন লিটন পেয়েছেন দ্বিতীয় টেস্ট ফিফটি, সেটিও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই। এরপর ফেলুকোয়াওকে এক ওভারে চারটি চার মেরে পৌঁছে গেছেন ৭০ রানেও।

    এরপরেই হলো অঘটন। রাবাদাকে আবার আনলেন ডু প্লেসি, খাটো লেংথের বল পুল করতে গিয়ে হলো না ব্যাটে-বলে। বল উঠে গেল আকাশে, ডু প্লেসি ধরলেন ক্যাচ। ৭০ রানে ফিরলেন লিটন, দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে বাংলাদেশের হয়ে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ।

     

    এরপর মুস্তাফিজকে ফিরিয়ে দিয়েছেন মহারাজ, রুবেলকে ফিরিয়ে রাবাদা পেয়েছেন পাঁচ উইকেট। এর পরেই ফলো অনে অবশ্য আবার মাঠে নামতে হয়েছে বাংলাদেশ, দিনের শেষ দুই ওভারে আর কোনো বিপদ হতে দেননি সৌম্য-ইমরুল।

     

    অথচ দিনের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেখে মনে হচ্ছিল, ব্যাট করা কত সহজ!  আগের দিনের মতোই এবারও আলগা ডেলিভারিতে সে সুযোগ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। এই সেশনে ২৩ ওভারে রান হয়েছে ১০২ রান, প্রায় পাঁচের কাছাকাছি গড়ে রান তুলেছে আফ্রিকা। সেঞ্চুরি পেয়েছেন আমলা-ডু প্লেসি দুজনেই, এ নিয়ে দ্বিতীয়বার টেস্টের একই ইনিংসে চার জন দক্ষিণ আফ্রিকান পেলেন তিন অঙ্কের দেখা।

    লাঞ্চের পর পরেই অবশ্য শুভাশীষের বলে বোল্ড হয়ে গেছেন আমলা, এরপর কুইন্টন ডি কক ও ডু প্লেসি মিলে ৬ ওভারে যোগ করেছেন আরও ৩৮ রান। শেষ পর্যন্ত ৫৭৩ রান করেই থেমেছে আফ্রিকা। দুই বার ব্যাট করে যে রান টপকানো বাংলাদেশের জন্য এখন অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট জয়ের মতো।