অন্তিম মুহুর্তের গোলে এস্পানিওলের কাছে হারল রিয়াল
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে প্রতি আক্রমণে বল পেলেন সার্জিও গার্সিয়া। ডানপ্রান্ত থেকে ডিবক্সে গার্সিয়ার করা ক্রস হাফভলিতে কেইলর নাভাসকে পরাস্ত করলেন স্ট্রাইকার জেরার্ড মরেনো। এস্পানিওলের মাঠ কর্নেয়া এল প্রাট জুড়ে তখন এস্পানিওল সমর্থকদের বুনো উল্লাস। ডাগআউটে থমথমে চেহারায় দাঁড়ান জিনেদিন জিদানের অভিব্যক্তি তখন যেন রিয়াল মাদ্রিদের প্রতিচ্ছবি। শূন্যদৃষ্টিতে গার্সিয়া-মরেনোদের উদযাপন দেখলেন সার্জিও রামোসরা। এস্পানিওলের কাছে ১-০ গোলে হেরে লা লিগায় আরও পিছিয়ে পড়ল রিয়াল। এই মৌসুমে একমাত্র দল হিসেবে বার্সেলোনা এবং রিয়ালকে হারাল এস্পানিওল। আর এস্পানিওলের কাছে রিয়াল হারল ২০০৭ সালের পর, তাও আবার আক্ষরিক অর্থেই ম্যাচের শেষ আক্রমণ!
লা লিগার শিরোপাদৌড় এবং কোপা ডেল রে থেকে অনেক আগেই ছিটকে পড়ায় চ্যাম্পিয়নস লিগের দিকেই মনোযোগটা বেশি দিচ্ছে রিয়াল। অন্তত লা লিগার ম্যাচগুলোয় জিদানের মূল একাদশ সাজান তা-ই প্রমাণ করে। ইনজুরির কারণে ছিলেন না টনি ক্রুস, লুকা মদ্রিচ এবং মার্সেলো। বিশ্রামের কারণে ছিলেন না ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবং কাসেমিরো। সপ্তাহখানেক বাদে পিএসজির সাথে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলর দ্বিতীয় লেগের কথা চিন্তা করেই দল সাজিয়েছিলেন জিদান। দানি কারভাহাল, করিম বেনজেমাদের বসিয়ে তরুণ মার্কোস ইয়োরেন্তে এবং মাতেও কোভাচিচেই ভরসা রেখেছিলেন জিদান। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে গ্যারেথ বেলকে খেলিয়েছিলেন স্ট্রাইকার হিসেবে। জিদানের এই ‘জুয়া’ অবশ্য ফলপ্রসূ হয়নি একেবারেই। গোটা ম্যাচে বেলকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি তেমন একটা।
অবশ্য শুধু বেল না, এস্পানিওলের বিপক্ষে নিজেদের ছায়া হয়ে ছিলেন রিয়ালের প্রায় সবাই-ই। গত সপ্তাহেও দারুণ ফর্মে থাকা লুকাস ভাজকেজ এবং মার্কো আসেন্সিও শত চেষ্টা করেও ভেদ করতে এস্পানিওল রক্ষণদুর্গ। রিয়ালকে গোল করতে না দেওয়ার সবচেয়ে বড় কৃতিত্বটা গোলরক্ষক ডিয়েগো লোপেজের। ম্যাচের ৬ মিনিটেই গোলের প্রায় গজ তিনেক থেকে দারুণভাবে রুখে দিয়েছেন বেলের হেড। প্রথমার্ধে রিয়ালের গোলের সুযোগ বলতে গেলে ঐ একটাই। উলটো ম্যাচের ২৭ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত এস্পানিওলই। তবে রিয়ালের ডিবক্সে কেইলর নাভাসকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন স্ট্রাইকার মরেনো। পরে ৩০ মিনিটে আবার সুযোগ পেয়ে অবশ্য জালে বল জড়িয়েছিলেন মরেনো, কিন্তু রেফারির অফসাইড সিদ্ধান্তে বাতিল হয় সেই গোল। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেছে, অনসাইডেই ছিলেন এই স্প্যানিশ স্ট্রাইকার। ম্যাচশেষে অবশ্য এই নিয়ে খুব বেশি আফসোস থাকার কথা নয় মরেনোর!
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল এস্পানিওল। ৫১ মিনিটে গার্সিয়ার কর্নার থেকে ডিফেন্ডার অস্কার দুয়ার্তের হেড ক্রসবারে প্রতিহত হলে সে যাত্রায় বেঁচে যায় রিয়াল। বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকলেও বেলের ঐ হেড বাদে পুরো ম্যাচে সেরকম উল্লেখযোগ্য সুযোগই তৈরি করতে পারেই রিয়াল। গোলের সামনে ইস্কো, বেলদের ব্যর্থতায় পরে করিম বেনজেমাকেও মাঠে নামিয়েছিলেন জিদান। কিন্তু তিনিও করতে পারেননি কাজের কাজটি। উলটো অতিরিক্ত সময়ে দলের হয়ে স্মরণীয় এক গোল ম্যাচটা নিজের করে নেন মরেনো।
আজকের হারে ২৬ ম্যাচে ৫১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিন-এই থাকল রিয়াল। তবে আগামীকাল অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে ভ্যালেন্সিয়া জয় পেলে চার নম্বরে নেমে যাবে ‘লস ব্লাঙ্কোস’রা। ওদিকে ৫৮ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে আছে রিয়ালের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। আর ৬২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই আছে বার্সেলোনা।