• " />

     

    ফুটবলই যখন কাল ক্রিকেটারদের

    ফুটবলই যখন কাল ক্রিকেটারদের    

    ক্রিকেট থেকে ফুটবলের দূরত্ব কতখানি? অনেকেই বলবেন, বুকের এপাশ থেকে ওপাশের মধ্যে দূরত্ব যতখানি, ঠিক ততখানিই। 

    এখনকার ফুটবলের দেশ আর্জেন্টিনাতেই ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরোনো ক্লাবগুলোর একটি ছিল। তবে ক্রিকেট ছাপিয়ে ফুটবল উজ্জ্বল হওয়ার দায় ওই ইংরেজদেরই। তারা ক্রিকেট নিয়ে গিয়েছিলেন, ফুটবলের ছোঁয়াচে জ্বরটাও তো বহন করেছিলেন তারাই। সেই জ্বরটা শুধু আর্জেন্টিনা না, ছাড়েনি অনেক দেশের অনেক মানুষকেই। এমনকি ছাড়েনি ক্রিকেটারদেরও। 

    এ যুগে অবশ্য কেউ সিবি ফ্রাই বা ডেনিস কম্পটন হতে পারেন না। ফ্রাই সাউদাম্পটনের ফুলব্যাক ছিলেন, আবার ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়কও ছিলেন। কম্পটন খেলেছেন আর্সেনালে, আর ক্রিকেট দিয়ে হয়ে উঠেছিলেন জাতীয় নায়ক। বিশ্বযুদ্ধের পর ক্রিকেটকে মাঠে ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক ভূমিকা ছিল তার। ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম পেশাদার ফুটবলও খেলেছেন। এখন আর ‘অলরাউন্ডার’দের যুগ নেই, তিনটি ফরম্যাটের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই তো হিমশিম খান ক্রিকেটাররা। তবে সামনে ফুটবল পেলে কান টানলে মাথা যাওয়ার মতো করে পা-ও চলে যায়, ফুটবল দেখে লাথি না দেওয়ার ইচ্ছাপোষণ করে থাকতে পারেনই বা কয়জন! 

    ক্রিকেটারদের অনুশীলনে ফুটবল তাই নিয়মিত অনুষঙ্গ। মূলত ওয়ার্ম-আপ বা গা-গরম করতেই ফুটবল চলে আসে ক্রিকেটারদের মাঝে, তবে সেটাকে সিরিয়াসলি নেওয়ার মতো সিরিয়াস ফুটবলারেরও অভাব নেই ক্রিকেটারদের মাঝে। আর সেই ফুটবলের সঙ্গে ক্রিকেটারদের দিকে ধেয়ে আসে চোটও। 


    আরও পড়ুন- স্বপ্নের ডিনারে শুধু মেসিকে ডাকতেন সাকিব


    মুস্তাফিজুর রহমান যেমন। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের আগে অনুশীলনে ফুটবল খেলতে গিয়ে পাওয়া চোট তাকেই ছিটকে দিয়েছিল বেশ কিছুদিনের জন্য। ২০১৫ সালে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলা মুশফিক চোট পেয়েছিলেন ফুটবল খেলতে গিয়েই, কাঁধে। ফুটবল খেলতে গিয়ে চোট পাওয়া ক্রিকেটারদের তালিকায় সর্বশেষ সংস্করণ নাসির হোসেন। লিগামেন্ট ছিঁড়ে সপ্তাহ ছয়েকের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন তিনি, ফুটবল খেলতে যাওয়াটাই কাল হয়েছে তার বলে জানা যাচ্ছে। 

    ক্রিকেটারদের এমন চোটের জন্য ফুটবলের তাদের স্কিলের অভাবকেই দায়ী করছেন বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরি। 

    ‘চোট তো বলে-কয়ে আসে না। খেলতে গেলে হতেই পারে। তবে অনেক সময় ক্রিকেটাররা ক্রিকেট খেলার চেয়ে ফুটবল বা অন্যান্য খেলা খেলতে গিয়ে নিজেকে চোটের মধ্যে ফেলে দেয়। এটার বেশ কিছু কারণ আছে। ওরা ক্রিকেটে স্কিলফুল, কিন্তু ফুটবলে তো স্কিলফুল না। স্কিলের অভাব থাকে।পাশাপাশি সবাই সমমানের ফুটবলার না। কাজেই ঘাটতির জায়গা আছে। নিয়ম কানুনের ব্যাপার আছে। গা গরমে যে ফুটবল খেলা হয়, সেখানে নিয়মকানুন তেমন ভাবে মানা হয় না। এজন্য চোট বেশি পায়। ক্রিকেটারদের দেখা যায় ফুটবল খেলাটাকে গা গরম হিসেবে না নিয়ে আরেকটা খেলা হিসেবে নেয়।’

    ফুটবলটাকে হালকাভাবেই নিতে বলছেন তিনি, ‘এই মানসিকতা খারাপ। মনে রাখতে হবে এই ফুটবল খেলাটা গা গরমের জন্য, গোল করার জন্য নয়। সবাইকে পাস দেওয়া, ছুটোছুটি করা এসবের জন্য খেলা উচিত। কিন্তু অনেক সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে আসে। তখনই এসব ঘটে যায়।’

    ক্রিকেট ছাড়া অন্য খেলা খেলতে বললেও সেগুলো ঠিকঠাক বেছে নিতে বলছেন তিনি, ‘আমরা অবশ্যই চাই মূল খেলা থেকে বের হয়ে ক্রিকেটটাররা অন্য খেলা খেলুক। সেটা টেনিস হতে পারে, গলফ বা ব্যাডমিন্টন হতে পারে। টেবিল টেনিস হতে পারে। শারীরিক সাংঘর্ষিক যেন না হয়। যেটা নিরাপদ ও স্কিল বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু দ্বিতীয় স্পোর্টস হিসেবে ফুটবলের মতো শারীরিক সাংষর্ষিক স্পোর্টস বেছে নিলে চোটের শঙ্কা বাড়ে।’
     

    ফুটবল খেলতে গিয়ে চোটের প্রবণতা অবশ্য শুধু বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেরই নিয়মিত ঘটনা। মার্ক রামপ্রকাশ, ম্যাট প্রায়র, ইশান্ত শর্মা, মারলন স্যামুয়েলস, কাইরন পোলার্ড- ফুটবল খেলতে গিয়ে চোটের শিকার হওয়া ক্রিকেটারদের তালিকাটা বেশ লম্বাই।

    এ তালিকায় আছেন অস্ট্রলিয়ার প্রমীলা ক্রিকেটার এলিস পেরিও। তিনি অবশ্য আরেক কাঠি সরেস, ক্রিকেটের সঙ্গে খেলেছেন ফুটবলের জাতীয় দলেও। প্রায় একই সঙ্গে চালিয়ে গেছেন খেলা, শিকার হয়েছেন চোটেরও। 

    আপাতত অবশ্য ক্রিকেটের দিকেই বেশি সিরিয়াস এই অলরাউন্ডার। তবে ফুটবলকে নিশ্চয়ই হৃদয় থেকে সরাতে পারেননি। পারেননি শুধুই গা-গরমের উপায় হিসেবে নিতেও! 

    যেমন পারেন না অনেক ক্রিকেটারই। ওই যে, ক্রিকেট আর ফুটবলের দূরত্বটা যে শুধু বুকের এপাশ থেকে ওপাশ!