• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    মেসির কাছেই হেরে গেল চেলসি

    মেসির কাছেই হেরে গেল চেলসি    

    ম্যাচ শুরুর আগে ন্যু ক্যাম্পের এক কোণায় বিশাল এক ব্যানার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বার্সেলোনা সমর্থকেরা। তাতে লেখা ‘গড সেভ দা কিং’, সাথে লিওনেল মেসির ছবি। ওই ব্যানারই যেন শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠল বার্সা-চেলসি দ্বিতীয় লেগের প্রতিচ্ছবি। প্রথম লেগেও গোল করে চেলসির হাসি কেড়ে নিয়েছিলেন মেসি। আজ করলেন দু’টি, সাথে আরেকটি করালেন উসমান ডেম্বেলেকে দিয়ে। আর রেকর্ড গড়ার রাতে প্রায় একাই বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে দিলেন চেলসির। আজ  ৩-০ আর দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ ব্যবধানে জিতে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেল বার্সেলোনা।

    ম্যাচের স্কোরলাইন অবশ্য চেলসির লড়াইয়ের কথা বলছে না। ন্যু ক্যাম্পে শুরুতেই গোল করে বার্সাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন মেসি। ৩ মিনিটে চেলসি গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ার পায়ের ফাঁক দিয়ে করা গোলটা মেসির ক্যারিয়ারেরই দ্রুততম। দুঃস্বপ্নের মতো এক শুরুর পরই অবশ্য ম্যাচে ফেরে চেলসি। উইলিয়ান, এডেন হ্যাজার্ডদের সামলাতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছিল বার্সার রক্ষণকে। ১১ মিনিটে ডিবক্সের ঠিক বাইরে থেকে প্রথম চেষ্টাটা করেছিলেন উইলিয়ান, তবে  মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানকে টলাতে পারেননি। চেলসির জন্য সব যখন ঠিকঠাক চলছিল, তখনই মাঝমাঠে  ভুল করে বসেন ফ্রান্সেস ফ্যাব্রেগাস। বল হারান মেসির কাছে, সেখান থেকেই দুইজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডিবক্সের ভেতর থেকে উসমান ডেম্বেলেকে খুঁজে পান তিনি। গুরুত্বপুর্ণ ম্যাচে শুরুর একাদশে সুযোগ পেয়েই ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখেন ডেম্বেলে, বার্সার জার্সিতে প্রথম গোল করে।   



    প্রথমার্ধে বার্সা আর চেলসির মধ্যে পার্থক্য ছিল একটাই। সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল পেয়েছিল বার্সা, আর চেলসি ঠিক উলটোটা। দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও আক্রমণাত্মক ফুটবলটাই খেলছিল আন্তোনিও কন্তের দল। হাইপ্রেসিং গেমে বার্সাকেও নিজেদের স্বাভাবসুলভ পজেশন ফুটবল খেলতেও বাধা দিচ্ছিল চেলসি। প্রথম লেগের মতো আজও উইলিয়ানই হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বার্সার রক্ষণের দুশ্চিন্তার কারণ। তবে আক্রমণে নামা অলিভিয়ের জিরু সে তুলনায় ছিলেন নিষ্প্রভ।  ৩৮ মিনিটে উইলিয়ানের ক্রস থেকেই গোল করতে পারতেন মার্কোস আলোন্সো। কিন্তু তিনিও হার মেনেছিলেন টের স্টেগানের কাছে। পরের মিনিট কান্তেও ভালো জায়গা থেকে বল পেয়েও গোলেই শট করতে পারেননি। ভাগ্যও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল চেলসি আর গোলের মাঝে। প্রথমার্ধের শেষদিকে ডিবক্সের ঠিক বাইরে থেকে আলোন্সোর নেওয়া ফ্রি কিক বারপোস্টে বাধা পেয়ে ফেরত না আসলে গল্পটা অন্যরকম হতে পারত।

