• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    প্যারিসে রিয়ালের রাত, রোনালদোর রাত

    প্যারিসে রিয়ালের রাত, রোনালদোর রাত    

    লাল ধোঁয়ায় প্রাক ডি প্রিন্সেসের এক প্রান্ত ছেয়ে গেছে, এর মধ্যেই চলছে খেলা। ঘরের দলের জন্য সমর্থন, প্রতিপক্ষের জন্য ঠিক ততোটাই বিরুপ সেই পরিবেশ। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর খেলার ভাগ্য ঝুলে ছিল তখন পর্যন্তও। এর মধ্যেই  বাঁ দিক থেকে আসা এক ক্রসে কয়েক ফুট উঁচুতে লাফ দিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।  হেডে বল জালে জড়িয়েই দৌড়ে গেলেন কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে, হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন সেখানেই। এমন উদযাপন তো তাঁকেই মানায়! রোনালদোর ওই গোল অনেকটাই নির্ধারন করে দিয়েছিল খেলার ফল। এরপর অবশ্য প্যারিস সেন্ট জার্মেইও শোধ দিয়েছিল এক গোল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ঘরের দল পেরে ওঠেনি রিয়াল মাদ্রিদের সাথে। দ্বিতীয় লেগে ২-১ গোলে আর দুই লেগ মিলিয়ে ৫-২ ব্যবধানে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে আরও একবার বিদায় নিল পিএসজি। আর কোয়ার্টার ফাইনালের জায়গা পাকা করল রিয়াল মাদ্রিদ।


        

    খেলার শুরুটা আক্রমণাত্মকই করেছিল পিএসজি-রিয়াল। রিয়ালের মাঝমাঠে টনি ক্রস, লুকা মদ্রিচরা না থাকলেও তেমন একটা ভুগতে হয়নি রিয়ালকে। দুই দলের  হাইপ্রেসিং গেমের পরও প্রথমার্ধটা গোলশূন্য থাকার সবচেয়ে বড় কারণ পিএসজি গোলরক্ষক আলফোনসো আরিওলা। ১৮ মিনিটে কর্নার থেকে গোলটা প্রায় করেই ফেলেছিলেন সার্জিও রামোস। আরিওলার দারুণ এক সেভের পর ফিরতি বল ক্লিয়ার করে পিএসজিকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখেন মার্কো ভেরাত্তি। এরপর ৩৮ মিনিটে আরও একবার করিম বেনজেমাকে গোলবঞ্চিত করেন আরিওলা।  রিয়াল মাদ্রিদ বেশ কয়েকবার পিএসজি গোলরক্ষকের পরীক্ষা নিলেও অন্যদিকে কেইলর নাভাস মোটামুটি শঙ্কামুক্ত সময়ই পার করেছেন প্রথমার্ধে। রিয়ালের রক্ষণ ভেঙে নাভাসের পরীক্ষাটা তেমন একটা নিতেই পারেননি এডিনসন কাভানি, কিলিয়ান এমবাপ্পেরা।  ৪৩ মিনিটে অবশ্য ১৯ বছর বয়সী ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ডই ভাগ্য বদলে দিতে পারতেন নিজের দলের। দানি আলভেজের দেওয়া থ্রু পাসটা নিজেই শট না করে কাভানিকে উদ্দেশ্যে বাড়ালে গল্পটা অন্যরকমও হতে পারত পিএসজির জন্য। নেইমারের পরিবর্তে নামা অ্যানহেল ডি মারিয়া একের পর এক ক্রস করে গেলেও, কাজের কাজটা করতে পারেননি। প্রথম আধঘন্টায় এমবাপ্পের সাথে দুবার প্রান্ত বদল করেও সুবিধা করতে পারেননি। শেষদিকে বদলি হয়ে মাঠ ছাড়ার আগ পর্যন্ত সাদামাটাই ছিলেন আর্জেন্টাইন উইঙ্গার।  

    বিরতির পর খেলা শুরুর দুই মিনিটের মধ্যেই অবশ্য পিএসজি সমর্থকদের জন্য একবার খেলা থামাতে হয়েছিল রেফারিকে। পরে থিয়াগো সিলভার অনুরোধে সমর্থকেরা থামলেও, রোনালদোকে থামাতে পারেননি পিএসজি অধিনায়ক। ৫২ মিনিটে গোল করে ম্যাচটা পিএসজির কাছ থেকে আরও দূরে নিয়ে যান রোনালদো।
    চ্যাম্পিয়নস লিগের আগের ৭ ম্যাচের প্রত্যেকটিতেই গোল করেছিলেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। আজ ৮ নম্বর ম্যাচে এসেও সেই সংখ্যাটা আরও বাড়িয়েই নিলেন রোনালদো (১২)। 

    ওই গোলের পর ৬৬ মিনিটে মার্কো ভেরাত্তি দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে কাজটা আরও সহজ হয়ে যায় রিয়ালের জন্য। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১৪০ গোল করা পিএসজি ১১ জনের দল নিয়ে রিয়ালের বিপক্ষে জালের ঠিকানা খুঁজে না পেলেও, এর কিছুক্ষণ পরই এক গোল শোধ দেয়। ৭১ মিনিটে কাভানির ওই গোলের আগেই অবশ্য ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে পারত পিএসজি। এর দুই মিনিট আগেই মার্কো আসেনসিওর শট ঠেকিয়ে দিয়ে দলকে তখনও আশা দেখিয়ে যাচ্ছিলেন আরিওলা। 

    ১-১ গোলে সমতায় থাকা ম্যাচে পরে বেনজেমাও মিস করেছেন সহজ সুযোগ। ওয়ান অন ওয়ানে আরিওলার পরীক্ষাটাই নিতে পারেননি বেনজেমা। অবশ্য এর কিছুক্ষণ পরই তাঁকে আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দিয়ে সেই আফসোসটা ভুলিয়ে দিয়েছেন কাসেমিরো। পুরো ম্যাচে রিয়ালের রক্ষণটা রেখেছিলেন পাহারায়, মদ্রিচ-ক্রুসদের অনুপস্থিতিও তেমন একটা বুঝতে দেননি তিনি। শেষদিকে গোল করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার।

    এই নিয়ে টানা ৮ বার চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টারে গেল রিয়াল। আর সমর্থকদের আতশবাজির ধোঁয়ার মতো আরও একবার বাতাসেই মিলিয়ে গেল উনাই এমেরির দলের চ্যাম্পিয়নস লিগ স্বপ্নও।