• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    ওয়েম্বলিতে স্পার্সের 'স্পেন' জয়

    ওয়েম্বলিতে স্পার্সের 'স্পেন' জয়    

    ৭১ মিনিটে মাঝমাঠে নিজেদের মধ্যেই বল নেওয়া করছেন টটেনহাম খেলোয়াড়েরা। আর ওয়েম্বলি উপস্থিত স্পার্স সমর্থকেরা প্রতিটি পাস উদযাপন করছেন ‘ওলে’ ধ্বনি তুলে। আর উদযাপন করবেনই বা না কেন? ইউরোপ জয়ী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দল এগিয়ে আছে ৩-০ গোলে! অথচ আজকের আগ পর্যন্ত কখনও রিয়ালের জালে বলই জড়াতে পারেননি স্পার্সের কোনো খেলোয়াড়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ক্লিনশিটটা ধরে রাখতে পারেনি টটেনহাম। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো শোধ দিয়েছিলেন এক গোল। ওয়েম্বলিতে দুই দলের খেলা শেষ হয়েছে ৩-১ ব্যবধানে।

    ঘরের মাঠে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্পেনের কোনো দলকে হারাল স্পার্স, আর রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ইতিহাসের প্রথম জয়। সাথে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ-১৬ ও  নিশ্চিত করে ফেলেছে মারুসিও পচেত্তিনোর দল।



    রিয়াল মাদ্রিদকে হারানোর নায়ক ড্যালে অ্যালে। ইংলিশ ফরোয়ার্ডের করেছেন দুই গোল, আরেকটি এসেছে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসনের পা থেকে। ৭৮ মিনিটে সহজ সুযোগ মিস না করলে হ্যাটট্রিকটাই পেয়ে যেতে পারতেন অ্যালি। রিয়ালের ‘দুঃস্বপ্নের’ রাতটা তাতে তিক্ত হতে পারত আরও।

     

     



    প্রিমিয়ার লিগে আগের ম্যাচে খেলতে না পারেননি হ্যারি কেইন। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের গুরুত্বপূর্ন ম্যাচে শুরুর একাদশেই ফিরেছিলেন দলে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর মতো দ্বিতীয় লেগেও দুই দলের খেলা জমে উঠেছিল শুরু থেকে। এক পাশ থেকে অন্য পাশে খেলা গড়িয়েছে অনেকটা বাস্কেটবলের মতো!

    প্রথম গোলের আগ পর্যন্ত অবশ্য খানিকটা নীরবই ছিল রিয়ালের আক্রমণভাগ। ২৭ মিনিটে কিয়েরান ট্রিপিয়েরের ক্রস থেকে সহজ ট্যাপ ইনে রিয়ালের জালে বল জড়িয়ে নিজের প্রথম গোলটি করেছিলেন অ্যালে। প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা স্পার্সের গোলটা প্রাপ্যই ছিল।

    এর পর ঘুম ভাঙে রিয়ালের। বিরতির আগেই ডিবক্সের ভেতরে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি জিনেদিন জিদানের দল। প্রথমবার কাসেমিরো শট করেছিলেন, হুগো লরিস দলকে বাঁচিয়েছেন বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ এক সেভ করে। কিছুক্ষণ পর প্রায় একই রকম জায়গা থেকে রোনালদোকে এর পর ফেরালেন ডান দিকে লাফিয়ে। বেনজেমার দেওয়া পাসটাও কাজে লাগানোর সুযোগ ছিল রোনালদোর, তবে স্পার্সের রক্ষণ দুর্গ ভাঙতে পারেননি সে দফায়। টনি ক্রুসের নেওয়া একটি ফ্রি কিকটাও গোলে রুপান্তর করতে পারত রিয়াল। তবে সার্জিও রামোস, রোনালদো- দুজনই কিছু বুঝে ওঠার আগে বল চলে গেছে গোল লাইন অতিক্রিম করে।  



    রিয়ালের আক্রমণের চাপ সামলে প্রতি আক্রমণে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল স্পার্সও। ডান দিক থেকেই ট্রিপিয়েরই ছিলেন বেশিরভাগ আক্রমণের কারিগর। প্রথমার্ধে ট্রিপিয়েরের এমনই এক ক্রস থেকে গোল পেতে পারতেন হ্যারি কেইন। কিন্তু রামোসের গায়ে লেগে ফেরত আসে তার নেওয়া শট।

    দ্বিতীয়ার্ধে একই গতিতে খেলা চলতে থাকলে প্রতি আক্রমণ থেকেই বল পেয়ে গিয়েছিলেন ড্যালে অ্যালে। ৫৬ মিনিটে ডিবক্সের ঠিক বাইরে থেকে তার নেওয়া শট এবার রামোসের গায়ে লাগল ঠিকই, কিন্তু সেটাই এবার আনন্দের কারণ হয়ে দাঁড়াল স্পার্স সমর্থকদের জন্য। অ্যালের নেওয়া শট রামোসের গায়ে বাধা পেয়ে ঢুকে গেল রিয়ালের জালে, ২-০ গোলে এগিয়ে গেল স্পার্স।


    এরপরও ম্যাচে ফেরার চেষ্টা চালিয়েছিল রিয়াল। ৬১ মিনিটে গোলটা পেতে পেতেও পাওয়া হয়নি রামোসের। তার চেষ্টা একবার ফেরত আসে গোললাইন থেকে, ফিরতি বলেও শট করেছিলেন। এবার রোনালদোর গায়ে লেগে বল ফেরত আসলে হতাশটা আরও বাড়ে রিয়াল অধিনায়কের। দুই গোল হজম করে ‘অলআউট আক্রমণে’ নামা রিয়ালের জালে এরপর বল জড়ান এরিকসন। কেইন-অ্যালের সমন্বয়ে দারুণ এক প্রতি আক্রমণ থেকে গোল করেন তিনি, ৬৫ মিনিটে।

    গোলশুন্যই থাকতে পারত রিয়াল। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে গোল করাটা তো অভ্যাসেই পরিণত করেছেন রোনালদো। আর টটেনহাম তো তার প্রিয় প্রতিপক্ষ। এবারও খালি হাতে ফেরেননি তিনি। তবে, ৮০ মিনিটে রোনালদোর গোলটা কেবল ব্যবধানই কমাতে পেরেছে ম্যাচে। অনেক গোলের ভিড়ে এই গোলটা হয়ত মনেও রাখতে চাইবেন না রোনালদো! শেষ ৯ বছরে এটিই চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে রোনালদোদের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার।

    হতাশার রাতটা অবশ্য শেষ পর্যন্ত কিছুটা স্বস্তি জুগিয়েছে জিদানকে,  প্রথমে এগিয়ে গিয়েও বরুশিয়া ডর্টমুন্ড নিজেদের মাঠে হারাতে পারেনি অ্যাপোয়েল নিকোসিয়াকে। ডর্টমুন্ড জিতে গেলে দ্বিতীয় পর্বে উঠতে শেষ দুই ম্যাচের সমীকরণটা কঠিনই হয়ে যেত রিয়ালের।