আর্জেন্টিনার জালে স্পেনের গোল উৎসব
প্রীতি ম্যাচের মোড়কে শুরু থেকেই ম্যাচটা হয়ে উঠেছিল প্রতিযোগিতামূলক। কিন্তু স্পেনের সাথে সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ওয়ান্ডা মেট্রিপলিটানোতে আর্জেন্টিনাকে রীতিমত অপদস্থ করে ছেড়েছে লা ফুরিয়া রোহারা। আর্জেন্টিনাকে ৬-১ গোলে হারিয়েছে তারা। প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসানোর রাতে স্পেনের হয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন ইস্কো।
স্পেনের বিপক্ষে খেলবেন না লিওনেল মেসি, সেটা অবশ্য আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। অ্যানহেল ডি মারিয়া, সার্জিও আগুয়েরোরাও ছিলেন না। আনকোরা এক দল দিয়েই স্পেনের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। নিয়মিত একাদশের নিকোলাস অটামেন্ডি, হাভিয়ের মাসচেরানো, লুকাস বিলিয়াদের সঙ্গে আক্রমণভাগে শুরু করেছিলেন গঞ্জালো হিগুয়াইন। শুরুতে সেই হিগুয়ানই পেয়েছিলেন আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেওয়ার দারুণ এক সুযোগ। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা ম্যাক্সিমিলিয়ানো মেজার ডান দিক থেকে করা ক্রসে ফাঁকায় থেকেও গোল করতে পারেননি হিগুয়াইন। ৮ মিনিটের হিগুয়াইনের ওই মিসের কিছুক্ষণ পরই গোল খেয়ে বসে আর্জেন্টিনা।
১২ মিনিটে মার্কো আসেনসিওর পাস থেকে আর্জেন্টিনার জালে গোল উৎসবের শুরু করেন ডিয়েগো কস্তা। আগের ম্যাচে জার্মানির বিপক্ষে দুইজনই ছিলেন বেঞ্চে, আজ নেমেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন তারা। স্পেনের দ্বিতীয় গোলেও আসেনসিওর অবদানই বেশি। তার পাস থেকেই ম্যাচে নিজের প্রথম গোলটা করেন রিয়াল মাদ্রিদ সতীর্থ ইস্কো। এর আগেই অবশ্য ম্যাচটা আর্জেন্টিনার জন্য আরও কঠিন হয়ে গিয়েছিল, কস্তার প্রথম গোলের সময় আঘাত পেয়েছিলেন গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো। ২২ মিনিটেই পরে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে, তার জায়গায় নামেন উইলি ক্যাবেয়ারো।
শুরু থেকেই দুই দলের আক্রমণাত্মক খেলাতেই গোলের আভাস পাওয়া গিয়েছিল। স্পেনের দুই গোলের মাঝের সময়ে মেজাও প্রায় গোলটা করেই ফেলেছিলেন নিজের অভিষেক ম্যাচে। কিন্তু জিওভান্নি লো সেলসোর পাস থেকে ওয়ান অন ওয়ানে শটটা গোলে রাখতে পারেননি মেজা। এর মিনিট খানেক ব্যবধানে অন্য প্রান্তে জর্দিও আলবাও হাতছাড়া করেন দারুণ সুযোগ।
৩৯ মিনিটে অবশ্য ম্যাচে ফিরেছিল আর্জেন্টিনা। কর্নার থেকে গোল করে ম্যাচে প্রাণ ফিরিয়ে এনেছিলেন নিকোলাস অটামেন্ডি। ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও তখনও ম্যাচে টিকে ছিল আর্জেন্টিনা। ভারসাম্য থাকা ম্যাচটা দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই নিজেদের করে নেয় স্পেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কস্তাকে বসিয়ে ইয়াগো আসপাসকে মাঠে নামিয়েছিলেন স্পেন কোচ। ম্যাচটা একপেশে করে দেওয়াতে আসপাসের অবদানটাই সবচেয়ে বেশি। ৫২ মিনিটে তার পাস থেকেই ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ইস্কো।
৩-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও আক্রমণাত্মকই খেলছিল আর্জেন্টিনা। আর স্পেনের অর্ধে গিয়েই দিশেহারা হয়ে পড়ে বারবার বল হারাচ্ছিল আকাশি-সাদারা। দুই ডিফেন্ডার মার্কোস রোহো আর অটামেন্ডিও রক্ষণে হাইলাইন রেখেই খেলছিলেন। পরে সেটাই বুমেরাং হয়েছে আর্জেন্টিনার জন্য। ৫৫ মিনিটে আর্জেন্টিনার দুর্বল রক্ষণ ভেদ করে সহজেই স্পেনকে ৩ গোলের লিড এনে দেন থিয়াগো আলকান্তারা।
চার গোলে এগিয়ে গিয়েও প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে মায়া দেখায়নি স্পেন। ৭৩ মিনিটে ডেভিড ডি গিয়ার নেওয়া কিক থেকে আর্জেন্টিনার রক্ষণ চিড়ে ভেতরে ঢুকে যান আসপাস, করেন স্পেনের ৫ নম্বর গোল। গোল উদযাপনে ছুটে এসেছিলেন ডি গিয়াও! ঘরের মাঠে ম্যাচ তখন উৎসবে রূপ নিয়েছে, মিনিট খানেক আগে বদলি হয়ে মাঠ ছাড়া জেরার্ড পিকেকেও দুয়োর বদলে হাততালি দিয়েই বিদায় দিয়েছে মাদ্রিদের মানুষ! স্পেন সমর্থকদের উৎসবটা পূর্ণতা পায় ৭৫ মিনিটে, আরও একবার আসপাসের পাস থেকেই গোল করে ইস্কো নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করার পর।
শেষদিকে ম্যাচটা অস্বস্তিতেই পরিণত হয়েছিল আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের জন্য। রেফারিও তাই ঝুঁকি না নিয়ে কয়েক সেকেন্ড বাকি থাকতেই ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজিয়েছেন। নিজেদের ইতিহাসে ৬-১ গোলে হারটাই আর্জেন্টিনার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার। একই ব্যবধানে ১৯৫৮ সালে চেকোস্লোভিকায় ও ২০০৯ সালে বলিভিয়ার কাছেও হেরেছিল আর্জেন্টিনা। আজ আবার তেমনই এক দুঃস্বপ্নের রাত পার করলো হোর্হে সাম্পাওলির দল।