• ফ্রেঞ্চ ওপেন
  • " />

     

    ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেরা পাঁচ নারী খেলোয়াড়

    ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেরা পাঁচ নারী খেলোয়াড়    

    লালমাটির দুর্গে চলতে থাকা জমজমাট লড়াইয়ের সাথে তাল মিলিয়ে প্যাভিলিয়নের পাঠকদের জন্য উপহার “ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেরা পাঁচ”। এই ধারাবাহিকের প্রথম কিস্তি হিসেবে আজ থাকছে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেরা পাঁচ নারী টেনিস খেলোয়াড় এবং তাদের ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের গল্প।

     

    ৫। মনিকা সেলেসঃ

     

    শুধু টেনিস নয়, যে কোন খেলাতেই প্রডিজিদের তালিকা করলে মনিকা সেলেসের নামটা শুরুর দিকেই আসবে। সাবেক যুগোস্লাভিয়া থেকে উঠে আসা সেলেস প্রথম পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন ১৯৯০ সালে- ষোল বছর বয়সে তার প্রথম ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে। বয়স কুড়িতে পৌঁছানোর আগেই তার ঝুলিতে জমা পড়ে আট-আটটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা- যার তিনটি ফ্রেঞ্চ ওপেনের। সেই কুড়ি বছর বয়সেই খেলা চলাকালীন সময়ে পিঠে ছুরিকাঘাতের শিকার না হলে আজ তিনি কোথায় থাকতেন সেটা নিয়ে টেনিসপ্রেমীরা কেবল হা-হুতাশই করেন এখনও।

     

     

    ৪। জাস্টিন হেনিনঃ

     

    ২০০৩ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত পাঁচটি ফ্রেঞ্চ ওপেনের চারটিই জিতে নিয়েছিলেন বেলজিয়ামের এই টেনিস-কন্যা। ২০০৮ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেনেও হেনিনই ছিলেন ফেভারিট- কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতই ওপেনের আগ মুহূর্তে মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। অত্যন্ত দ্রুতগামী, শক্তিশালী ওয়ান-হ্যান্ডেড ব্যাকহ্যান্ড, দুর্দান্ত ভলি আর দারুণ পজিশনিংয়ের চেয়েও সবাই হেনিনকে মনে রাখবে তার অসাধারণ মনোবলের জন্য। সব মিলিয়ে সাতটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা হেনিন ২০১০ সালে অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন টেনিসে, কিন্তু তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যামে খেলার পরই আবার র‍্যাকেট তুলে রাখেন। 

     

     

    ৩। মার্গারেট কোর্টঃ

     

    পুরো টেনিস ইতিহাসেরই সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের অত্যন্ত ছোট্ট তালিকাতেও মার্গারেট কোর্ট আসবেন- কাজেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেরা খেলোয়াড়ের তালিকাতেও তিনি থাকবেন, সে আর বিচিত্র কী? একমাত্র নারী টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে ওপেন এবং ওপেন-পূর্ব যুগে রোলাঁ-গারোঁর শিরোপা জেতা মার্গারেট কোর্টের ট্রফি ক্যাবিনেটে মোট ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা; নারী-পুরুষ মিলিয়েই যেটা সর্বোচ্চ। এই চব্বিশটির মধ্যে ৫টি ফ্রেঞ্চ ওপেনে; দুটো ওপেন-পূর্ব যুগের, তিনটি ওপেন যুগের। মাটির কোর্টে বেজলাইন খেলোয়াড়দের সাফল্যের তত্ত্বকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সার্ভ-অ্যান্ড-ভলিতেই পাঁচ-পাঁচটি ফ্রেঞ্চ ওপেন বগলদাবা করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান টেনিস-সম্রাজ্ঞী।

     

     

    ২। স্টেফি গ্রাফঃ

     

    ওপেন যুগের সবচেয়ে পরিপূর্ণ নারী টেনিস খেলোয়াড়ের নাম নিতে বলা হলে প্রায় সব টেনিস বিশেষজ্ঞই সম্ভবত স্টেফি গ্রাফের নামটি মাথায় রাখবেন। সতেরো বছরের ক্যারিয়ারে বাইশটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা; স্টেফি গ্রাফের টেনিস-শৌর্য বোঝানোর জন্য এই এক পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। আধুনিক টেনিসে কেউ থাকেন গ্রাস কোর্ট বিশেষজ্ঞ, কেউবা ক্লে কোর্ট বিশেষজ্ঞ, কেউ আবার হার্ড কোর্ট বিশেষজ্ঞ। স্টেফি কোন বিশেষজ্ঞই ছিলেন না- সব রকম কোর্টে কম করে ছয়টা করে শিরোপা জেতা খেলোয়াড়কে কোন রকম বিশেষজ্ঞ তকমা দেয়ার চেষ্টা করাটাই বরং তার জন্য অপমান।

     

    প্রথম ফ্রেঞ্চ ওপেনের শিরোপার জন্য তাঁকে অবশ্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল পাঁচ বছর; তারপরের বারো বছরে ক্যাবিনেটে জমা করেছেন আরো পাঁচটি ফ্রেঞ্চ ওপেন শিরোপা। ক্যারিয়ারের একেবারে সায়াহ্নে এসে জিতেছিলেন যার শেষটি।

     

     

    ১। ক্রিস এভার্টঃ

     

    একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম কয়বার জেতা যায়? তিনবার? চারবার? পাঁচবার? এভার্ট ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতেছিলেন সাত-সাতবার। তার আঠারো গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপাই ছিল ফ্রেঞ্চ ওপেন- ১৯৭৪ সালে। কাকতালীয়ভাবে, এভার্টের জেতা শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামও ছিল ফ্রেঞ্চ ওপেন, ১৯৮৬ সালে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত মাটির কোর্টে এভার্টের অবিশ্বাস্য ১৯৭ জয়ের বিপরীতে পরাজয় ছিল মাত্র একটি, আর ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে থাকাকালীন (১৯৭৬-৭৮) তিনটি ফ্রেঞ্চ ওপেনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই নামেননি ওয়ার্ল্ড টিম টেনিসে অংশগ্রহণের জন্য। যদি নামতেন, তাহলে সংখ্যাটা নিশ্চিতভাবেই সাত ছাড়িয়ে আরও কিছুদূর যেত। 

     

    মাটির কোর্টের অবিসংবাদিত রাণী বলেই কিনা, তিনি যে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন ছিলেন, সেটা মাঝে মাঝেই ঢাকা পড়ে যায়। তিনবার উইম্বলডন আর রেকর্ড ছয়বার ইউএস ওপেন জেতা ক্রিস এভার্টকেই তাই ধরা হয় ফ্রেঞ্চ ওপেনের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নারী খেলোয়াড়।