    নিজেদের ওপর চাপ কমাতে তিন নম্বর গোলটা জরুরীই হয়ে পড়েছিল এর্নেস্তো ভালভার্দের দলের জন্য। বিরতির ঠিক পরপরই আকাঙ্ক্ষিত সেই গোলটা চেলসির রক্ষণই প্রায় উপহার দিয়ে দিচ্ছিল বার্সাকে। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি লুইস সুয়ারেজ, থিবো কোর্তোয়ার কাছে হার মেনেছিলেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধে খেলায় ফিরে আসতে সময় নেয়নি চেলসিও। ৫০ মিনিটে উইলিয়ানের থ্রু বলে ডিবক্সের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলেন আলোন্সো। গোলে শট নেওয়ার আগেই অবশ্য পড়ে গিয়েছিলেন, পেনাল্টির আবেদনও করেছিলেন।  কিন্তু এবারও ভাগ্য সহায় হলো না চেলসির, অন্য যে কোনোদিন হয়ত এমন পরিস্থিতিতে পেনাল্টির বাঁশিই বাজাতেন রেফারি। ভিডিও রিপ্লেতে দেখে অবশ্য রেফারির সিদ্ধান্তটা সঠিক বলেই মনে হয়েছে।


     
    দ্বিতীয়ার্ধে চেলসির রক্ষণ সামলে নিজেদের অর্ধ থেকে বের হওয়াটাই কঠিন হয়ে উঠেছিল বার্সার জন্য। ভালভার্দেকে সিদ্ধান্ত বদলাতেই হত, বেশি দেরিও করলেন না তিনি। ৫৬ মিনিটেই আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে বসিয়ে পলিনিয়োকে নামিয়ে ৪-৪-২ থেকে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে ফিরে গিয়েছিলেন ভালভার্দে। তাতে কিছুটা কাজও হয়েছিল, কিন্তু কিছুক্ষণপরই সার্জিও বুস্কেটস ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়লে আবারও বদলি করতে বাধ্য হন বার্সা কোচ। বুস্কেটসের জায়গায় মাঠে নামেন আন্দ্রে গোমেজ। জেরার্ড পিকে, স্যামুয়েল উমতিতিদের দক্ষতায় তখনও চেলসিকে ভালোভাবেই আটকে রাখছিল বার্সা। রক্ষণের ওপর ক্রমেই বাড়তে থাকা চাপটা মেসির দ্বিতীয় গোলের পরই কমে যায়। প্রথম গোলটা করেছিলেন ডান পা দিয়ে, এবার বাঁ পায়ে। ৬৩ মিনিটে প্রতি আক্রমণে সুয়ারেজের কাছ থেকে পেয়েছিলেন বল, এরপর চেলসি ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে কোণাকুনি শটে দলকে তিন গোলের লিড এনে দেন মেসি। সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগে শততম গোলের মাইলফলকটাও ছুঁয়ে ফেলেন। বার্সার জন্য  গোলটি ছিল স্বস্তির, আর চেলসির জন্য স্বপ্নভঙ্গের। এরপরই অবশ্য আলভারো মোরাতাকে মাঠে নামার সুযোগ দিয়েছিলেন কন্তে, কিন্তু ততোক্ষণে দেরি হয়ে গেছে অনেক।

    তিন গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর স্বরূপে ফিরে আসতে শুরু করে বার্সা। ৮৪ মিনিটে ব্যবধানটা আরও বাড়িয়ে নিতে পারতেন পলিনিয়ো, কিন্তু কর্নার থেকে জায়গা মতো হেড করতে পারেননি তিনি। আর সান্ত্বনার গোলটা শেষ পর্যন্ত আর পাওয়াই হয়নি চেলসির। প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধের শেষদিকেও আরও একবার বারপোস্টেই বাধা পেয়ে ফিরে আসে আন্টোনিও রুডিগারের হেড।